রবিবার 21 জুমাদাল ছানী 1446 - 22 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

মোবাইল থেকে কুরআন পড়ার জন্য কি পবিত্রতা শর্ত?

প্রশ্ন

কিছু কিছু মোবাইলে কুরআন পড়ার জন্য অ্যাপ থাকে, যেটা থেকে যে কোনো সময়ে মোবাইলের স্ক্রীনে কুরআন পড়া যায়। মোবাইল থেকে কুরআন পড়ার আগে কি পবিত্রতার আবশ্যকতা আছে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

মোবাইলগুলোতে লিখিত বা রেকর্ডকৃত যে কুরআন আছে সেগুলো মুসহাফের হুকুমে পড়বে না। তাই পবিত্রতা ছাড়া সেগুলো স্পর্শ করা যাবে এবং এগুলো নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করা যাবে। কারণ মোবাইলে লিখিত কুরআন মুসহাফে লিখিত কুরআনের মত না। এগুলো এমন কিছু তরঙ্গ যেগুলো আসে; আবার চলে যায়। এগুলো স্থায়ী কোনো হরফ না। আর মোবাইলে কুরআন ছাড়া অন্যান্য জিনিসও রয়েছে।

শাইখ আব্দুর রহমান ইবনে নাসের আল-বার্‌রাককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: পবিত্রতা ছাড়া মোবাইল থেকে কুরআন পড়ার হুকুম কী?

তিনি হাফিযাহুল্লাহ উত্তরে বলেন:

“উত্তর হলো: সমস্ত প্রশংসা এক আল্লাহর জন্য, দরূদ ও সালাম এমন নবীর প্রতি, যার পরে কোনো নবী নেই। অতঃপর:

মুখস্থ কুরআন তেলাওয়াত করার জন্য ছোট অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার শর্ত নেই; শুধু বড় অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়া শর্ত। যদিও মুখস্থ কুরআন তেলাওয়াতের জন্যেও পবিত্র থাকা উত্তম। কারণ এটা আল্লাহর বাণী। আর আল্লাহর বাণীর পূর্ণ সম্মান হল কেবল পবিত্র অবস্থাতেই সেটা পাঠ করা।

আর মুসহাফ থেকে পড়ার ক্ষেত্রে শর্ত হলো মুসহাফ স্পর্শ করার জন্য পবিত্রতা শর্ত। কারণ প্রসিদ্ধ হাদীস আছে: “পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না”। এছাড়া সাহাবী-তাবেয়ীদের থেকেও এই মর্মে আছার (তাদের কথা, কাজ বা অনুমোদন) বর্ণিত হয়েছে। অধিকাংশ আলেম এই অভিমতের পক্ষে মত দিয়েছেন। তাদের অভিমত হলো: ওযুবিহীন ব্যক্তির জন্য মুসহাফ স্পর্শ করা নিষিদ্ধ; হোক সেটা তেলাওয়াতের জন্য স্পর্শ করা বা ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে।

এর থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মোবাইলসহ অন্যান্য যে সব যন্ত্রে কুরআন ধারণ করা হয় সেগুলো মুসহাফের হুকুমে পড়বে না। কারণ এই সব যন্ত্রে কুরআনের হরফের উপস্থিতি মুসহাফে হরফের উপস্থিতি থেকে ভিন্ন। হরফগুলো এসব যন্ত্রে পাঠযোগ্য ফরমেটে থাকে না; বরং তরঙ্গ আকারে কুরআন আছে। যখন চাওয়া হয় তখন তরঙ্গের সাহায্যে হরফগুলো গঠিত হয়ে স্ক্রীনে ভেসে উঠে। আবার অন্য কিছু চালু করলে হরফগুলো স্ক্রীন থেকে সরে যায়। তাই মোবাইল বা ক্যাসেটে কুরআন ধারণ করা হলে সেগুলো স্পর্শ করা বৈধ। অপবিত্র অবস্থায়ও সেগুলো থেকে কুরআন পড়া জায়েয। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ।”[নূরুল ইসলাম ওয়েবসাইট থেকে সংকলিত]

শাইখ সালিহ আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহকে প্রশ্ন করা হয়েছিল:

আমি কুরআন পড়ার ব্যাপারে আগ্রহী। সাধারণতঃ আমি আগেভাগে মসজিদে যাই। আমার সাথে আপডেট ভার্সনের মোবাইল আছে। যে মোবাইলে সম্পূর্ণ কুরআনের প্রোগ্রাম আছে। মাঝে মাঝে আমার ওযু থাকে না। তখনও যতটুকু পারি পড়ি। আমি কয়েক পারা পড়ি। মোবাইল থেকে কুরআন পড়ার ক্ষেত্রে আমার জন্য কি পবিত্রতা অর্জন করা আবশ্যক?

তিনি উত্তর দেন:

“এটা মানুষের মাঝে প্রকাশ পাওয়া বিলাসিতার অন্তর্ভুক্ত। আলহামদুলিল্লাহ, মসজিদগুলোতে মুসহাফের উন্নত ছাপা পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। মোবাইল থেকে পড়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি এমনটা (প্রশ্নের মত) হয়, তাহলে সেটা মুসহাফের হুকুমে পড়বে বলে আমরা মনে করি না।

মুসহাফ কেবল পবিত্র ব্যক্তিই স্পর্শ করে, যেমনটা হাদীস আছে: “পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ যেন কুরআন স্পর্শ না করে।” মোবাইল মুসহাফ অভিধায় পড়ে না।”[সমাপ্ত]

মোবাইল থেকে কুরআন পড়া ঋতুবতী নারীর জন্য সহজতা। এছাড়া যার পক্ষে কুরআন বহন করা অসম্ভব অথবা যে ব্যক্তি এমন স্থানে আছে যেখানে অযু করা কঠিন তার জন্যও

শিথিলতা। কারণ মোবাইলে পড়ার সময় স্পর্শ করার ক্ষেত্রে পবিত্রতার শর্ত নেই যেমনটা আগে উল্লেখ করা হয়েছে।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব