আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
মধ্য শাবানের রাত উদযাপন করা কি জায়েয? যেটাকে কোন কোন দেশে জাতীয় ঐতিহ্যগত উৎসব হিসেবে গণ্য করা হয়। আরো পরিষ্কার করে বললে: আমাদের দেশে কিছু কিছু গোষ্ঠী শিশুদের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করার প্রথা চালু আছে। আমরা ধরে নিয়েছি যে, এটি রমযান মাসের আগমন উপলক্ষে খুশি। এ রাতটি উদযাপন করতে কি কোন অসুবিধা আছে? যদি উদযাপনটা শুধু শিশুদের মাঝে মিষ্টি বিতরণের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে?
আলহামদু লিল্লাহ।.
মধ্য শাবানের রাত বা শবে বরাত উদযাপন করা শরিয়তসম্মত নয়; সেটা নামায পড়ার মাধ্যমে হোক, যিকিরের মাধ্যমে হোক, কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে হোক কিংবা মিষ্টান্ন বা খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে হোক। কোন সহিহ হাদিসে এ রাতে বিশেষ কোন ইবাদত বা অভ্যাস পালন করার শরয়ি ভিত্তি জানা যায় না। মধ্য শাবানের রাত্রি অন্য যে কোন রাতের ন্যায়।
ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির আলেমগণ বলেন:
"লাইলাতুল ক্বদর উদযাপন করা বা অন্য কোন রাত উদযাপন করা, কিংবা শবে বরাত, শবে মেরাজ, ঈদে মিলাদুন্নবী ইত্যাদি উপলক্ষগুলো উদযাপন করা জায়েয নেই। কেননা এসব হচ্ছে-- নবপ্রবর্তিত বিদাত; যেগুলোর সমর্থনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবীবর্গ থেকে এমন কিছু উদ্ধৃত হয়নি। বরং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করে যা আমাদের শরিয়তে নেই সেটা প্রত্যাখ্যাত"। এ ধরণের উপলক্ষগুলো উদযাপনের জন্য অর্থ, উপঢৌকন বা চা বিতরণ করার মাধ্যম সহযোগিতা করাও জায়েয নেই। এ ধরণের উপলক্ষে খোতবা ও আলোচনা পেশ করাও জায়েয নেই। কেননা এর মাধ্যমে এ উপলক্ষগুলো উদযাপনের প্রতি সমর্থন দেয়া হয় ও উৎসাহ দেয়া হয়। বরং এগুলোর নিন্দা করা এবং এগুলোতে উপস্থিত না হওয়া ওয়াজিব।"[সমাপ্ত][ফাতাওয়াল লাজনাহ আদ্-দায়িমা (২/২৫৭-২৫৮)]
শাইখ বিন উছাইমীন (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: আমাদের সমাজে কিছু কিছু উপলক্ষকেন্দ্রিক কিছু প্রথা আছে আমরা বংশানুক্রমে যেগুলো পালন করে আসছি। যেমন-- ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কেক ও বিস্কুট তৈরী করা, রজব মাসের ২৭ তারিখ ও শাবানের ১৫ তারিখ উপলক্ষে গোশত ও ফল-ফলাদির ডিশ তৈরী করা এবং আশুরার দিনে বিশেষ ধরণের কিছু মিষ্টান্ন তৈরী করা অনিবার্য। এসব ব্যাপারে শরিয়তের হুকুম কী?
জবাবে তিনি বলেন: "ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করতে কোন বাধা নেই; যদি সেটা শরিয়তের গণ্ডির মধ্যে হয়। যেমন-- লোকেরা সবাই খাবার ও পানীয় ইত্যাদি নিয়ে একত্রিত হওয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, "তাশরিকের দিনগুলো পানাহার ও আল্লাহ্র যিকিরের দিন"। তিনি এর দ্বারা বুঝাতে চেয়েছেন ঈদুল আযহার পরের তিনদিন যে সময়ে মানুষ কোরবানি করে, কোরবানির গোশত খায় এবং আল্লাহ্র নিয়ামত উপভোগ করে। অনুরূপভাবে ঈদুল ফিতরের দিনও আনন্দ-খুশি প্রকাশ করতে কোন বাধা নেই; যদি সেটা শরিয়তের গণ্ডি অতিক্রম না করে। আর রজব মাসের ২৭ তারিখে কিংবা ১৫ শাবানের রাতে কিংবা আশুরার দিনে খুশি প্রকাশ করা-- এর কোন ভিত্তি নেই। বরং সেটা নিষিদ্ধ। কোন মুসলিম এ ধরণের কোন অনুষ্ঠানের দাওয়াত পেলে সেখানে যাবেন হবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "তোমরা নবপ্রবর্তিত বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাক। কেননা প্রত্যেক নবপ্রবর্তিত বিষয় বিদাত। আর প্রত্যেক বিদাতই ভ্রষ্টতা"।" রজব মাসের ২৭ শে রাতকে কেউ কেউ লাইলাতুল মে'রাজ দাবী করেন; যে রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্র সান্নিধ্যে মে'রাজে গিয়েছেন। ঐতিহাসিক দিক থেকে এটি সাব্যস্ত হয়নি। আর যা কিছু সাব্যস্ত নয় সেটা বাতিল। বাতিলের উপর ভিত্তি করে যা কিছু গড়ে ওঠে সেটাও বাতিল। যদি আমরা ধরে নেই যে, সে রাতেই মেরাজ সংঘটিত হয়েছে তদুপরি সে রাতে কোন প্রকার উৎসব-অনুষ্ঠান বা ইবাদত প্রবর্তন করা আমাদের জন্য জায়েয হবে না। কারণ এসব কিছু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়নি এবং তাঁর সাহাবীবর্গ থেকেও সাব্যস্ত হয়নি যারা তাঁর সবচেয়ে কাছের মানুষ এবং তাঁর সুন্নত ও শরিয়ত অনুসরণে সবচেয়ে আগ্রহী। তাহলে আমাদের জন্য কিভাবে এমন কিছু প্রবর্তন করা জায়েয হতে পারে যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যামানায় ছিল না এবং তাঁর সাহাবীদের যামানায় ছিল না?!
এমন কি মধ্য শাবানের রাতের ব্যাপারেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ রাতকে অতিরিক্ত মর্যাদা দেয়া ও ইবাদতে রাত কাটানো সাব্যস্ত হয়নি। বরং কিছু তাবেয়ি থেকে নামায ও যিকিরের মাধ্যমে এ রাত কাটানো সাব্যস্ত হয়েছে; খাওয়া-দাওয়া, আনন্দ-ফুর্তি বা উৎসব-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নয়।"[সমাপ্ত]
[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা (৪/৬৯৩)]
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।