আলহামদু লিল্লাহ।.
এ প্রশ্নোত্তরের দুটো দিক রয়েছে:
প্রথম দিক: এই কর্মের হুকুম:
নিঃসন্দেহে জ্যোতিষীপনা, জাদুবৃত্তি, রাশি গণনা জঘন্যতম গুনাহ, পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা ও অন্যায়ভাবে মুসলমানদেরকে কষ্ট দেয়ার অন্তর্ভু্ক্ত।
তবে আলেমগণ এ ব্যাপারে মতভেদ করেছেন যে, জ্যোতিষী কি কাফের হয়ে যাবে, ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে; নাকি তার কুফরটি ছোট কুফর শ্রেণীয়।
যারা বলেছেন যে, সে কাফের হয়ে যাবে তারা ইমাম আহমাদ কর্তৃক মুসনাদে আহমাদে (৯১৭১) সংকলিত হাদিস দিয়ে দলিল দেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন জ্যোতিষী বা গণকের কাছে এসে সে যা বলে তাতে বিশ্বাস করল সে ব্যক্তি মুহাম্মাদের উপর যা নাযিল হয়েছে সেটাকে অস্বীকার করল।”[আলবানী ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে (৫৯৪২) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
এবং যেহেতু এটি গায়েবের ইলমের দাবী। যে ব্যক্তি গায়েবী ইলম দাবী করে সে কাফের হয়ে যায়। কেননা আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “তিনি গায়েবের আলেম (জ্ঞানওয়ালা) এবং স্বীয় গায়েবের খবর কারো কাছে প্রকাশ করেন না; তাঁর মনোনীত কোন রাসূল ব্যতীত।”[সূরা জ্বিন, ৭২:২৬-২৭] এবং তিনি আরও বলেন: “বলুন, আসমানসমূহ ও জমিনে যারা আছে তারা গায়েব জানে না; তবে আল্লাহ্ ব্যতীত।”[সূরা নামল, আয়াত: ৬৫]
দ্বিতীয় দিক: এই নারীর প্রতি উপদেশ যিনি এই কর্মটিতে লিপ্ত আছেন: তিনি যেন এই কাজটি ছেড়ে দেন, এর থেকে দূরে সরে আসেন, আল্লাহ্র কাছে তাওবা করেন। কারণ এটি জঘন্য কবিরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত। তিনি যেন এই নিকৃষ্ট কর্মের মাধ্যমে মুসলমানদেরকে কষ্ট দেয়া থেকে আল্লাহ্কে ভয় করেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “আর যারা ঈমানদার নরনারীকে কোন অপরাধ ছাড়াই কষ্ট দেয় তারা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে”।[সূরা আহযাব, আয়াত: ৫৮]
এই নারীর কর্তব্য হল: হঠাৎ করে মালাকুল মওত (মৃত্যুর ফেরেশতা) এসে যাওয়া ও অনুতপ্ত হওয়ার সময় ফুরিয়ে যাওয়ার পূর্বে এই কর্ম থেকে আল্লাহ্র দিকে ফিরে আসা। তার উচিত হল এ সকল বিষয় থেকে তার প্রভুর কাছে আশ্রয় চাওয়া; যাঁর হাতে রয়েছে কল্যাণ ও অকল্যাণ এবং শয়তান যেন ধোঁকাতে ফেলে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ না করে; নাউযুবিল্লাহ্ (আমরা আল্লাহ্র আশ্রয় চাই)।
এই নারী তার এ কর্ম দিয়ে দুর্বল ঈমানের অধিকারী মুসলমানদেরকে ফিতনায় নিমজ্জিত করছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “নিশ্চয় যারা মুমিন নর ও নারীদেরকে ফিতনাগ্রস্ত করে, অতঃপর তাওবা করে না তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি ও আগুনের শাস্তি।”[সূরা বুরুজ, আয়াত: ১০]
শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায (রহঃ) বলেন:
“জ্যোতিষীবিদ্যা (রাশিবিদ্যা), হাত দেখা, চায়ের কাপ পড়া, রেখা চেনা এবং এ জাতীয় আরও যা জ্যোতিষী, গণক ও জাদুকরেরা দাবী করে থাকে সবগুলো জাহেলী বিদ্যা; যা শেখা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল হারাম করেছেন এবং জাহেলী যুগের মানুষদের কর্ম; ইসলাম যেগুলোকে বাতিল ঘোষণা করেছে। এগুলো করা থেকে, এগুলো যে করে তার কাছে আসা থেকে, তাকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করা থেকে কিংবা সে যা বলে তা বিশ্বাস করা থেকে ইসলাম সাবধান করেছে। যেহেতু এটি গায়েবী ইলমের অন্তর্ভুক্ত যা কেবল আল্লাহ্র কাছেই রয়েছে।
প্রত্যেক যে ব্যক্তি এগুলোর সাথে সম্পৃক্ত তার প্রতি আমার উপদেশ হল তিনি আল্লাহ্র কাছে তাওবা করুন ও ক্ষমাপ্রার্থনা করুন। এক আল্লাহ্র উপর নির্ভর করুন এবং শরয়ি ও বস্তুগত বৈধ উপায়-উপকরণ গ্রহণ করার সাথে আল্লাহ্র উপর তাওয়াক্কুল করুন। এ বিষয়গুলো পরিহার করুন এবং এগুলো থেকে দূরে থাকুন। এসব চর্চাকারীর কাছে জানতে চাওয়া ও তাদেরকে বিশ্বাস করা থেকে সাবধান থাকুন— আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের নিমিত্তে, নিজের দ্বীনদারি ও আকিদা রক্ষার্থে, আল্লাহ্র ক্রোধ থেকে বাঁচার স্বার্থে, শির্ক ও কুফরের ওসিলাগুলো থেকে দূরত্ব রক্ষার্থে; যেগুলোর উপরে মারা গেলে ব্যক্তি দুনিয়া-আখিরাত সব হারাবে।[সমাপ্ত][মাজমুউ ফাতাওয়াস শাইখ বিন বায (২/১২০-১২২)]
এখানে এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করাও বাঞ্চনীয় যে, এ নারী এই হারাম ও জঘন্য কর্মের মাধ্যমে যা উপার্জন করছেন সেটাও হারাম। দলিল হচ্ছে সহিহ বুখারী (২২৩৭) ও সহিহ মুসলিমে (১৫৬৭) আবু মাসউদ আল-আনসারী (রাঃ) থেকে যা বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুকুরের মূল্য, বেশ্যার উপার্জন এবং জ্যোতিষীর হাদিয়া থেকে নিষেধ করেছেন।
ইমাম নববী (রহঃ) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় (১০/৪৯০) বলেন: আমাদের আলেমদের মধ্যে বাগাভী এবং কাযী ইয়ায বলেছেন: জ্যোতিষীর হাদিয়া হারাম হওয়ার ব্যাপারে মুসলমানেরা ইজমা (ঐক্যমত) পোষণ করেছে। যেহেতু এটি হারাম কর্মের বিনিময় এবং যেহেতু এটি অবৈধভাবে সম্পদ উপার্জন।