সোমবার 22 জুমাদাল ছানী 1446 - 23 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

ক্বদরের রাত জাগরণ করা ও উদযাপন করা

প্রশ্ন

ক্বদরের রাত জাগরণের ধরণ কেমন হবে? নামাযের মাধ্যমে নাকি কুরআন তেলাওয়াত, সিরাতে নববী, ওয়াজ-মাহফিল এবং এ উপলক্ষ্যে মসজিদে অনুষ্ঠান করার মাধ্যমে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমযানের শেষ দশকে নামায, কুরআন তেলাওয়াত ও দোয়াতে মশগুল থেকে এত বেশি পরিশ্রম করতেন অন্য সময় যা করতেন না। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে: “যখন (রমযানের) শেষ দশক শুরু হত, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাত জাগতেন, নিজ পরিবারকে জাগিয়ে দিতেন এবং (এর জন্য) তিনি কোমর বেঁধে নিতেন।” মুসনাদে আহমাদ ও সহিহ মুসলিমে আরও এসেছে যে, “তিনি শেষ দশকে এত বেশি পরিশ্রম করতেন যা অন্য কোন সময় করতেন না।”

দুই:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্বদরের রাতে ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশা নিয়ে কিয়ামুল লাইল আদায় করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশা নিয়ে ক্বদরের রাতে কিয়ামুল লাইল পালন করবে তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।”[একদল হাদিস গ্রন্থাকার হাদিসটি বর্ণনা করেছেন; ইবনে মাজাহ ছাড়া। এ হাদিসটি নামাযের মাধ্যমে ক্বদরের রাত জাগরণ করার বিষয়টি প্রমাণ করছে।]

তিন:

ক্বদরের রাতে যে দোয়াটি পড়া উত্তম সেটি হচ্ছে ঐ দোয়া যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা (রাঃ)কে শিক্ষা দিয়েছিলেন। ইমাম তিরমিযি আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আপনার কি অভিমত, যদি আমি জানতে পারি যে, কোন রাতটি লাইলাতুল ক্বদর তখন আমি কি বলব? তিনি বললেন: তুমি বলবে: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি (অর্থ- হে আল্লাহ্‌! নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করাটা আপনি পছন্দ করেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।”[তিরমিযি হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত বলেছেন]

চার:

রমযান মাসের কোন একটি রাতকে ক্বদরের রাত হিসেবে নির্দিষ্ট করতে হলে- অপর সব রাতকে বাদ দিয়ে- নির্দিষ্টকারক দলিল প্রয়োজন। কিন্তু শেষ দশদিনের বেজোড় রাতগুলো অন্য রাতগুলোর চেয়ে বেশি সম্ভাবনাময়। এবং বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে সাতাশতম রাত লাইলাতুল ক্বদ্‌র হওয়ার বেশি সম্ভাবনাময়। এ সংক্রান্ত হাদিসগুলোর কারণে।

পাঁচ:

বিদাত করা কখনই জায়েয নয়; না রমযানে, আর না রমযানের বাহিরে অন্য কোন সময়। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি আমাদের শরিয়তে নতুন কিছু প্রবর্তন করল যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়; তা প্রত্যাখ্যাত।” অপর এক বর্ণনায় এসেছে, “যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করল যা আমাদের শরিয়তে নেই; তা প্রত্যাখ্যাত।”।

রমযানের কিছু কিছু রাতে যে অনুষ্ঠানাদি করা হয়ে থাকে এসব কাজের কোন (দালিলিক) ভিত্তি আমাদের জানা নেই। সর্বোত্তম আদর্শ হচ্ছে– মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে (দ্বীনের মধ্যে) নতুন প্রবর্তিত বিষয়সমূহ।

আল্লাহই তাওফিক্বদাতা।

সূত্র: স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১০/৪১৩)