আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
গণতন্ত্রের হুকুম কি? পার্লামেন্টে গুরুত্বপূর্ণ পদ গ্রহণ কিংবা গণতান্ত্রিক সরকারের অন্যকোন দায়িত্ব গ্রহণ করার হুকুম কি? গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোন ব্যক্তিকে ভোট দেয়া ও নির্বাচিত করার হুকুম কি?
আলহামদু লিল্লাহ।.
গণতন্ত্র একটি মানব রচিত মতবাদ। এর মানে- জনগণ নিজেই নিজেকে শাসন করা। তাই এটি ইসলাম বিরোধী মতবাদ। শাসনের অধিকার সুউচ্চ ও সুমহান আল্লাহর অধিকার। কোন মানুষকে আইন প্রণয়ন করার অধিকার দেয়া জায়েয নেই; সে মানুষ যেই হোক না কেন।
‘মাওসুআতুল আদইয়ান ওয়াল মাযাহেব আল-মুআসেরা’ গ্রন্থে (২/১০৬৬, ১০৬৭) এসেছে: “কোন সন্দেহ নেই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর প্রতি নতি শিকার কিংবা আইন প্রণয়নের অধিকারের ক্ষেত্রে নব্য শিরকের একটি রূপ। এ পদ্ধতিতে মহামহিম স্রষ্টার কর্তৃত্বকে বাতিল করে দেয়া হয়; অথচ আইন প্রণয়নের একচ্ছত্র অধিকার হচ্ছে- স্রষ্টার; কিন্তু সে অধিকার তাঁর থেকে ছিনিয়ে মাখলুককে প্রদান করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে নিছক কতগুলো নামের (প্রতিমার) ইবাদত করছ, যে নামগুলো তোমাদের পূর্বপুরুষগণ ও তোমরা রেখেছ; এর পক্ষে কোন প্রমাণ আল্লাহ অবতীর্ণ করেননি। বিধান দেওয়ার অধিকার শুধুমাত্র আল্লাহর। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন শুধুতাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করতে। এটাই শাশ্বত ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।” [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৪০] আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “বিধান দেওয়ার অধিকার শুধুমাত্র আল্লাহর।” [সূরা আনআম, আয়াত: ৫৭] এ বিষয়ে বিষদ আলোচনা 98134 নং প্রশ্নোত্তরে উল্লেখ করা হয়েছে।
দুই:
যে ব্যক্তি গণতান্ত্রিক সরকার পদ্ধতির প্রকৃত অবস্থা জানে, ইসলামে গণতন্ত্রের হুকুম কি সেটা জানে, তারপরও এ পদ্ধতিকে স্বীকৃতি দিয়ে নিজেকে কিংবা অন্য কাউকে নির্বাচিত করে সে ব্যক্তি ভয়াবহ শংকার মধ্যে আছে। কারণ ইতিপূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে ইসলাম বিরোধী।
তবে যে ব্যক্তি এ পদ্ধতির অধীনে নিজেকে কিংবা অন্য কাউকে এ জন্য নির্বাচিত করে যাতে করে এ আইনসভাতে ঢুকে এর বিরোধিতা করা যায়, এ পদ্ধতির বিপক্ষে দলিল প্রমাণ উপস্থাপন করা যায়, সাধ্যানুযায়ী অকল্যাণ ও দুর্নীতি রোধ করা যায় এবং যেন গোটা ময়দান দুর্নীতিবাজ ও নাস্তিকদের হাতে চলে না যায়, যারা জমিনে দুর্নীতি ছড়িয়ে দেয়, মানুষের দ্বীন ও দুনিয়ার সমূহ কল্যাণ নস্যাৎ করে দেয়— তবে এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য কল্যাণের দিক বিবেচনা করে ইজতিহাদ করার তথা বিবেক-বিবেচনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ রয়েছে।
বরং কোন কোন আলেম মনে করেন, এ ধরনের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা ফরজ।
শাইখ মুহাম্মদ বিন উছাইমীনকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাবে বলেন: আমি মনে করি এ নির্বাচনগুলোতে অংশ নেয়া ফরজ। আমরা যাকে ভাল মনে করি তাকে সহযোগিতা করা ফরজ। কারণ ভাল লোকেরা যদি ঢিলেমি করে তাহলে এ স্থানগুলো কে দখল করবে? খারাপ লোকেরাই দখল করবে কিংবা এমন লোকেরা দখল করবে যাদের কাছে না আছে ভাল; না আছে খারাপ; যারা সুবিধাবাদী। তাই আমাদের উচিত যাকে যোগ্য মনে করি তাকে নির্বাচিত করা।
যদি কেউ বলেন: আমরা যাকে নির্বাচিত করলাম আইনসভার অধিকাংশ সদস্য তার বিপক্ষে।
আমরা জবাবে বলব: কোন অসুবিধা নেই। এই একজনের মধ্যে আল্লাহ বরকত দিতে পারেন। তিনি যদি আইনসভার সামনে হক কথা বলতে পারেন তাহলে অবশ্যই এর প্রভাব থাকবে, প্রভাব থাকতেই হবে। তবে যে ক্ষেত্রে আমাদের কসুর হয় সেটা হচ্ছে- আল্লাহর সাথে বিশ্বস্ত হওয়া। আমরা শুধু বৈষয়িক বিষয়ের উপর নির্ভর করি; আল্লাহর বাণী... এর দিকে তাকাই না। সুতরাং আপনি যাকে ভাল মনে করেন তাকে নির্বাচিত করুন; এরপর আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করুন।[লিকাআতুল বাব আল-মাফতুহ থেকে সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত]
ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির আলেমগণকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:
নির্বাচনে কাউকে মনোনয়ন দেয়া ও ভোট দেয়া জায়েয আছে কি? উল্লেখ্য, আমাদের দেশের শাসনব্যবস্থা আল্লাহর নাযিলকৃত আইনে নয়।
জবাবে তাঁরা বলেন:
যে সরকার আল্লাহর নাযিলকৃত আইন দিয়ে শাসন করে না, শরিয়া আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে না কোন মুসলমানের জন্য সে সরকারে যোগ দেয়ার প্রত্যাশায় নিজেকে মনোনীত করা জায়েয নয়। তাই এ সরকারের সাথে কাজ করার জন্য কোন মুসলমানের নিজেকে কিংবা অন্য কাউকে নির্বাচিত করা জায়েয নেই। তবে কোন মুসলমান যদি এ উদ্দেশ্য নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয় কিংবা অন্যকে নির্বাচিত করে যে, এর মাধ্যমে এ শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করে ইসলামী শরিয়াভিত্তিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করবে, নির্বাচনে অংশ গ্রহণকে তারা বর্তমান শাসনব্যবস্থার উপর আধিপত্যবিস্তার করার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে তাহলে সেটা জায়েয। তবে, সে ক্ষেত্রেও যে ব্যক্তি প্রার্থী হবেন তিনি এমন কোন পদ গ্রহণ করতে পারবেন না যা ইসলামী শরিয়ার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায, শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আফিফি, শাইখ আব্দুল্লাহ গুদইয়ান, শাইখ আব্দুল্লাহ কুয়ুদ।[স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র থেকে সংকলিত (২৩/৪০৬, ৪০৭]
স্থায়ী কমিটিকে আরও জিজ্ঞেস করা হয় যে,
আপনারা জানেন, আমাদের আলজেরিয়াতে “আইনসভার নির্বাচন” অনুষ্ঠিত হয়। কিছু কিছু দল আছে যারা ইসলামী হুকুমত কায়েমের দিকে আহ্বান করে। আর কিছু কিছু দল আছে যারা ইসলামী হুকুমত চায় না। এখন যে ব্যক্তি এমন কাউকে ভোট দেয় যে প্রার্থী ইসলামী হুকুম চায় না সে ব্যক্তির হুকুম কি হবে; তবে এ ব্যক্তি নামায আদায় করে?
জবাবে তাঁরা বলেন: যে সব দেশে ইসলামী শরিয়াভিত্তিক শাসনব্যবস্থা চালু নাই সেসব দেশের মুসলমানদের উপর ফরজ ইসলামী হুকুমত ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা নিয়োজিত করা এবং যে দল ইসলামী হুকুমত বাস্তবায়ন করবে বলে তারা ধারনা করেন সে দলকে একজোটে সবাই মিলে সহযোগিতা করা। পক্ষান্তরে, যে দল ইসলামী শরিয়া বাস্তবায়ন না করার প্রতি আহ্বান জানায় সে দলকে সহযোগিতা করা নাজায়েয। বরং এ ধরনের সহযোগিতা ব্যক্তিকে কুফরের দিকে ধাবিত করে। দলিল হচ্ছে আল্লাহর বাণী: “আর আমি আদেশ করছি যে, আপনি তাদের মাঝে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী বিধান দিন; তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না এবং তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন, যাতে করে আল্লাহ আপনার প্রতি যা নাযিল করেছেন তারা এর কোন কিছু হতে আপনাকে বিচ্যুত করতে না পারে। অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রাখুন, আল্লাহ তাদেরকে তাদের কিছু পাপের শাস্তি দিতে চান। নিশ্চয় মানুষের মধ্যে অনেকেই ফাসেক। তারা কি জাহেলিয়াতের বিধান কামনা করে? যারা (আল্লাহর প্রতি) একীন রাখে তাদের কাছে আল্লাহর চেয়ে উত্তম বিধানদাতা কে?”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৪৯-৫০] এ কারণে যারা ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করে না আল্লাহ তাদেরকে কাফের হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের সাথে সহযোগিতা করা থেকে, তাদেরকে মিত্র হিসেবে গ্রহণ করা থেকে সাবধান করেছেন। যদি মুমিনগণ প্রকৃত ঈমানদার হয় তাদেরকে তাকওয়া অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন: “হে মুমিনগণ, আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করেতাদেরকে এবং অন্য কাফেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক।”।[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৫৭]
আল্লাহই তাওফিকদাতা, আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর আল্লাহর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক।
গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি
শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায, শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আফিফি, শাইখ আব্দুল্লাহ গুদইয়ান
[স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১/৩৭৩) থেকে সমাপ্ত]