আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
আমি ঘুম থেকে জেগে জোহরের নামায আদায় করেছি। আমি দ্বিতীয় রাকাতে থাকা অবস্থায় মুয়াজ্জিন আসরের নামাযের আজান দিয়েছে। এমতাবস্থায় আমার নামাযের হুকুম কী?
আলহামদু লিল্লাহ।.
ফিকাহবিদ আলেমগণ এই মর্মে একমত হয়েছেন যে, যে ব্যক্তি ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগে এক রাকাত নামায পড়তে পারল সে ব্যক্তি নামায পেল। যদি এক রাকাতের চেয়েও কম পরিমাণ পেয়ে থাকে; তবে সে কি ওয়াক্ত পেল; নাকি পেল না– এই নিয়ে তারা মতভেদ করেছেন।
একদল আলেমের মতে, শুধু তাকবীরে তাহরিমা পাওয়ার মাধ্যমেই ওয়াক্ত পাওয়া যায়। সুতরাং যে ব্যক্তি ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়ার আগে তাকবীরে তাহরিমা উচ্চারণ করতে পারল সে ব্যক্তি নামায পেল এবং তার নামায আদায় হিসেবে গণ্য হবে; কাযা হিসেবে নয়। এটি হানাফি ও হাম্বলি মাযহাবের অভিমত।
অন্য একদল আলেমের অভিমত হল, পূর্ণ এক রাকাত না পেলে ওয়াক্ত পাওয়া হল না। এটি মালেকি ও শাফেয়ি মাযহাবের অভিমত। এটাই অগ্রগণ্য অভিমত। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি এক রাকাত নামায পেল সে নামায পেল”।[সহিহ বুখারী (৫৮০) ও সহিহ মুসলিম (৬০৭)]
এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাই্হি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের আগে ফজরের নামাযের এক রাকাত পেল সে ব্যক্তি ফজরের নামায পেল। যে ব্যক্তি সূর্যাস্ত যাওয়ার আগে আসরের নামাযের এক রাকাত পেল সে ব্যক্তি আসরের নামায পেল।”[সহিহ বুখারী (৫৭৯) ও সহিহ মুসলিম (৬০৮)]
প্রথম মতাবলম্বীরা দলিল দেন আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদিসটি দিয়ে, যে হাদিসে তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি সূর্য ডোবার আগে আসরের নামাযের এক সেজদা পেল সে ব্যক্তি যেন নামায পূর্ণ করে। আর যদি কেউ সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের নামাযের এক সেজদা পায় তাহলে সে যেন নামায পূর্ণ করে”।[মুত্তাফাকুন আলাইহি] নাসাঈর বর্ণনাতে এসেছে- “সে নামায পেল”। তাছাড়া নামায পাওয়ার সাথে যদি নামাযের কোন হুকুম সম্পৃক্ত হয় সেক্ষেত্রে রাকাত পাওয়া বা রাকাতের চেয়ে কম পাওয়া উভয়টা সমান। যেমন- জামাত পাওয়া, মুসাফির ব্যক্তি মুকীমের নামায পাওয়া। প্রথম হাদিসটি তার মাফহুম দিয়ে প্রমাণ করছে; আর মাফহুমের চেয়ে মানতুক এর দলিল অধিক উত্তম।
[দেখুন: আল-বাযি-এর ‘আল-মুনতাকা’ (১/১০), তুহফাহুল মুহতাজ (১/৪৩৪), আল-মুগনি (১/২২৮) ও আল- ইনসাফ (১/৪৩৯)।
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
দ্বিতীয় মত হচ্ছে: এক রাকাত না পেলে নামায পাওয়া যাবে না। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি নামাযের এক রাকাত পেল সে নামায পেল”। এই মতটিই সঠিক। এটি শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার মনোনীত অভিমত। কেননা এ ব্যাপারে হাদিসের বাণী সুস্পষ্ট। হাদিসটিতে রয়েছে জুমলায়ে শারতিয়া مَنْ أدرك ركعةً فقد أدرك … অর্থ- যে ব্যক্তি নামাযের এক রাকাত পেল সে নামায পেল)। এই হাদিসের মাফহুম হচ্ছে- যে ব্যক্তি এক রাকাতের চেয়েও কম পেয়েছে সে নামায পায়নি।
এ মতভেদের ভিত্তিতে অন্য পাওয়াগুলোও নির্ভর করে। যেমন- নামাযের জামাত পাওয়া: এটা এক রাকাতের মাধ্যমে পাওয়া যাবে? নাকি শুধু তাকবীরে তাহরিমার মাধ্যমে পাওয়া যাবে? সঠিক মত হচ্ছে- এক রাকাতের মাধ্যমে জামাত পাওয়া যাবে। যেমনটি সর্বসম্মতিক্রমে এক রাকাত নামায পাওয়ার মাধ্যমে জুমার নামায পাওয়া যায়। অনুরূপভাবে এক রাকাত পাওয়া ছাড়া জামাত পাওয়া যাবে না।[আল-শারহুল মুমতি (২/১২১)]
যেহেতু মুয়াজ্জিন আসরের আযান দেয়ার আগে আপনি যোহরের প্রথম রাকাত নামায পড়েছেন সুতরাং আপনি ওয়াক্তমত নামায আদায় করেছেন।
দুই:
ঘুমন্ত ব্যক্তির ওজর গ্রহণযোগ্য। ঘুমন্ত ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগার পর নামায আদায় করা তার উপর ফরয হয়। আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি নামায পড়তে ভুলে গেছে কিংবা নামায না পড়ে ঘুমিয়ে গেছে এর কাফ্ফারা হল যখন তার স্মরণে পড়বে তখনি নামায আদায় করা।[সহিহ বুখারী (৫৭২) ও সহহি মুসলিম (৬৮৪)]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন: “ঘুমের ক্ষেত্রে অবহেলা হিসেবে ধর্তব্য নয়। অবহেলা হল- যে ব্যক্তি নামায পড়ে না; এমনকি অন্য ওয়াক্তের নামায হাযির হয়ে যায়। কারো এমন হয়ে গেলে সে যেন জেগে উঠার পর নামায আদায় করে নেয়।”[সহিহ মুসলিম (৬৮১)]
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।