বুধবার 2 যুলক্বদ 1446 - 30 এপ্রিল 2025
বাংলা

কাজ উদ্ধারের জন্য অর্থ প্রদান করা কখন ঘুষ হিসেবে গণ্য হবে; আর কখন গণ্য হবে না?

প্রশ্ন

আমি একটি কুরিয়ার কোম্পানিতে হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করি। সম্প্রতি আমি আবিষ্কার করেছি যে, আমি যে কোম্পানিতে কাজ করি, সেটি কিছু পণ্য খালাস করার জন্য কিছু কর্মচারীকে ঘুষ বা এ জাতীয় জিনিস দেয়। আমি এই কোম্পানিতে হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করি। তাই কোম্পানির পরিচালককে আমি এই অর্থ দিই যাতে করে তিনি কর্মীদেরকে ঘুষ হিসেবে দিতে পারেন। আমি এটি উদঘাটন করতে পেরেছি। আমার কি পাপ হবে? এ অবস্থায় আমার করণীয় কী?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

ঘুষ আদান-প্রদান জায়েয নেই। এটি কবীরা গুনাহসমূহের অন্তর্ভুক্ত। দলিল হলো: আহমদ (৬৭৯১) ও আবু দাউদ (৩৫৮০) বর্ণনা করেন: আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতাকে অভিশাপ দিয়েছেন।[শাইখ আলবানী ইরওয়াউল গালীল বইয়ে (২৬২১) এটিকে সহিহ বলে গণ্য করেছেন]

কিন্তু এর ব্যতিক্রম হলো:

১- যদি ব্যক্তি ঘুষ প্রদান করা ছাড়া নিজের অধিকার আদায় করতে না পারে। এমতাবস্থায় ঘুষ প্রদান করা জায়েয মর্মে আলেমরা উল্লেখ করেছেন। সেক্ষেত্রে ঘুষগ্রহীতার জন্য হারাম হবে; ঘুষদাতার জন্য নয়। ইতঃপূর্বে (70516) ও (72268) নং প্রশ্নের উত্তরে এ ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে।

তাই যদি অর্থ প্রদান করা ছাড়া চালান খালাস করা সম্ভব না হয় কিংবা না দিলে চালান খালাসে বিলম্ব হয় এবং মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়; এমতাবস্থায় অর্থ প্রদান করা জায়েয হবে; তবে গ্রহীতার জন্য হারাম।

২- নিজের উপর থেকে যুলুমকে প্রতিহত করা বা হ্রাস করার জন্য অর্থ প্রদান করা। এতে কোনো সমস্যা নেই।

৩- এমন ব্যক্তি বা অফিসকে অর্থ প্রদান করা যারা কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে খালাসের কাজ সম্পন্ন করে আনবে। এতেও সমস্যা নেই। এটি ঘুষ নয়, বরং ভাড়া।

দুই:

পরিচালক যা নিচ্ছেন তা যদি পূর্বোক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে পড়ে তাহলে সে কাজে অর্থ প্রদান করতে এবং তা নথিভুক্ত করতে কোনো আপত্তি নেই।

কিন্তু যদি প্রমাণিত হয় যে এটি ঘুষ; নিষিদ্ধ জিনিসপত্র খালাসের জন্য এটি প্রদান করা হয় অথবা এটি না দিয়ে কোনো ক্ষতিকর বিলম্ব ছাড়াই পণ্য খালাস করা সম্ভব অথবা উপরে বৈধতার যে রূপগুলো উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত না হয়ে ভিন্ন কোন রূপ হয় তাহলে এ বাবদ অর্থ প্রদান করা বা  সেটি নথিভুক্ত করা আপনার জন্য জায়েয হবে না। কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ 

“তোমরা সৎকাজ ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে পরস্পর সহযোগিতা করো, আর পাপ ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পর সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।”[সূরা আল-মায়েদা: ২]

আপনার উচিত পরিচালককে উপদেশ দেওয়া এবং তাকে বোঝানো যে ঘুষ আদান-প্রদান উ্ভয়টি হারাম, এই কাজে সাহায্য করাও হারাম। জেনে রাখুন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তাকে রক্ষা করেন এবং তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। যে তাঁকে আঁকড়ে ধরে আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ বাড়িয়ে দেন। সুতরাং সত্য জানতে পারলে মানুষের ভয়ে সত্য বলা থেকে যেন কোনো কিছু আপনাকে বাধা না দেয়।

ইমাম আহমদ (11030), তিরমিযী (2191) ও ইবনে মাজাহ (4007) আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সূত্রে বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বক্তৃতা দিতে দাঁড়িয়ে বলেন: “সাবধান! কেউ যখন কোন সত্য কথা জানবে, তখন তাকে মানুষের ভয় যেন সেই সত্য বলা থেকে বিরত না রাখে।”[হাদীসটি শাইখ আলবানী সহীহু ইবনে মাজাহ গ্রন্থে সহীহ বলে গণ্য করেছেন]

আল্লাহ আমাদেরকে এবং আপনাকে এমন কাজ করার তৌফিক দান করুন, যা তিনি পছন্দ করেন এবং যা তাকে সন্তুষ্ট করে।

আল্লাহ সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব