আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
মুসলিম উম্মাহর মাঝে যে উৎসব বা উপলক্ষগুলো আবর্তিত হয় সেগুলো হাতে গোনা কয়েকটি এবং সবার জানা; যে উপলক্ষগুলোর বর্ণনা শরিয়তের পক্ষ থেকে এসেছে এবং যেগুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এ শ্রেণীর উপলক্ষগুলোর মধ্যে রয়েছে– মাহে রমযান, ঈদ, যিলহজ্জ মাসের দশদিন ও মুহররম ইত্যাদি। মিলাদুন্নবী এ শ্রেণীর মধ্যে নেই। কেননা মিলাদুন্নবী উপলক্ষে বিশেষ কোন আচার-অনুষ্ঠান, ইবাদত-বন্দেগি কিংবা উদযাপন করার ব্যাপারে কোন দলিল উদ্ধৃত হয়নি। বরং সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন ও তাঁদের পরবর্তীগণ এ দিবসকে বিবেচনাই করতেন না। সুতরাং যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবীকে শরিয়তের কিছুর সাথে সম্পৃক্ত করবে সে ব্যক্তি বিদাত করল, দ্বীনের মধ্যে নতুন বিষয় চালু করল। ইতিপূর্বে আমাদের ওয়েব সাইটে মিলাদুন্নবী বিদাত হওয়ার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। দেখুন: 5219, 10070, 13810, 20889 ও 70317 নং প্রশ্নোত্তর।
দুই:
নিঃসন্দেহে সেই দিনে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে- সেইদিন পালন করা ও উদযাপন করা। এটি সে দিনকে ঈদ হিসেবে পালন করার নামান্তর। তাই এ বিদাতী উপলক্ষকে কেন্দ্র করে যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় তাতে অংশ গ্রহণ করা নাজায়েয। নচেৎ অংশগ্রহণকারীও বিদাতী গণ্য হবে। আমরা আল্লাহ্র কাছে সুরক্ষা প্রার্থনা করছি।
স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্রে এসেছে–
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আমাদের আফ্রিকাতে যা ঘটে থাকে– শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কল-কারখানায় ছুটি দেয়া কিংবা খোতবা, আলোচনা ও ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা; এগুলোকে আপনারা কি দৃষ্টিতে দেখবেন? উম্মাহর সহযোগিতায় আল্লাহ্ আপনাদেরকে অটুট রাখুন।
জবাব ছিল:
মিলাদুন্নবী পালন ও এ উপলক্ষে ছুটি দেয়া বিদাত। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা করেননি। তাঁর সাহাবীবর্গ করেননি। বরং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি আমাদের এ শরিয়তে নতুন কিছু চালু করে সেটা প্রত্যাখ্যাত”।[সমাপ্ত]
তিন:
পক্ষান্তরে, শরিয়ত অনুমোদিত উপলক্ষসমূহ যেমন- মাহে রমযান ও এ ধরণের উপলক্ষগুলো; সেগুলোর ক্ষেত্রে শরিয়তের বিধান হচ্ছে, বরঞ্চ মুস্তাহাব হচ্ছে– মানুষকে এ উপলক্ষগুলো স্মরণ করিয়ে দেয়া, এ উপলক্ষে কি কি আমল করা মুস্তাহাব সেগুলোর ফযিলত ও কি কি সওয়াব লেখা হবে সেসব জানিয়ে দেয়া। শরিয়ত অনুমোদিত এ মৌসুমগুলো মানুষ কিভাবে পালন করবে তা শেখানোর উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে– বিভিন্ন দারস ও সভা-সমাবেশের আয়োজন করা।
এ উপলক্ষগুলো পালন করার একটা মাধ্যম হচ্ছে– বিভিন্ন ইলমি প্রতিযোগিতা ও কুরআন মুখস্ত করার প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা। কারণ এ উপলক্ষে মানুষ আল্লাহ্মুখী হয়ে উঠে। কুরআন তেলাওয়াত করা, মুখস্ত করা ও দ্বীনি বিধি-বিধান শেখার জন্য সচেষ্ট হয়ে উঠে। সুতরাং এ উপলক্ষে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা ও তাতে অংশ নেয়াতে ইনশাআল্লাহ্ কোন অসুবিধা নেই।
চার:
আমাদের ওয়েব সাইটে ইতিপূর্বে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার দেয়ার বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। বরং কোন প্রতিযোগিতাতে যদি দ্বীনি কিংবা দুনিয়াবী কোন কল্যাণ থাকে তাহলে সঠিক মতানুযায়ী সেটা জায়েয। বরং হানাফি মাযহাবের আলেমগণ ইলমি ও গাণিতিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিনিময় নেয়াকেও জায়েয বলেছেন।
“আল-ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যা” গ্রন্থে এসেছে–
“যদি ফিকাহর শিক্ষার্থী একজন আরেকজন কে বলে: আস, আমরা মাসয়ালাগুলো পর্যালোচনা করি। যদি তুমি সঠিক জবাব দাও আমি ভুল করি তাহলে আমি তোমাকে এত এত দিব। আর যদি আমি সঠিক জবাব দেই তুমি ভুল কর তাহলে আমি তোমার থেকে কিছুই নিব না– এটা জায়েয হওয়াই আবশ্যক।[সমাপ্ত]
দেখুন: রাদ্দুল মুহতার (৬/৪০৪)