আলহামদু লিল্লাহ।.
সুন্নাহ-তে প্রমাণ রয়েছে যে, বান্দাদের আমলসমূহ আল্লাহ্র কাছে পেশ করার জন্য অনতিবিলম্বে উত্তোলন করা হয়। প্রত্যেক দিন দুইবার। রাতে একবার; দিনে একবার। সহিহ মুসলিমে (১৭৯) আবু মুসা আল-আশআরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন: একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঁচটি উক্তি নিয়ে আমাদের সামনে দণ্ডায়মান হলেন। তিনি বললেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্ তাআলা ঘুমান না এবং ঘুমানো তাঁর জন্যে সমীচীন নয়। তিনিই মিযানকে নীচে নামান ও উপরে উঠান। তার কাছে দিনের আমলের আগে রাতের আমল পেশ করা হয় এবং রাতের আমলের আগে দিনের আমল পেশ করা হয়।”
ইমাম নববী বলেন: সংরক্ষক ফেরেশতাগণ রাত শেষ হওয়ার পর দিনের প্রথমাংশে রাতের আমল নিয়ে উপরে উঠে যায়্। এবং দিন শেষ হওয়ার পর রাতের প্রথমাংশে দিনের আমল নিয়ে উপরে উঠে যায়।
ইমাম বুখারী (৫৫৫) ও মুসলিম (৬৩২) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তোমাদের কাছে পালাক্রমে একদল ফেরেশতা রাতে এবং একদল ফেরেশতা দিনে আসতে থাকেন। তারা (উভয় দল) ফজর ও আসরের সালাতে একত্রিত হন। এরপর যারা তোমাদের মাঝে রাত্রি যাপন করেছিল তাঁরা ঊর্ধ্বলোকে চলে যান। এরপর তাঁদের প্রতিপালক তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন: -অথচ তিনি তাঁদের চেয়ে অধিক জ্ঞাত- ‘তোমরা আমার বান্দাদের কি অবস্থায় রেখে এলে?’ তখন তাঁরা বলেন আমরা যখন তাদেরকে রেখে আসি তখনও তারা সালাত আদায় করছিল। আর যখন তাদের কাছে গিয়েছিলাম তখনও তারা সালাত আদায় করছিল।”
ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন: এ হাদিসে দলিল রয়েছে যে, দিনের শেষাংশে আমলগুলো উত্তোলন করা হয়। সে সময় যে ব্যক্তি আল্লাহ্র আনুগত্যে থাকে তার রিযিক ও আমলে বরকত দেয়া হয়। আল্লাহ্ই ভাল জানেন। এই দুই ওয়াক্তের নামায (অর্থাৎ ফজরের নামায ও আসরের নামায) নিয়মিত আদায় করা ও গুরুত্ব দেয়ার গূঢ় রহস্য এর ভিত্তিতেই।[সমাপ্ত]
সুন্নাহ-তে এ দলিলও রয়েছে যে, প্রত্যেক সপ্তাহের আমল দুইবারে আল্লাহ্ তাআলার কাছে পেশ করা হয়।
ইমাম মুসলিম (২৫৬৫) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: মানুষের আমল প্রতি সপ্তাহে দুইবার পেশ করা হয়। সোমবারে ও বৃহস্পতিবারে। তখন প্রত্যেক মুমিন বান্দাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়; শুধু এমন ব্যক্তি ছাড়া যার মাঝে ও তার ভাই এর মাঝে বিদ্বেষ রয়েছে। বলা হয়: এ দুইজনকে রেখে দাও; যতক্ষণ না তারা বিবাদ মীমাংসা করে নেয়।”
সুন্নাহ-তে এ দলিলও রয়েছে যে, এক বছরের আমল এক সাথে শাবান মাসে আল্লাহ্র কাছে উত্তোলন করা হয়:
সুনানে নাসাঈ –তে উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আপনি শাবান মাসে যতবেশি রোযা রাখেন অন্য কোন মাসে আমি আপনাকে এত রোযা রাখতে দেখি না?! তিনি বলেন: এটি রজব ও রমযানের মধ্যবর্তী এমন একটি মাস যে মাস সম্পর্কে লোকেরা গাফেল। এ মাসে আমলগুলো রাব্বুল আলামীন এর কাছে উত্তোলন করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে, আমি রোযা থাকা অবস্থায় আমার আমলগুলো উত্তোলন করা হোক।[আলবানি ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন]
এ দলিলগুলোর সার নির্যাস হলো- বান্দার আমলগুলো আল্লাহ্র কাছে তিনভাবে উপস্থাপন করা হয়:
দৈনিক উপস্থাপন: দিনে দুইবার।
সাপ্তাহিক উপস্থাপন: সপ্তাহে দুইবার: সোমবারে ও বৃহস্পতিবারে।
বাৎসরিক উপস্থাপন: বছরে একবার শাবান মাসে।
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন: গোটা বছরের আমল শাবান মাসে উত্তোলন করা হয়; যেমনটি সংবাদ দিয়েছেন সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত (অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-অনুবাদক)। গোটা সপ্তাহের আমল সোমবার ও বৃহস্পতিবারে পেশ করা হয়। দিনের আমল দিনের শেষে রাতের আগে উত্তোলন করা হয় এবং রাতের আমল রাতের শেষে দিনের আগে উত্তোলন করা হয়। তাই দিবারাত্রির এ উত্তোলন বাৎসরিক উত্তোলনের চেয়ে খাস। যখন আয়ুকাল শেষ হয়ে যায় তখন গোটা জীবনের আমল উত্তোলন করা হয় এবং আমলের খাতা গুটিয়ে রাখা হয়।[হাশিয়াতু সুনানে আবি দাউদ থেকে সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত]
আল্লাহ্র কাছে আমল পেশ করার সময়গুলোতে বেশি বেশি নেক আমল করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করার প্রমাণ রয়েছে এ সংক্রান্ত হাদিসসমূহে। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের রোযার ব্যাপারে বলেন: “আমি পছন্দ করি আমার আমল আমি রোযা থাকা অবস্থায় উত্তোলিত হোক”।
সুনানে তিরমিযিতে (৭৪৭) এসেছে- আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আমলগুলো সোমবারে ও বৃহস্পতিবারে উপস্থাপন করা হয়। আমি পছন্দ করি আমার আমল আমি রোযা থাকা অবস্থায় উপস্থাপন করা হোক”।[আলবানি ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে (৯৪৯) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
কোন কোন তাবেয়ি বৃহস্পতিবারে নিজের স্ত্রীর কাছে কাঁদতেন এবং তার স্ত্রীও তার কাছে কাঁদতেন এই বলে যে: আজ আমার আমল আল্লাহ্র কাছে পেশ করা হচ্ছে।[ইবনে রজব ‘লাতায়িফুল মাআরিফ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন]
আমরা এতক্ষণ পর্যন্ত যা কিছু উল্লেখ করেছি এতে সুস্পষ্ট হয়েছে যে, আমলের খাতা গুটানো কিংবা আল্লাহ্র কাছে আমলগুলো উপস্থাপনের সাথে কোন বছরের সমাপ্তি কিংবা সূচনার কোন সম্পর্ক নেই। বরঞ্চ শরয়ি দলিলগুলো আমল উপস্থাপনের অন্য কিছু সময় সুনির্দিষ্ট করেছে। এবং দলিলগুলো এটাও প্রমাণ করছে যে, এ সময়গুলোতে বেশি বেশি নেকির কাজ করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ।
শাইখ সালেহ আল-ফাউযান বছরের সমাপ্তিলগ্নে বছর শেষ হয়ে যাওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া প্রসঙ্গে বলেন: এর কোন ভিত্তি নেই। বছরের শেষাংশে নির্দিষ্ট কোন ইবাদত পালন যেমন- রোযা রাখা গর্হিত বিদাত।
সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রোযা রাখার প্রসঙ্গে:
এ রোযা যদি কারো অভ্যাসগত হয় কিংবা এ দিবসদ্বয়ে রোযা রাখার ব্যাপারে যে উৎসাহ এসেছে সে কারণে হয় তাহলে বছরের শেষ দিন কিংবা শুরুর দিনে পড়লেও এমন রোযা রাখতে কোন বাধা নেই। তবে, শর্ত হচ্ছে- এই উপলক্ষকে কেন্দ্র করে যেন রোযাটা না রাখে কিংবা এই উপলক্ষে রোযা রাখার বিশেষ মর্যাদা আছে এমন ধারণায় রোযা না রাখে।
আল্লাহ্ই ভাল জানেন।