আলহামদু লিল্লাহ।.
যদি অর্থ নেসাব পরিমাণে পৌঁছে এবং এর বছর পূর্ণ হয়; তাহলে এর উপর যাকাত ওয়াজিব হবে; সেটি সঞ্চয়ের জন্য রাখা হোক বা না হোক।
নেসাব হলো যা প্রায় ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ অথবা ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্যের সমমূল্য।
সম্পদের ২.৫% যাকাত প্রদান করা ওয়াজিব।
দেখুন: (2795) নং প্রশ্নের উত্তর ।
বছরের মাঝখানে যদি নেসাব পরিমাণের চেয়ে সম্পদ হ্রাস পায় তাহলে বছরের হিসাব বাদ হয়ে যাবে এবং এ সম্পদের উপর যাকাত আবশ্যক হবে না। সম্পদ পুনরায় নেসাব পরিমাণে পৌঁছলে আবার নতুন করে বছর হিসাব করা শুরু হবে।
আর যদি সম্পদ একটু একটু করে বৃদ্ধি পেতে থাকে, সেক্ষেত্রে ব্যাখ্যা রয়েছে:
প্রথমত: যদি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত (নতুন) সম্পদ মূল সম্পদ থেকে সৃষ্ট হয়, যেমন: ইসলামী ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থের লাভ, তাহলে মূলধনের এক বছর পূরণ হলে পুরোটার যাকাত দিতে হবে, যদিও লাভ পাওয়ার পর মাত্র কয়েকদিন গত হয়েছে। এ কারণে ফকীহরা বলেন: মূলধনের বর্ষপূর্তিই তা থেকে প্রাপ্ত লাভের বর্ষপূর্তি।
দ্বিতীয়ত: যদি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত অর্থ মূল সম্পদ থেকে সৃষ্ট না হয় বরং পৃথক অর্থ হয়, যেমন: মানুষ তার বেতন থেকে কিছু সঞ্চয় করা। তাহলে মূল অবস্থা হলো প্রত্যেক সম্পদের জন্য আলাদা বছর হিসাব করবে। এই নতুন সম্পদ নেসাব পরিমাণ হওয়া শর্ত নয়; কারণ মূল সম্পদের মাধ্যমে নেসাব অর্জিত হয়েছে।
সুতরাং আপনি রমযান মাসে যা সঞ্চয় করেছেন, তার যাকাত আগামী রমযানে দিবেন। আর শাওয়াল মাসে যা সঞ্চয় করেছেন, তা পরের বছরের শাওয়াল মাসে দিবেন। এভাবে দিতে থাকবেন।
নিঃসন্দেহে কারো পক্ষে প্রত্যেক মাসে পৃথকভাবে প্রতিটি সঞ্চয়ের হিসাব করা কঠিন। যেমনিভাবে প্রত্যেক সঞ্চিত অর্থের বর্ষপূর্তির সাথে যাকাত প্রদান করাও দুঃসাধ্য ব্যাপার। সহজ হলো বছর জুড়ে যত সঞ্চয় হয়েছে সব সঞ্চয়ের যাকাত প্রথম যে সম্পদ নেসাবে পৌঁছেছে সে সম্পদের বর্ষপূর্তির সাথে আদায় করা।
সেক্ষেত্রে আপনি হয়তো এমন সম্পদেরও যাকাত দিয়ে ফেলবেন যার বর্ষপূর্তি হয়নি। এতে কোনো সমস্যা নেই। বরং এটি বর্ষপূর্তির আগে অগ্রিম যাকাত প্রদান করার শ্রেণীভুক্ত।
ইতোপূর্বে 26113 নং প্রশ্নের উত্তরে এ সংক্রান্ত আলোচনা করা হয়েছে। আমরা সেখানে ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়া উদ্ধৃত করেছি। গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এখানেও পুনরায় সেটি তুলে ধরছি:
“যে ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ নগদ অর্থের মালিক হয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে নানান সময়ে আরো কিছু অর্থের মালিক হয়েছে। তবে সেগুলো প্রথম অর্থ থেকে উদ্ভুত বা সৃষ্ট নয়; বরং স্বতন্ত্র, যেমন: চাকুরিজীবীর মাসিক বেতন, উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ, দান হিসেবে প্রাপ্ত সম্পদ অথবা স্থাবর সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত ভাড়া:
“যদি সে নিজের অধিকার পরিপূর্ণরূপে উপভোগ করতে সচেষ্ট হয় এবং যাকাতগ্রহীতাদেরকে তার সম্পদ থেকে যতটুকু দেয়া ওয়াজিব ততটুকুর বেশি না দিতে সচেষ্ট হয়; তাহলে তার কর্তব্য নিজের উপার্জনের একটি ছক তৈরী করা । ঐ ছকে যে কোন এমাউন্ট তার মালিকানায় আসার দিন থেকে বর্ষ গণনা শুরু করবে এবং প্রত্যেক এমাউন্টের যাকাত আলাদা আলাদাভাবে আদায় করবে, যে এমাউন্টের যে দিন বর্ষপূর্তি হবে সে এমাউন্টের যাকাত সেই দিন পরিশোধ করবে।
আর যদি ব্যক্তি সহজতা চায় ও উদারতার পথ বেছে নেয়, নিজের অধিকারের উপর দরিদ্র ও অন্যান্য যাকাতগ্রহীতাদের যাকাত প্রাপ্তির দিকটিকে প্রাধান্য দেয়, তাহলে তার মালিকানায় থাকা সম্পদের সর্বপ্রথম নেসাব পূর্ণ হওয়ার এক বছর পূরণ হলে সে তার কাছে থাকা সমস্ত সম্পদের যাকাত প্রদান করবে। এই কাজে তার নেকী বেশি হবে এবং মর্যাদা বুলন্দ হবে। এটি তার জন্য প্রশান্তিদায়ক এবং দরিদ্র-নিঃস্বসহ যাকাতের অন্যান্য খাতের ব্যক্তিদের অধিকার রক্ষায় অধিক সহায়ক। তার যে সম্পদের বর্ষপূর্তি হয়েছে সে সম্পদের সাথে অতিরিক্তি যে সম্পদের বর্ষপূর্তি হয়নি সে সম্পদেরও যাকাত দিয়ে দেয়া এটি ‘অগ্রিম প্রদত্ত যাকাত’ বলে গণ্য হবে।”[সমাপ্ত][ফাতাওয়াল-লাজনাহ আদ-দাইমাহ: (৯/২৮০)]
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।