রবিবার 21 জুমাদাল ছানী 1446 - 22 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে দোয়া করা

প্রশ্ন

আযানের আগে, ইকামতের আগে, আযানের পরে এবং ইকামতের পরে যে যে দোয়া আমরা পড়ব সেগুলো জানতে চাই।

উত্তরের সংক্ষিপ্তসার

১. আযান ও ইকামতের আগে কোনো নির্দিষ্ট দোয়া নেই। ২. আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে দোয়া করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, দোয়া করা মুস্তাহাব। ৩. ইকামতের পরে দোয়া করার পক্ষে কোনো দলীল আমাদের জানা নেই। ৪. আযান চলাকালীন সময়ে মুস্তাহাব হল মুয়াজ্জিন যা যা বলে তা বলা। ৫. ইকামত চলাকালীন সময়ে দোয়ার বিষয়টা; কোন কোন আলেম ব্যাপকার্থে ইকামতকে আযান গণ্য করেছেন। তাই ইকামতের পুনরাবৃত্তি করাকে মুস্তাহাব বলেছেন। অন্য আলেমরা এটাকে মুস্তাহাব বলেননি। যেহেতু ইকামতের সাথে সাথে (মুখে) আবৃত্তি করার ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসটি দুর্বল।

আলহামদু লিল্লাহ।.

আযানের আগে ও ইকামতের আগে দোয়া করা:

আযানের আগে দোয়া করার প্রসঙ্গে বলব: আমাদের জানামতে আযানের আগে কোনো দোয়া নেই। ঐ সময়টার জন্য কোনো নির্দিষ্ট বা অনির্দিষ্ট কথাকে নির্দিষ্ট করে নিলে সেটা নিকৃষ্ট বিদাত হবে। কিন্তু যদি কাকতালীয়ভাবে পড়া হয় তাহলে কোনো সমস্যা নেই।

আর ইকামতের আগে মুয়াজ্জিন যখন ইকামত দিতে উদ্যত হবেন সে সময়ের জন্যেও আমাদের জানামতে কোনো নির্দিষ্ট দোয়া নেই। কোনো দলীল না থাকার পরও এমন কাজ করা নিকৃষ্ট বিদাত।

আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে দোয়া করা:

আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে দোয়া করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, দোয়া করা মুস্তাহাব।

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে দোয়া প্রত্যাখ্যাত হয় না। তাই তোমরা দোয়া করো।” [হাদীসটি বর্ণনা করেছেন তিরমিযী (২১২), আবু দাউদ (৪৩৭), আহমদ (১২১৭৪)] হাদীসটির ভাষ্য আহমদের। শাইখ আলবানী তার ‘সহীহ আবু দাউদে’ (৪৮৯) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]

আযানের অব্যবহিত পর দোয়া করার নির্দিষ্ট কিছু শব্দরূপ রয়েছে:

তন্মধ্যে অন্যতম হল: জাবের ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি আযান শোনার পর বলবে:

اللهم رب هذه الدعوة التامة والصلاة القائمة آت محمدا الوسيلة والفضيلة وابعثه مقاما محمودا الذي وعدته

‘হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বান ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের মালিক। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওয়াসীলা (সর্বোচ্চ মর্যাদা) ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করুন। আর তাকে যে মাকামে মাহমুদের প্রতিশ্রুতি আপনি দিয়েছেন, সেখানে অধিষ্ঠিত করুন

তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যাবে।” [বুখারী (৫৮৯)]

ইকামতের পর দোয়া করা

ইকামতের পরে দোয়ার পক্ষে আমরা কোনো দলীল জানি না। বিশুদ্ধ দলীল ছাড়া কোনো দোয়া নির্দিষ্ট করে নিলে সেটা বিদাত হবে।

আযানের সময় দোয়া করা:

আযানের সময় দোয়া করা প্রসঙ্গে বলব, আপনার জন্য তখন সুন্নত হল মুয়াজ্জিন যা যা বলে তা বলা। তবে তিনি যখন “হাইয়্যা আলাস সালাহ” (নামাযের দিকে আস) ও “হাইয়্যা আলাল ফালাহ” (কল্যাণের দিকে আস) বলবেন তখন আপনি বলবেন: “লা হাউলা ওয়ালা-কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” (কোন সামর্থ্য নেই, শক্তি নেই আল্লাহ্‌ ছাড়া)।

উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “মুয়াজ্জিন যখন “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার” বলে তখন তোমাদের কোনো ব্যক্তি তার জবাবে বলবে: “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার”। যখন মুয়াজ্জিন “আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলে তখন এর জবাবে সে বলবে: “আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। যখন মুয়াজ্জিন “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ” বলে, তখন সে বলবে: “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ”। এরপর মুয়াজ্জিন যখন বলে: “হাইয়্যা আলাস সালাহ” তখন সে বলবে: “লা হাউলা ওয়ালা-কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”। এরপর মুয়াজ্জিন যখন বলে: “হাইয়্যা আলাল ফালাহ” তখন সে বলবে: “লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”। এরপর মুয়াজ্জিন যখন বলে: “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার”, সেও বলবে: “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার”। মুয়াজ্জিন যখন বলে: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”, সেও বলবে: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। আযানের এই জবাব অন্তর থেকে বললে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [মুসলিম (৩৮৫)]

ইকামতের সময় দোয়া করা:

ইকামতের সময় দোয়া করার প্রসঙ্গ: কোন কোন আলেম ব্যাপকার্থে ইকামতকে আযান গণ্য করেছেন। তাই ইকামতের পুনরাবৃত্তি করাকে মুস্তাহাব বলেছেন। অন্য আলেমরা এটাকে মুস্তাহাব বলেননি। যেহেতু ইকামতের সাথে সাথে (মুখে) আবৃত্তি করার ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসটি দুর্বল। হাদীসটির তাখরীজ শীঘ্রই আলোচনা করা হবে। এই আলেমদের মধ্যে রয়েছেন শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহীম তার ‘ফাতাওয়া’ (২/১৩৬) এবং শাইখ ইবনে উছাইমীন তার ‘আশ-শারহুল মুমতি’ (২/৮৪) বইয়ে।

পক্ষান্তরে মুয়াজ্জিন যখন ‘কাদ কামাতিস সালাত’ বলেন, তখন ‘আকামাহাল্লাহ ওয়া-আদামাহা’ বলা ভুল। কারণ এ মর্মে বর্ণিত হাদীসটি দুর্বল।

আবু উমামাহ (রাঃ) থেকে কিংবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্য কোনো সাহাবী থেকে বর্ণিত আছে: “বিলাল ইকামত দিচ্ছিলেন। যখন তিনি ‘কাদ কামাতিস সালাত’ বললেন তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “আকামাহাল্লাহু ওয়া-আদামাহা”। আর ইকামতের বাকি বাক্যগুলো উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসের মত করেই বললেন।”[হাদীসটি আবু দাউদ (৫২৮) বর্ণনা করেছেন। হাফেয ইবন হাজার হাদীসটিকে তার ‘আত-তালখীসুল হাবীর’ বইয়ে (১/২১১) দুর্বল বলেছেন]

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব