রবিবার 21 জুমাদাল ছানী 1446 - 22 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

নামায শুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলী

প্রশ্ন

নামায শুদ্ধ হওয়ার শর্ত কি কি?

আলহামদু লিল্লাহ।.

উসুলুল ফিকহ এর পরিভাষায় শর্ত হলো: “যার শূন্যতা শূন্যতাকে আবশ্যক করে; কিন্তু যার অস্তিত্ব অস্তিত্বকে আবশ্যক করে না।” তাই নামায শুদ্ধ হওয়ার শর্তগুলো হলো: যেগুলোর ওপর নামায শুদ্ধ হওয়া নির্ভর করে। অর্থাৎ যদি এই শর্তগুলোর কোন একটি বাদ পড়ে তাহলে নামায সহিহ নয়। সেগুলো হচ্ছে:

প্রথম শর্ত: নামাযের ওয়াক্ত বা সময় হওয়া। এটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। আলেমদের ইজমার ভিত্তিতে ওয়াক্ত প্রবেশের পূর্বে নামায আদায় করা সহিহ নয়। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের উপর অবশ্য কর্তব্য।[সূরা নিসা, আয়াত: ১০৩]

কুরআনে কারীমে নামাযের সময়সূচী এজমালিভাবে আল্লাহ্‌ তাআলা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন: أَقِمِ الصَّلاةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَى غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْآنَ الْفَجْرِ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُوداً  সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করুন এবং (কায়েম করুন) ফজরের কুরআন (সালাত)। নিশ্চয় ফজরের কুরআন (সালাত) উপস্থিতির সময়।[সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ৭৮] আয়াতে কারীমাতে لِدُلُوكِ الشَّمْسِ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- সূর্য মধ্যাকাশ থেকে হেলে পড়া। আর إِلَى غَسَقِ اللَّيْلِ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- মধ্যরাত হওয়া। মধ্যাহ্ণ থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সময়টুকু যোহর, আসর, মাগরিব ও এশা-এ চার ওয়াক্ত নামাযের সময়কে অন্তর্ভুক্ত করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সুন্নাহতে বিস্তারিতভাবে এ সময়সূচী বর্ণনা করেছেন। ইতিপূর্বে 9940 নং প্রশ্নোত্তরে সে ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়েছে।

দ্বিতীয় শর্ত: সতর ঢাকা। যে ব্যক্তি নামায পড়লেন; অথচ তার সতর উন্মুক্ত তার নামায সহিহ নয়। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: হে বনী আদম! প্রত্যেক সালাতের সময় তোমরা সুন্দর পোশাক গ্রহণ কর।[সূরা আরাফ, আয়াত: ৩১]

ইবনে আব্দুল বার্‌র (রহঃ) বলেন: যে ব্যক্তি নিজেকে আচ্ছাদিত করার মত পোশাক সংগ্রহের সাধ্য থাকা সত্ত্বেও পোশাক ত্যাগ করে উলঙ্গ হয়ে নামায পড়েছে; তার নামায বাতিল মর্মে আলেমদের ইজমা সংঘটিত হয়েছে।[সমাপ্ত]

নামাযীর সতরের স্তরভেদ রয়েছে:

১। লঘু সতর: এটি হচ্ছে সাত বছর থেকে দশ বছর বয়সী পুরুষের সতর। তার সতর হচ্ছে লজ্জাস্থানদ্বয়: সামনের লজ্ঞাস্থান ও পেছনের লজ্জাস্থান।

২। মধ্যম সতর: দশ বছর ও তদূর্ধ্ব বছর বয়সীর সতর: নাভী ও হাঁটুর মধ্যবর্তী স্থানটুকু।

৩। গুরু সতর: প্রাপ্ত বয়স্ক স্বাধীন নারীর নামাযের সতর: কেবল চেহারা ও হাতের কব্জিদ্বয় ছাড়া নারীর গোটা দেহ। আর পাদ্বয় প্রকাশ হওয়ার ব্যাপারে আলেমদের মতভেদ রয়েছে।

তৃতীয় ও চতুর্থ শর্ত: পবিত্রতা। পবিত্রতা দুই প্রকার: হাদাছ (নাপাক অবস্থা) থেকে পবিত্রতা এবং নাজাস (নাপাক বস্তু) থেকে পবিত্রতা।

১। গুরু হাদাছ ও লঘু হাদাছ থেকে পবিত্রতা। যে ব্যক্তি হাদাছগ্রস্ত (যে ব্যক্তির ওযু নেই) অবস্থায় নামায পড়ে আলেমদের ইজমার ভিত্তিতে তার নামায সঠিক নয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: তোমাদের কারো ওযু ভঙ্গ হলে; ওযু না-করা অবধি আল্লাহ্‌ তার নামায কবুল করেন না।[সহহি বুখারী (৬৯৫৪)]

২। নাজাস থেকে পবিত্রতা। যে ব্যক্তি জেনেশুনে, স্মরণ থাকা অবস্থায় কোন নাপাকি নিয়ে নামায পড়ে তার নামায সহিহ নয়। নামাযীর জন্য তিনটি স্থানের নাপাকি দূর করা আবশ্যক:

প্রথম স্থান: নিজ দেহ। তাই নামাযীর দেহে কোন নাপাকি থাকতে পারবে না। এর সপক্ষে প্রমাণ রয়েছে ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর হাদিসে তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন নিশ্চয় এ দুজনকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তবে কোন কবিরা গুনাহর কারণে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তাদের একজন চোখলখুরী করে বেড়াত। অপরজন পেশাব থেকে নিজেকে পবিত্র রাখত না...।[সহিহ মুসলিম (২৯২)]

দ্বিতীয় স্থান: পোশাক। এর সপক্ষে প্রমাণ রয়েছে আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) এর হাদিসে তিনি বলেন: একবার এক নারী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল: আমাদের কেউ যখন তার পোশাকে হায়েযগ্রস্ত হয় তখন সে কি করবে; সে ব্যাপারে অবহিত করুন। তিনি বললেন: খসে ফেলে দিবে। এরপর পানি দিয়ে ঘষে ধুয়ে ফেলবে এবং তাতে নামায পড়বে।[সহিহ বুখারী (২২৭)]

তৃতীয় স্থান: নামায পড়ার স্থান। এর সপক্ষে প্রমাণ রয়েছে আনাস বিন মালিক (রাঃ) এর হাদিসে তিনি বলেন: একবার এক বেদুঈন এসে মসজিদের এক প্রান্তে পেশাব করে দিল। লোকেরা তাকে ধমকালো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে নিষেধ করলেন। যখন সে পেশাব শেষ করল তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বড় এক বালতি পানি আনার ও পেশাবের উপর ঢেলে দেয়ার নির্দেশ দিলেন।[সহিহ বুখারী]

পঞ্চম শর্ত: ক্বিবলা অভিমুখী হওয়া। তাই যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কোন ফরয নামায ক্বিবলার দিক ব্যতীত অন্যদিকে ফিরে পড়বে তার নামায আলেমদের ইজমার ভিত্তিতে বাতিল। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: সুতরাং আপনি আপনার চেহারাকে মসজিদে হারামের দিকে ফেরান। তোমরা যেখানেই থাক না কেন তোমাদের চেহারাগুলোকে মসজিদে হারামের দিকে ফেরাও।[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৪৪]

এবং নামায অসঠিকভাবে আদায়কারী ব্যক্তিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: এরপর তুমি কিবলামুখী হবে এবং তাকবীর দিবে।[সহিহ বুখারী (৬৬৬৭)]

আরও জানতে দেখুন: 65853 নং প্রশ্নোত্তর।

ষষ্ঠ শর্ত: নিয়ত করা। যে ব্যক্তি নিয়ত ছাড়া নামায পড়ল; তার নামায বাতিল। দলিল হচ্ছে উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) এর বর্ণিত হাদিস: সকল আমল নিয়ত দ্বারা মূল্যায়িত হয়। প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করে সেটাই তার পাপ্য। আল্লাহ্‌ তাআলা নিয়তহীন কোন আমল কবুল করেন না।

উপরোল্লেখিত শর্তগুলো নামাযের সাথে খাস। এগুলোর সাথে প্রত্যেক ইবাদত শুদ্ধ হওয়ার জন্য সাধারণ শর্তগুলোও যোগ করতে হবে। সেগুলো হল: ইসলাম, বুদ্ধিমত্তা ও বুঝবান হওয়া।

সুতরাং পূর্বোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত নয়টি। এজমালিভাবে সেগুলো হচ্ছে: ইসলাম, আকল, বুঝবান হওয়া, অপবিত্রতা দূর করা, নাপাকি দূর করা, সতর ঢাকা, ওয়াক্ত প্রবেশ করা, কিবলামুখী হওয়া এবং নিয়ত করা।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব