আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
ঈদের দিন গোসল করা মুস্তাহাব।
বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের দিন গোসল করেছেন।
অনুরূপভাবে ঈদের দিন গোসল করা কিছু কিছু সাহাবী থেকেও বর্ণিত আছে; যেমন আলী বিন আবু তালেব (রাঃ), সালামা বিন আকওয়া (রাঃ) ও ইবনে উমর (রাঃ) থেকে।
ইমাম নববী ‘আল-মাজমু’ গ্রন্থে বলেন:
সকল বর্ণনার সনদ দুর্বল ও বাতিল; কেবল ইবনে উমর (রাঃ) থেকে উদ্ধৃত বর্ণনাটি ছাড়া..। এক্ষেত্রে (অর্থাৎ মুস্তাহাব সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে) যে দলিলের উপর নির্ভর করা হয়েছে সেটি হল ইবনে উমর (রাঃ) থেকে উদ্ধৃত বর্ণনা এবং জুমার গোসলের উপর কিয়াস।”[সমাপ্ত]
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন:
“এ ব্যাপারে দুটো দুর্বল হাদিস রয়েছে..। কিন্তু সুন্নাহ অনুসরণে তীব্র আগ্রহী ইবনে উমর (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি ঈদের দিন নামাযে যাওয়ার আগে গোসল করতেন।”[সমাপ্ত]
দুই:
ঈদের জন্য গোসল করার সময়সীমা:
উত্তম হচ্ছে ফজরের নামাযের পর গোসল করা। যদি কেউ ফজরের আগে গোসল করে নেয় তাহলে সেটাও যথেষ্ট হবে— সময়ের সংকীর্ণতা ও কষ্টকর হওয়ার কারণে; যেহেতু একদিকে ফজরের পর গোসল করা; আবার অন্যদিকে মানুষের ঈদের নামাযের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যাওয়া প্রয়োজন; কেননা ঈদগাহ দূরে হতে পারে।
মুয়াত্তা মালেকের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘আল-মুনতাকা’-তে বলেছেন:
“ঈদের গোসল ঈদগাহে গমনের ঠিক একটু আগে হওয়া মুস্তাহাব। ইবনে হাবীব বলেন: ঈদের গোসলের সবচেয়ে উত্তম সময় হচ্ছে– ফজরের নামাযের পর। ইমাম মালেক ‘আল-মুখতাসার’ গ্রন্থে বলেন: যদি দুই ঈদের জন্য ফজরের আগে গোসল করে তাহলে বিষয়টি প্রশস্ত।”[সমাপ্ত]
তবে খলিল রচিত ‘মুখতাসার’ গ্রন্থে (২/১০২) এসেছে: “রাতের শেষ ষষ্ঠাংশ থেকে এর সময় শুরু হয়।”
ইবনে কুদামা ‘আল-মুগনী’ গ্রন্থে বলেন:
“খিরাক্বীর বক্তব্যের প্রত্যক্ষ মর্ম হচ্ছে গোসলের (ঈদের গোসলের) সময় ফজর উদিত হওয়ার পর হতে। কাযী ও আমেদি বলেন: যদি ফজরের আগে গোসল করে ফেলে তাহলে গোসলের সুন্নত আদায় হল না। কেননা এটি দিনের বেলার নামাযের গোসল। তাই জুমাবারের গোসলের মত ফজরের আগে হওয়া জায়েয নয়। ইবনে আকীল বলেন: ইমাম আহমাদ থেকে সরাসরি উদ্ধৃতি আছে যে, ঈদের গোসলের সময় ফজরের আগে ও ফজরের পরে। কেননা ঈদের নামাযের ওয়াক্ত জুমার নামাযের ওয়াক্তের চেয়ে সংকীর্ণ। তাই যদি ফজর হওয়ার অপেক্ষা করতে হয় হতে পারে এতে করে গোসল করা ছুটে যাবে। এবং যেহেতু এ গোসলের উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিচ্ছন্নতা। রাতে গোসল করলেও এ উদ্দেশ্য হাছিল হয়; যেহেতু রাত নামাযের নিকটবর্তী। তবে উত্তম হচ্ছে– ফজরের পরে করা; যাতে করে মতভেদের ঊর্ধ্বে থাকা যায়। এবং নামাযের অতি নিটকবর্তী সময়ে হওয়ায় অতিশয় পরিচ্ছন্নতা অর্জিত হয়।”[সমাপ্ত]
ইমাম নববী ‘আল-মাজমু’ গ্রন্থ বলেন:
এ গোসল শুদ্ধ হওয়ার সময়ের ব্যাপারে দুটো মশহুর অভিমত রয়েছে। ১. ফজরের পর; এ মর্মে ‘আল-উম্ম’ গ্রন্থে স্পষ্ট ঊদ্ধৃতি রয়েছে। ২. তবে অধিক বিশুদ্ধ অভিমত হল: যা মাযহাবের সকল আলেমের মতৈক্যপূর্ণ: ফজরের আগে ও পরে জায়েয।
কাযী আবুত তাইয়্যেব তার ‘আল-মুজার্রাদ’ গ্রন্থে বলেন: বুআইত্বির বর্ণনাতে ফজরের আগে ঈদের গোসল করা সঠিক হওয়ার পক্ষে শাফেয়ির পরিস্কার উদ্ধৃতি আছে।
ইমাম নববী বলেন: “যদি আমরা বিশুদ্ধ অভিমতটি অবলম্বন করে বলি যে, সেটা ফজরের আগে করা সহিহ। তবে এ সময়টিকে সুনির্দিষ্ট করার ব্যাপারে তিনটি অভিমত রয়েছে: ১. অধিক বিশুদ্ধ ও মশহুর অভিমত হল: অর্ধরাতের পর সঠিক; এর আগে নয়। ২. গোটা রাতেই সঠিক হবে। গাজালী এ অভিমতটির উপর দৃঢ়তা ব্যক্ত করেছেন এবং ইবনুস সাব্বাগ এটাকে মনোনীত করেছেন। ৩. ফজরের একটু আগে সেহেরীর সময় সঠিক হবে। বাগাভী এ অভিমতটির পক্ষে দৃঢ়তা ব্যক্ত করেছেন।[সংক্ষেপে সমাপ্ত]
পূর্বোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে ফজরের পূর্বে গোসল করতে কোন অসুবিধা নেই; যাতে করে একজন মুসলিম ঈদের নামাযের উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়ে যেতে সক্ষম হয়।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।