আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
আমার প্রশ্নে অনেকগুলো বিষয় থাকবে। আমি সদ্য ইসলামে প্রবেশ করেছি; এই কিছুদিন হল মাত্র। প্রথম দিকে আমি আমার সাধ্যানুযায়ী সবগুলো নামায আদায় করতাম (আমি আরবী জানি না)। এক লোক আমাকে বলল যে, আরবীতে কথা বলতে পারা আমার উপর আবশ্যক....। শেষে আমি নামায পড়া ছেড়ে দিলাম...। আমি প্রতিদিন আমার প্রভুকে নিয়ে কয়েকবার চিন্তা করি...। ইসলামের বিধিবিধানগুলো মেনে চলি...। কিন্তু আমি কিছু বিষয় ছেড়ে দিতে পারছি না; যেগুলোর ব্যাপারে আমি জানি যে, এগুলো ভুল...। আল্লাহ্ আমাকে হেদায়েত দেয়ার পর থেকে আমি আমার জীবনকে অনেকটুকু পরিবর্তন করতে পেরেছি। বিগত দীর্ঘ বছরগুলোর তুলনায় এখন আমার অবস্থা ভাল। আমি প্রতিদিন মদ পান করতাম; মদের তলানিটুকুসহ। এখন আমি মদ পান করি না বললেই চলে। আমি আমার সকল অর্থ দিয়ে জুয়া খেলতাম। এখন বলতে গেলে খেলা একেবারে ছেড়ে দিয়েছি। যখনই আমি এ ভুলগুলো করি তখনই আমি অনুভব করি যে, আমি ভুল করছি এবং আমি আমার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে চাই না। আমি অনুভব করি যে, আল্লাহ্ আমাকে এমন কিছু পদ্ধতিতে হেদায়েত দিবেন যা আমি জানি না...। আমি পাপ অনুভব করি না; কিন্তু আমি অনুভব করি যে, কেন আমি এটি করছি...। আমি যাদের সাথে চাকুরী করি এমন কিছু মুসলিমকে অনুরোধ করেছি তারা যেন সহিহ পদ্ধতিতে নামায পড়াটা আমাকে শিখিয়ে দেয়; এমন কি ইন্টারনেটে এক ব্যক্তির সাথে পরিচিত হয়েছি তাকেও অনুরোধ করেছি এবং অন্যান্য কিছু বিষয়ে আমাকে সহযোগিতা করার অনুরোধ করেছি...। কিন্তু, আমি যেহেতু অষ্ট্রেলিয়ান; ফলে তারা মনে করে যে, আমি আমার ইসলাম গ্রহণে আন্তরিক নই। তাই তারা দ্যোদুল্যমান। আমি বিশ্বাস করি যে, আমি ভাল মানুষ নই...। কিন্তু, আমি পূর্বে যে অবস্থায় ছিলাম এর চেয়ে অনেক ভাল। আমি জানি যে, আমি আল্লাহ্র সাহায্যে ও তাঁর হেদায়েতে সফল হব। আমার সামনে এখনও অনেক কিছু শেখা বাকী। অনুগ্রহপূর্বক আমাকে পরামর্শ দিন। আমার কি এককভাবে চেষ্টা চালানো আবশ্যক; নাকি অপর মুসলমানদের কাছে সাহায্য চাইব; যদিও মনে হয় তারা আমাকে সাহায্য করতে চাচ্ছেন না।
আলহামদু লিল্লাহ।.
প্রারম্ভে ও শেষে সকল প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য। সকল কৃতজ্ঞতা সর্বদা তাঁরই জন্য। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়েত দিয়ে অনুগ্রহ করেন। যাকে ইচ্ছা তাকে সুখি করে অনুকম্পা করেন। তিনিই তাঁর বান্দাকে ভ্রষ্টতা থেকে মুক্তি দেন। কিয়ামত পর্যন্ত তিনিই তাঁর ওলি বা মিত্রদেরকে সাহায্য করে যাবেন।
প্রিয় মুসলিম ভাই,
হেদায়েতের নেয়ামত প্রাপ্তির জন্য আপনাকে শুভেচ্ছা। আমরা আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আপনাকে মৃত্যু পর্যন্ত অটল-অবিচল রাখেন।
আপনি ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে, যে ভ্রষ্টতার উপর আপনি বেড়ে উঠেছেন সেটাকে ত্যাগ করে, এবং যে শির্ক থেকে আপনাকে বারণ করা হয়েছে সেটা পরিত্যাগ করে মহা এক অর্জন কামাই করতে পেরেছেন। সুতরাং মুসলমানদের একজন নতুন ভাই হিসেবে আপনাকে স্বাগতম। এ ওয়েবসাইটের একজন সম্মানিত ভিজিটর হিসেবেও আপনাকে শুভেচ্ছা।
প্রথমে আমরা আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, মানুষ এই দুনিয়া কঠিন পরীক্ষা ও বালাই এর মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে। এর জন্য প্রয়োজন ধৈর্য, অবিচলতা ও মৃত্যু পর্যন্ত দৃঢ় সংকল্প। “হে মানুষ! তোমাকে তোমার প্রভুর কাছে পৌঁছাতে অনেক কষ্ট করতে হবে, তারপর তাঁর সাক্ষাৎ পাবে।”[সূরা আল্-ইনশিক্বাক, আয়াত: ৬]
আল্লাহ্ যা কিছু দিয়ে তাঁর বান্দাকে পরীক্ষা করেন এর মধ্যে রয়েছে তিনি যে আমলগুলো বান্দাদের উপর ফরয করেছেন কিংবা ওয়াজিব করেছেন সেগুলো; যেমন- নামায, রোযা, যাকাত, হজ্জ ও অন্যান্য ইবাদত এবং যা কিছু থেকে তিনি নিষেধ করেছেন সেগুলো; যেমন- মিথ্যা বলা, জালিয়াতি করা, ব্যভিচার করা, সমকামিতা ও অন্যান্য নিষিদ্ধ কর্মগুলো। যেন তিনি দেখে নিতে পারেন যে, কে সেই সত্যবাদী মুমিন যে আল্লাহ্র নির্দেশ বাস্তবায়ন করে; ফলে তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর কে সেই মিথ্যাবাদী মুনাফিক যে আল্লাহ্র আনুগত্য বর্জন করে; ফলে তাকে তিনি জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।
সুতরাং আল্লাহ্ যা কিছু পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন সেগুলো জানতে সচেষ্ট হোন; যাতে করে সেগুলো পালন করতে পারেন এবং আল্লাহ্ যা কিছু নিষেধ করেছেন সেগুলো জানতে সচেষ্ট হোন; যাতে করে সেগুলো বর্জন করতে পারেন।
আল্লাহ্র নির্দেশাবলী অনেক এবং নিষেধাবলীও অনুরূপ। আদেশ ও নিষেধগুলো একই স্থানে গুণে গুণে উল্লেখ করা ও ব্যাখ্যা করা সম্ভবপর নয়। কিন্তু আমাদের ওয়েবসাইটে ইসলামের সুমহান অনুশাসন সম্পর্কিত যে প্রশ্নোত্তরগুলোও রয়েছে আমরা আপনাকে সেগুলোর রেফারেন্স দিচ্ছি। আশা করি আপনি ব্রাউজ করে সেগুলো পড়বেন। এবং এও আশা করছি যে, আল্লাহ্ এর দ্বারা আপনাকে উপকৃত করবেন।
পক্ষান্তরে, আপনি প্রশ্নে যে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন যে, আপনার উপর আরবী শেখা কি ওয়াজিব; এ কথা ঠিক। কিন্তু গোটা ভাষার সবকিছু নয়। বরং আপনার উপর ততটুকু শেখা আবশ্যক যতটুকু আপনার দ্বীন পালনের জন্য প্রয়োজন। দেখুন 6524 নং প্রশ্নোত্তর। আপনি আরবী ভাষা না জানার কারণে নামায ত্যাগ করার কোন সুযোগ নাই। কেননা নামাযের জন্য আপনার যতটুকু প্রয়োজন সেটা অতি সামান্য সময়ে আপনি শিখে নিতে পারবেন। আপনি শিখতে যতটুকু সময় লাগে ততদিন পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ে নিয়মিত নামায আদায় করা আপনার উপর আবশ্যক এবং আপনি আপনার সাধ্যানুযায়ী নামায পড়বেন। “আল্লাহ্ কারো উপর তার সাধ্যের বাইরে বোঝা চাপিয়ে দেন না।”
অবশেষে প্রিয় ভাই, আমরা আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি- আপনি আপনার দেশের কোন একটি ইসলামী সেন্টার খুঁজে নিবেন। দ্বীন মেনে চলে এমন মুসলিমদের সাথে উঠাবসা করবেন। নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটগুলো অনুসরণ করবেন। সাধ্যানুযায়ী এসব ওয়েবসাইট থেকে উপকৃত হতে সচেষ্ট হবেন। অনুরূপভাবে আমরাও আপনার সেবা করতে ও আপনার মত অন্য যারা তাদের প্রয়োজনীয় দ্বীনি বিষয় জানতে আগ্রহী তাদের সেবা করতে পেরে খুশি। আমরা অচিরেই আপনার জন্য দিক-নির্দেশনা পাঠাব। অতএব, আপনি আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখবেন। আল্লাহ্ আপনাকে হেফাযতে রাখুন, তাঁর তত্ত্বাবধানে রাখুন। সালাম।