আলহামদু লিল্লাহ।.
আল্লাহ তায়ালা পুরুষদের জন্য বহুবিবাহ বৈধ করেছেন। তিনি তাঁর মহান কিতাবে বলেছেন: “তোমরা যদি এতিম মেয়েদের (বিয়ে করার) ক্ষেত্রে সুবিচার করতে না পারার আশঙ্কা করো, তাহলে (সাধারণ) নারীদের মাঝে তোমাদের পছন্দ হয় এমন দুইজন, তিনজন কিংবা চারজনকে পর্যন্ত বিয়ে করতে পারো। কিন্তু যদি (একাধিক স্ত্রীর সাথে) সুবিচার করতে না পারার আশঙ্কা করো, তাহলে মাত্র একজনকে অথবা নিজেদের অধিকারভুক্ত দাসীদের (রাখতে পারবে)। এটা তোমাদের অবিচার না করার নিকটতর।”[সূরা নিসা: ৩]
বহুবিবাহের বৈধতার পক্ষে এটি দ্ব্যর্থহীন দলীল। ইসলামী শরীয়তে একজন পুরুষ এক, দুই, তিন বা চার বিয়ে করতে পারে। চারের বেশি বিয়ে করা তার জন্য বৈধ না। মুফাস্সিরগণ ও ফকীহগণ এই কথা বলেছেন। এই ব্যাপারে মুসলিমদের ইজমা সংঘটিত হয়েছে; এতে কোনো মতভেদ নেই।
তবে জানতে হবে যে বহুবিবাহের কিছু শর্ত আছে:
১- ইনসাফ করা।
কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেন: “কিন্তু যদি (একাধিক স্ত্রীর সাথে) সুবিচার করতে না পারার আশঙ্কা করো, তাহলে মাত্র একজনকে।”[সূরা নিসা: ৩] উক্ত আয়াত থেকে বোঝা যায় বহুবিবাহের জন্য ইনসাফ করা শর্ত। ব্যক্তি যদি আশঙ্কা করে যে একাধিক স্ত্রী বিয়ে করলে স্ত্রীদের মাঝে ইনসাফ বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে তার জন্য একের অধিক বিবাহ করা নিষিদ্ধ। এখানে ইনসাফ দ্বারা উদ্দেশ্য হল ভরণ-পোষণ, জামা-কাপড়, রাত্রিযাপনসহ স্বামীর সামর্থ্য ও সাধ্যের মাঝে থাকা বস্তুগত সকল কিছু।
কিন্তু ভালোবাসার ক্ষেত্রে ইনসাফের দায়িত্ব নেই। তার কাছ থেকে এটা চাওয়াও হবে না। কারণ এটা করা তার পক্ষে সম্ভব না। আর এটাই আল্লাহর বাণীর মর্মার্থ: “তোমরা চাইলেও নারীদের (তোমাদের স্ত্রীদের) প্রতি যথাযথ ন্যায়বিচার করতে পারবে না।”[সূরা নিসা: ১২৯] অর্থাৎ অন্তরের ভালোবাসার ক্ষেত্রে।
২- স্ত্রীদের ভরণ-পোষণ দেয়ার ক্ষমতা থাকা:
এর পক্ষে দলীল হল আল্লাহর বাণী: “যারা বিয়ে করার সামর্থ্য (মোহরানা ও খরচাদি) রাখে না তারা যেন চরিত্র পবিত্র রাখে, যতক্ষণ না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেন।”[আন-নূর: ৩৩] আল্লাহ তায়ালা এই আয়াতে বিবাহ করার শারীরিক ক্ষমতা আছে; কিন্তু সামর্থ্য নেই, বিয়ে করা যার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে, এমন ব্যক্তিকে চরিত্র পবিত্র রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বিবাহ করা অসম্ভব হওয়ার অন্যতম কারণ হল: বিবাহের জন্য মোহরানা না পাওয়া এবং স্ত্রীর ভরণ-পোষণের সামর্থ্য না থাকা।”[আল-মুফাস্সাল ফি-আহকামিল মারআ: (৬/২৮৬)]।
একদল আলেম মনে করেন এক স্ত্রীতে সীমিত থাকার চাইতে বহুবিবাহ উত্তম। শাইখ ইবনে বায রাহিমাহুল্লাহুকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: ‘বিবাহের ক্ষেত্রে মূল অবস্থা কি বহুবিবাহ; নাকি এক স্ত্রীকে বিবাহ করা?’ তিনি উত্তর দেন: “বহুবিবাহ করতে সক্ষম এবং যুলুম করার আশঙ্কা করে না এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে একাধিক বিয়ে করা শরয়ি বিধান; যেহেতু এতে প্রভূত কল্যাণ নিহিত; যেমন- এর মাধ্যমে ব্যক্তির নিজের লজ্জাস্থানের পবিত্রতা, যাদেরকে সে বিবাহ করে তাদের চারিত্রিক পবিত্রতা ও তাদের প্রতি অনুগ্রহ সাধিত হয়, বংশধর বৃদ্ধি পায় যার ফলে উম্মাহর সদস্য সংখ্যাও বাড়ে এবং এক আল্লাহর ইবাদতকারীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। এ অভিমতের সপক্ষে প্রমাণ হল আল্লাহর বাণী: “তোমরা যদি এতিম মেয়েদের (বিয়ে করার) ক্ষেত্রে সুবিচার করতে না পারার আশঙ্কা করো, তাহলে (সাধারণ) নারীদের মাঝে তোমাদের পছন্দ হয় এমন দুইজন, তিনজন কিংবা চারজনকে পর্যন্ত বিয়ে করতে পারো। কিন্তু যদি (একাধিক স্ত্রীর সাথে) সুবিচার করতে না পারার আশঙ্কা করো, তাহলে মাত্র একজনকে (বিয়ে করতে পারবে) অথবা নিজেদের অধিকারভুক্ত দাসীদের (রাখতে পারবে)। এটা তোমাদের অবিচার না করার নিকটতর।”[সূরা নিসা: ৩]
এবং যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক বিয়ে করেছিলেন। আর আল্লাহ সুবহানাহু বলেন: “তোমাদের জন্য রাসূলের মাঝে উত্তম আদর্শ রয়েছে।”[সূরা আহযাব: ২১]
তাছাড়া জনৈক সাহাবী যখন বলল: ‘আমি কখনো গোশত খাব না।’ আরেকজন বলল: ‘আমি সবসময় নামায পড়ব; ঘুমাব না।’ অন্যজন বলল: ‘আমি কখনো নারীদের বিবাহ করব না।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যখন এই খবর পৌঁছল তখন তিনি মানুষদের সামনে খুতবা দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করে বললেন: “তোমরা নাকি এমন-এমন বলেছ। আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের মধ্যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করি ও আল্লাহ্র প্রতি তোমাদের চেয়ে বেশি মুত্তাকী। কিন্তু আমি রোযা রাখি ও রোযা ছাড়ি, নামায পড়ি ও ঘুমাই এবং নারীদেরকে বিবাহ করি। অতএব, যে ব্যক্তি আমার সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সে আমার আদর্শধারী নয়।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ বাণী একজন স্ত্রী ও একাধিক নারী সবার ক্ষেত্রে সার্বিক।”[মাজাল্লাতুল বালাগ, (সংখ্যা: ১০১৫) ফাতাওয়া উলামাইল বালাদিল হারাম: (পৃ. ৩৮৬)]