রবিবার 21 জুমাদাল ছানী 1446 - 22 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

এই আয়াতটি অর্থোডন্টিক অপারেশন করতে বারণ করে না

প্রশ্ন

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: আমি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে সৃষ্টি করেছি। তা সত্ত্বেও আমরা আমাদের এ যামানায় এমন কিছু মানুষ পাই যারা দন্ত ডাক্তারের শরণাপন্ন হন আঁকাবাঁকা দাঁতকে সোজকরণের অপারেশন করানোর জন্য। এর হুকুম কী?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

আল্লাহ্‌ তাআলার বাণী: আমি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে সৃষ্টি করেছি।[সূরা ত্বীন, আয়াত: ৪] এর উদ্দেশ্য হলো: তিনি মানুষকে সুন্দরতম আকৃতিতে ও কাঠামোতে সৃষ্টি করেছেন; খাড়াভাবে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে সুষম ও সুন্দরভাবে; যেমনটি বলেছেন ইবনে কাছির (রহঃ) তাঁর তাফসিরে (৪/৬৮০)]

আল-কুরতুবী (রহঃ) বলেন:

সুন্দরতম গঠনে”: গঠনের সমতা ও যৌবনের পূর্ণতা। অধিকাংশ তাফসিরবিদ এমনটি বলেছেন। এটি সুন্দরতম গঠন। কেননা তিনি সবকিছুকে সৃষ্টি করেছেন এর চেহারা নিম্নমুখী করে। আর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন খাড়াভাবে। মানুষের রয়েছে জিহ্বা এবং হাত ও আঙ্গুল; যা দিয়ে সে ধরতে পারে। আবু বকর ইবনে তাহির বলেন: বুদ্ধি দিয়ে সুশোভিত, আদেশ পালনে সক্ষম, ভালোমন্দের বিবেচনাশক্তি দ্বারা পরিচালিত, সোজা হয়ে দাঁড়ানো এবং হাত দিয়ে নিজের খাবার তুলে নিতে পারে।[তাফসিরে কুরতুবী (২০/১০৫) থেকে সমাপ্ত]

এই আয়াতটি কোন মানুষকে তার দাঁতের চিকিৎসা করাতে কিংবা বাঁকা দাঁত সোজা করতে বাধা দেয় না; যেমনিভাবে তার অন্য সব রোগের চিকিৎসা করতেও বাধা দেয় না। গুরুত্বপূর্ণ হলো সে যেন নিছক সৌন্দর্য ও শোভাবর্ধনের জন্য এটি না করে। কারণ সৌন্দর্য বর্ধক অপারেশনগুলোর ক্ষেত্রে নীতি হলো: এ অপারেশনগুলোর যেটি কোন বিকৃতি বা দোষ দূর করার জন্য; তাতে কোন আপত্তি নেই। আর যেটি নিছক সৌন্দর্য ও শোভার জন্য সেটি নিষিদ্ধ।[দেখুন: মাজমুউ ফাতাওয়াশ শাইখ ইবনে উছাইমীন; খণ্ড-১৭, প্রশ্ন নং-৪]

তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল দাঁত সোজাকরণ সম্পর্কে?

জবাবে তিনি বলেন: “দাঁত সোজাকরণ দুই প্রকার:

এক: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কেবল সৌন্দর্যবর্ধন। এটি হারাম ও নাজায়েয। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৌন্দর্যের জন্য দাঁত সরুকারিনী নারী তথা আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তনকারিনী নারীদেরকে লানত করেছেন। অথচ সাজগোজ করা নারীদের থেকে কাম্য। নারীরা সাজগোজের মধ্যেই বেড়ে ওঠে। সুতরাং এর থেকে পুরুষদেরকে নিষেধ করা আরও অধিক যুক্তিযুক্ত।

দুই: যদি কোন ত্রুটির কারণে দাঁতগুলোকে সোজা করা হয় তাহলে এতে কোন আপত্তি নেই। কেননা হতে পারে কিছু মানুষের সামনের দাঁতগুলো কিংবা অন্য কোন দাঁত এমন বিশ্রীভাবে বের হয়ে থাকে যা দৃষ্টিকটু লাগে। এক্ষেত্রে এ দাঁত সোজা করতে কোন আপত্তি নেই। কেননা এটি ত্রুটি দূরীকরণ; সৌন্দর্য বর্ধন নয়। এর সপক্ষে প্রমাণ রয়েছে সেই হাদিসে যাতে রয়েছে: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে একটি রুপার নাক গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন; যার নাকটি কাটা পড়েছিল। পরবর্তীতে এতে দুর্গন্ধ হওয়ায় তিনি তাকে একটি স্বর্ণের নাক গ্রহণ করার নির্দেশ দেন”। কেননা এটি হচ্ছে একটি ত্রুটি দূরীকরণ; সৌন্দর্য বর্ধন নয়।”[মাজমুউ ফাতাওয়াশ শাইখ ইবনে উছাইমীন; খণ্ড-১৭, প্রশ্ন নং-৬]

সারকথা হলো এই আয়াতটি দাঁতের চিকিৎসা করানো কিংবা দাঁতের আঁকাবাঁকা দূর করার জন্য কিংবা উদ্ভুত কোন ত্রুটি দূর করার জন্য দাঁত বাঁধানো হারাম হওয়ার পক্ষে প্রমাণ বহন করে না।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব