আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
যদি যিলহজ্জ মাসে প্রবেশ করা সাব্যস্ত হয় তাহলে যিনি কোরবানি করতে ইচ্ছুক তার জন্যে তার শরীরের কোন চুল কাটা, নখ কাটা কিংবা চামড়া কাটা হারাম। কিন্তু, নতুন জামা-কাপড় পরিধান করা, মেহেদি দেয়া, সুগন্ধি ব্যবহার করা, স্ত্রী উপভোগ করা কিংবা সহবাস করা নিষিদ্ধ নয়।
এ বিধান শুধুমাত্র কোরবানিকারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; তার পরিবারের অন্য সদস্যদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যাকে কোরবানির পশু জবাই করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য নয়। এ কারণে কোরবানিকারীর স্ত্রী-পুত্র কিংবা প্রতিনিধির উপর এসব কিছু হারাম হবে না।
এ হুকুমের ক্ষেত্রে নর-নারীর মাঝে কোন ভেদ নেই। তাই কোন নারী তিনি বিবাহিত হন কিংবা অবিবাহিত হন তিনি যদি কোরবানি করতে চান তাহলে তিনি তার শরীরের চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকবেন; যেহেতু এগুলো থেকে নিষেধকারী হাদিসের দলিল সাধারণ।
এ বিরত থাকাকে ইহরাম বলা হয় না। কারণ হজ্জ ও উমরা ব্রত ছাড়া কোন ইহরাম নেই। ইহরামকারী ইহরামের পোশাক পরেন। সুগন্ধি ব্যবহার, স্ত্রী সহবাস ও শিকার করা থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু কোরবানিকারীর জন্য যিলহজ্জ মাস প্রবেশ করার পরও এগুলো করা জায়েয। কোরবানিকারী শুধু চুল কাটা, নখ কাটা ও চামড়া কাটা থেকে বিরত থাকেন।
উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমাদের কেউ যখন যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখে এবং সে ব্যক্তি যদি কোরবানি করতে ইচ্ছুক হয় তাহলে সে যেন চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে”।[সহিহ মুসলিম (১৯৭৭)] অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, “সে যেন তার চুল ও চামড়ার কোন কিছু (কর্তন বা উপড়ে ফেলার মাধ্যমে) স্পর্শ না করে”।
স্থায়ী কমিটির আলেমগণ বলেন:
“যে ব্যক্তি কোরবানি করতে ইচ্ছুক তার ক্ষেত্রে বিধান হচ্ছে- সে যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে নিজের চুল, নখ ও চামড়ার কোন কিছু কাটবে না; যতক্ষণ না সে কোরবানি সম্পন্ন করে। দলিল হচ্ছে একদল সংকলক (বুখারী ছাড়া) উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমরা যখন যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখ এবং তোমাদের কেউ কোরবানি করার সংকল্প রাখে তখন সে যেন তার চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে”। সুনানে আবু দাউদ, সহিহ মুসলিম ও সুনানে নাসাঈ এর ভাষা হচ্ছে- “কেউ যদি জবাই করার জন্য কোন পশু প্রস্তুত রাখে এবং সে যিলহজ্জ মাসে প্রবেশ করে তখন সে যেন তার চুল ও নখ না কাটে; যতক্ষণ না সে কোরবানি সম্পন্ন করে”। এক্ষেত্রে সে নিজ হাতে জবাই করুক কিংবা অন্য কাউকে জবাই করার দায়িত্ব দিক উভয়টা সমান। আর যাদের পক্ষ থেকে কোরবানি করা হচ্ছে তাদের জন্য এসব বিধান নেই। যেহেতু এই মর্মে কোন দলিল নেই। তাছাড়া এটাকে ইহরাম বলা হয় না। মুহরিম হচ্ছে- হজ্জ কিংবা উমরা কিংবা উভয়টি পালনেচ্ছু ব্যক্তি”।[সমাপ্ত]
[ফাতাওয়াল লাজনাহ্ আদ-দায়িমা (১১/৩৯৭ ও ৩৯৮)]
স্থায়ী কমিটিকে জিজ্ঞেস করা হয়:
“হাদিস: ‘যে ব্যক্তি কোরবানি করতে চায় কিংবা তার পক্ষ থেকে কোরবানি করা হবে সে যিলহজ্জ মাসের শুরু থেকে তার চুল, চামড়া ও নখের কোন কিছু কাটবে না; যতক্ষণ না কোরবানি শেষ হয়।’ এ নিষেধাজ্ঞা কি পরিবারের ছোটবড় সকল সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করবে নাকি ছোটদের পরিবর্তে শুধু বড়দেরকে অন্তর্ভুক্ত করবে?”
জবাবে তারা বলেন:
প্রশ্নকারী যে ভাষায় উল্লেখ করেছেন সে ভাষায় আমরা কোন হাদিস জানি না। বরং যে ভাষায় হাদিসটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে মর্মে আমরা জানি সেটা হচ্ছে- “তোমরা যখন যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখ এবং তোমাদের কেউ কোরবানি করার সংকল্প রাখে তখন সে যেন তার চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে”। সুনানে আবু দাউদ, সহিহ মুসলিম ও সুনানে নাসাঈ এর ভাষা হচ্ছে- “কেউ যদি জবাই করার জন্য কোন পশু প্রস্তুত রাখে এবং সে যিলহজ্জ মাসে প্রবেশ করে তখন সে যেন তার চুল, নখ না কাটে; যতক্ষণ না সে কোরবানি সম্পন্ন করে”। এ হাদিসে যিলহজ্জ মাস প্রবেশ করার পর যে ব্যক্তি কোরবানি করতে ইচ্ছুক তার জন্য চুল ও নখ কাটা থেকে নিষেধাজ্ঞার প্রমাণ রয়েছে। আর প্রথম রেওয়ায়েতটিতে বর্জন করার নির্দেশ রয়েছে। নির্দেশের মূল বিধান হচ্ছে- ওয়াজিব বা আবশ্যকতা সাব্যস্ত করা। এ হাদিসের এ মূল বিধানকে রহিত করতে পারে এমন কোন পাল্টা দলিল আমাদের জানা নেই। দ্বিতীয় রেওয়ায়েতে রয়েছে কর্তন করার নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞারও মূল বিধান হচ্ছে- হারাম সাব্যস্ত করা। অর্থাৎ কর্তন করার নিষেধাজ্ঞা। এ নিষেধাজ্ঞাকে শিথিল করতে পারে এমন কোন পাল্টা দলিল আমাদের জানা নেই। অতএব, এর মাধ্যমে সাব্যস্ত হল যে, এ হাদিসটি শুধু ঐ ব্যক্তির জন্য খাস যিনি নিজে কোরবানি করতে ইচ্ছুক। কিন্তু যে ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি করা হবে (যেমন কোরবানিকারীর স্ত্রী-পুত্র) তিনি বড় হন কিংবা ছোট হন তার ক্ষেত্রে চুল কাটা, চামড়া তোলা কিংবা নখ কাটতে কোন বাধা নেই। যেহেতু আসল বিধান হচ্ছে- এগুলো জায়েয হওয়া। এ আসল বিধানের বিপরীত কোন দলিল আমাদের জানা নেই।[সমাপ্ত]
[ফাতাওয়াল লাজনা আদ-দায়িমা (১১/৪২৬ ও ৪২৭)]
দুই:
যে ব্যক্তির সামর্থ্য না থাকার কারণে তার কোরবানি করার ইচ্ছা নেই তার জন্য এগুলো কাটা হারাম নয়। আর কোরবানি করতে ইচ্ছুক এমন কেউ যদি এগুলো কেটে ফেলে তার উপর ফিদিয়া আবশ্যক হবে না। বরং তার উপর তাওবা ও ইস্তিগফার করা আবশ্যক হবে।
ইবনে হাযম বলেন:
যে ব্যক্তি কোরবানি করতে ইচ্ছুক যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখা গেলে সে তার দেহের চুল বা নখ ইত্যাদি হাত দিবে না; অর্থাৎ কামাবে না কিংবা ছাটবে না কিংবা অন্য কোন ভাবে দূর করবে না। আর যে ব্যক্তির কোরবানি করার সংকল্প নেই তার উপর এগুলো অবধারিত নয়।[আল-মুহাল্লা (৩/৬)]
ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন:
এটা যখন সাব্যস্ত হল তখন সে ব্যক্তি চুল কাটা, নখ কাটা বর্জন করবে। যদি করে ফেলে তাহলে আল্লাহ্র কাছে ইস্তিগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করবে। তাকে ফিদিয়া দিতে হবে না মর্মে ইজমা সংঘটিত হয়েছে; চাই সে সেটা ইচ্ছাকৃতভাবে করুক কিংবা ভুলক্রমে করুক।[আল-মুগনি (৯/৩৪৬)]
টীকা:
শাওকানি বলেন:
এ নিষেধাজ্ঞার হেকমত হলো, কোরবানিকারীর শরীরের সম্পূর্ণ অংশ অটুট থাকুক; যাতে করে গোটা দেহ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পায়। কারো কারো মতে, ইহরামকারীর সাথে সাদৃশ্যস্বরূপ এ বিধান। এ দুটি হেকমত ইমাম নববী উল্লেখ করেছেন। ইমাম শাফেয়ির ছাত্রবর্গ থেকে বর্ণিত আছে যে, দ্বিতীয় হেকমতটি ভুল। কারণ ইহরামকারী আরও যেসব জিনিস বর্জন করে থাকে কোরবানিকারী তো সেগুলো বর্জন করে না; যেমন- নারী, সুগন্ধি, সাধারণ পোশাক ইত্যাদি।[নাইলুল আওতার (৫/১৩৩)]
আল্লাহ্ই ভাল জানেন।