আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
বড় ওযু করার পদ্ধতি কি? এখানে বিভিন্ন মাযহাবের মতামত বিভিন্নরকম। কোন মাযহাব অনুসরণ করা আমার উপর ফরয? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিভাবে ছোট ওযু ও বড় ওযু করতেন?
আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
সুনির্দিষ্ট কোন মাযহাব অনুসরণ করা আপনার উপর ফরয নয়। বরং আপনার উপর ফরয হচ্ছে- নির্ভরযোগ্য কোন আলেমকে জিজ্ঞেস করা, যে আলেম তাঁর ইলম ও মর্যাদার কারণে মানুষের মাঝে সুনাম অর্জন করেছেন। এরপর তিনি আপনার কাছে যেসব দ্বীনি বিধান বর্ণনা করবেন সেগুলো গ্রহণ করবেন। যদি বিভিন্ন দ্বীনি বিষয়ের ক্ষেত্রে আলেমদের মাঝে মতভেদ থাকে এতে আপনার কোন ক্ষতি হবে না। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রজ্ঞা মোতাবেক এ মতভেদ সংঘটিত হোক এমনটি চেয়েছেন বিধায় এটি ঘটছে। যে মুসলিম সত্যকে জানার জন্য ‘ইজতিহাদ’ করার যোগ্যতা রাখেন না তার কর্তব্য হচ্ছে আলেমদেরকে জিজ্ঞেস করা। তার উপর এর চেয়ে বেশি কিছু ফরয নয়।
দুই:
ইতিপূর্বে 11497 নং প্রশ্নোত্তরে ছোট অপবিত্রতা থেকে ওযু করার বিস্তারিত পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সেখানে দেখা যেতে পারে।
তিন:
বড় অপবিত্রতা থেকে গোসল করার পদ্ধতি নিম্নরূপ:
গোসলের দুটো পদ্ধতি আছে:
ন্যূনতম বা জায়েয পদ্ধতি:
অর্থাৎ কেউ যদি এ পদ্ধতিতে গোসল করে তাহলে তার গোসল শুদ্ধ হবে এবং সে বড় অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হবে। আর যে ব্যক্তি এ পদ্ধতিতে কোন কসুর করবে তার গোসল শুদ্ধ হবে না।
পরিপূর্ণ মুস্তাহাব পদ্ধতি:
যে পদ্ধতিতে গোসল করা মুস্তাহাব বা উত্তম; ফরয নয়।
ফরয ও জায়েয পদ্ধতির গোসল হচ্ছে-
১। ব্যক্তি অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার নিয়ত করবে; সেটা জুনুবি অবস্থা হোক কিংবা হায়েয হোক কিংবা নিফাস হোক।
২। এরপর সারা শরীর ধৌত করবে। শরীরের লোমের নীচে পানি পৌঁছাবে। যেসব স্থানে সাধারণত পানি পৌঁছে না সেসব স্থানে পানি পৌঁছাবে যেমন- দুই বগল, দুই হাঁটুর নীচে। এর সাথে আলেমদের বিশুদ্ধ মতানুযায়ী, গড়গড়া কুলি ও নাকে পানি দিবে।
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) ‘আল-শারহুল মুমতি’ গ্রন্থে (১/৪২৩) বলেন:
এ পদ্ধতির গোসল যে বৈধ গোসল এর সপক্ষে দলিল হচ্ছে আল্লাহর বাণী: “যদি তোমরা জুনুবি হও তাহলে প্রকৃষ্টভাবে পবিত্রতা অর্জন কর।”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৬] এখানে আল্লাহ তাআলা অন্য কিছু উল্লেখ করেননি। যে ব্যক্তি তার সারা শরীর একবার ধৌত করেছে তার ব্যাপারে সে প্রকৃষ্টভাবে পবিত্রতা অর্জন করেছে এ কথা বলা যায়।
গোসলের পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি হচ্ছে-
১। বড় অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার নিয়ত করবে। সেটা জানাবাত হোক, হায়েয হোক কিংবা নিফাস।
২। এরপর বিসমিল্লাহ বলবে। দুই হাত তিনবার ধৌত করবে। লজ্জাস্থানের ময়লা ধৌত করবে।
৩। তারপর নামাযের ওযু করার ন্যায় পরিপূর্ণ ওযু করবে।
৪। এরপর মাথার উপর তিনবার পানি ঢালবে। চুল ঘষা দিবে যাতে চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে।
৫। অতঃপর সারা শরীরে পানি ঢালবে ও ধৌত করবে। ডানপার্শ্ব দিয়ে শুরু করবে। এরপর বামপার্শ্ব ধৌত করবে। সারা শরীরে যেন পানি পৌঁছে সেজন্য হাত দিয়ে ঘষামাজা করবে।
গোসলের এই মুস্তাহাব পদ্ধতির দলিল হচ্ছে-
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন জানাবাতের (অপবিত্রতার) গোসল করতেন তখন তিনি তাঁর হাত দুইটি ধৌত করতেন, নামাযের ওযুর ন্যায় ওযু করতেন। এরপর গোসল করতেন। হাত দিয়ে চুল খিলাল করতেন; যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি মনে করতেন যে, চামড়া ভিজেছে। তিনি মাথার উপর তিনবার পানি ঢালতেন। এরপর সারা শরীর ধৌত করতেন।”[সহিহ বুখারী (২৪৮) ও সহিহ মুসলিম (৩১৬)]
আয়েশা (রাঃ) থেকে আরও বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন জানাবাতের গোসল করতে চাইতেন তখন তিনি একটি পাত্র আনতে বলতেন; যেমন- হিলাব (উটের দুধ দোহনের পাত্র।) তিনি হাত দিয়ে পানি নিতেন। ডান পার্শ্ব থেকে গোসল শুরু করতেন। এরপর বামপার্শ্ব। এরপর দুই হাতে পানি নিয়ে মাথার উপর পানি ঢালতেন।”[সহিহ বুখারী (২৫৮) ও সহিহ মুসলিম (৩১৮)]
হিলাব: যে পাত্রে দুধ দোহন করা হয়।
দেখুন 10790 নং প্রশ্নোত্তর।
এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা হলো-
বড় অপবিত্রতা থেকে গোসল করলে সেটা দ্বারা ওযুও হয়ে যায়। তাই যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ পদ্ধতিতে গোসল করেছে কিংবা জায়েয পদ্ধতিতে গোসল করেছে উভয় ক্ষেত্রে তাকে পুনরায় ওযু করতে হবে না। তবে, গোসলকালে যদি ওযু ভঙ্গের কোন কারণ ঘটে তাহলে পুনরায় ওযু করতে হবে।
আরও জানতে দেখুন 68854 নং প্রশ্নোত্তর।