আলহামদু লিল্লাহ।.
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আরাফার দিনের চেয়ে উত্তম এমন কোন দিন নেই যেই দিন আল্লাহ সবচেয়ে বেশি বান্দাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেন; নিশ্চয় তিনি নিকটবর্তী হন; অতঃপর আরাফাবাসীকে নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গৌরব করে বলেন: এরা কি চায়?”[সহিহ মুসলিম (১৩৪৮)]
আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “সর্বোত্তম দোয়া হচ্ছে- আরাফার দিনের দোয়া। আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ সর্বোত্তম যে দোয়াটি পাঠ করেছি সেটা হচ্ছে- لا إله إلا الله وحده لا شريك له ، له الملك ، وله الحمد ، وهو على كل شيء قدير (অর্থ- এক আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই; তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁর জন্য, প্রশংসা তাঁর জন্য, তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান)।[সুনানে তিরমিযি (৩৫৮৫), আলবানী ‘সহিহুত তারগীব’ গ্রন্থে (১৫৩৬) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
মুরসাল সনদে তালহা বিন উবাইদ বিন কুরাইয থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “সর্বোত্তম দোয়া হচ্ছে- আরাফা দিনের দোয়া”।[মুয়াত্তা মালেক (৫০০), আলবানী তাঁর ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
আরাফার দিনে দোয়া করার ফযিলত কি শুধু আরাফাবাসীর জন্য খাস; নাকি অন্যসব স্থানের মানুষকেও অন্তর্ভুক্ত করবে— এ ব্যাপারে আলেমদের মতভেদ আছে। অগ্রগণ্য মতানুযায়ী, এ ফযিলত আম বা সাধারণ এবং ফযিলতটি হচ্ছে কালকেন্দ্রিক। তবে, নিঃসন্দেহে যে ব্যক্তি আরাফার ময়দানে হাজির রয়েছেন তিনি স্থানের ফযিলত ও কালের ফযিলত উভয়টি পাচ্ছেন।
আল-বাযি (রহঃ) বলেন:
তাঁর কথা: “সর্বোত্তম দোয়া হচ্ছে- আরাফার দিনের দোয়া”। অর্থাৎ সবচেয়ে বরকতময়, অধিক সওয়াব ও কবুল হওয়ার অধিক উপযুক্ত যিকির। এর দ্বারা শুধু হজ্জপালনকারী উদ্দেশ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে; কেননা আরাফার দিনে দোয়া করা হজ্জপালনকারীর ব্যাপারে শুদ্ধ হয় এবং বিশেষভাবে হাজীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। সাধারণভাবে এই দিনকে আরাফার দিন বলা হলেও সেটা হাজীদের আমলের কারণেই। আল্লাহই ভাল জানেন।[সমাপ্ত, আল-মুনতাকা শারহুল মুয়াত্তা (১/৩৫৮)]
কোন কোন সলফে সালেহীন থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তাঁরা ‘تعريف’ (তা’রীফ) করাকে জায়েয মনে করতেন। تعريف (তা’রীফ) হচ্ছে- আরাফার দিনে দোয়া ও যিকির করার জন্য মসজিদে একত্রিত হওয়া। যারা এটি করতেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- ইবনে আব্বাস (রাঃ)। ইমাম আহমাদ তা’রীফ করাকে জায়েয বলেছেন। যদিও তিনি নিজে করতেন না।
ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন:
কাযী বলেন: “আরাফার দিন সন্ধ্যায় শহরবন্দরে (অর্থাৎ আরাফা ছাড়া অন্যত্র) تعريف (তা’রীফ) পালন করতে কোন বাধা নেই। আল-আসরাম বলেন: আমি আবু আব্দুল্লাহকে অর্থাৎ ইমাম আহমাদকে আরাফার দিন বিভিন্ন শহরের মসজিদে একত্রিত হয়ে تعريف (তা’রীফ) পালন করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি। তিনি বলেন: “আমি আশা করছি এতে কোন অসুবিধা নেই; একাধিক সলফে সালেহীন এটি করতেন।” আল-আসরাম হাসান থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: সর্বপ্রথম বসরা শরে যিনি تعريف পালন করেছেন: ইবনে আব্বাস (রাঃ)। ইমাম আহমাদ বলেন: “সর্বপ্রথম যিনি এটি করেছেন তিনি হচ্ছেন- ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও আমর বিন হুরাইছ (রাঃ)”।
তিনি আরও বলেন: হাসান, বকর, সাবেত ও মুহাম্মদ বিন ওয়াসে’ তাঁরা আরাফার দিন মসজিদে হাজির হতেন। ইমাম আহমাদ বলেন: এতে কোন অসুবিধা নেই। এটা তো দোয়া ও যিকির ছাড়া আর কিছু নয়। তাঁকে বলা হল: আপনি কি এটা করেন? তিনি বলেন: না; আমি করি না। ইয়াইয়া বিন মায়ী’ন থেকে বর্ণিত আছে যে, আরাফার দিন সন্ধ্যায় সবার সাথে তিনিও হাজির থাকতেন।[সমাপ্ত]
[আল-মুগনী (২১২৯)]
এ আলোচনা প্রমাণ করে যে, তারা মনে করতেন যে, আরাফার দিনের ফযিলত শুধু হাজীদের জন্য খাস নয়। যদিও আরাফার দিন দোয়া ও যিকির পালন করার জন্য মসজিদে একত্রিত হওয়ার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোন কিছু বর্ণিত হয়নি। এ কারণে ইমাম আহমাদ এটি করতেন না। তবে, তিনি এ ব্যাপারে রুখসত বা ছাড় দিতেন; নিষেধ করতেন না। যেহেতু ইবনে আব্বাস, আমর বিন হুরাইছ প্রমুখ সাহাবী এটি করতেন।
আল্লাহই ভাল জানেন।