শুক্রবার 21 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 22 নভেম্বর 2024
বাংলা

যে ব্যক্তি জুমার নামাযের শেষ বৈঠক পাবে, তার করণীয় কী?

প্রশ্ন

কোনো মুসলিম যদি জুমার নামাযের শুধু শেষ বৈঠক পায়, সে কী করবে? যদি মুসলিমকে নামাযে আসতে বাধা দেয়া হয় কিংবা কিংবা তার ইচ্ছার বাহিরে কোন কারণে দেরী হয়ে যায়; যেমন: সে যে বাসে চড়েছিল সেটা অচল হয়ে গেল, এতে কি তার পাপ হবে? সে যে সমস্ত নেকী বা দোয়া কবুলের মুহূর্তগুলো বা অনুরূপ কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, সেগুলো কি পাবে না?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

ইমামের সাথে এক রাকাত পেলেই জুমার নামায পাওয়া হয়। এক রাকাত পেতে হলে ইমামের সাথে রুকু পেতে হবে। তাই কেউ যদি দ্বিতীয় রাকাতে ইমাম রুকু থেকে উঠার আগে নামাযে যোগ দিতে পারে, তাহলে তার নামায পাওয়া হল। এমতাবস্থায় ইমাম সালাম ফেরানোর পর সে তার নামায পরিপূর্ণ করবে। অর্থাৎ সে দাঁড়িয়ে যাবে এবং যে রাকাতটি বাকি আছে সেটি পড়ে নিবে।

আর যদি ইমাম দ্বিতীয় রাকাতে রুকু থেকে উঠার পর কেউ নামাযে যোগ দেয়, তাহলে তার জুমার নামায ছুটে গেল; সে জুমার নামায পেল না। সেক্ষেত্রে ঐ নামাযটিকে যোহরের নামায হিসেবে পড়তে হবে। অর্থাৎ ইমাম সালাম ফেরানোর পর দাঁড়িয়ে যাবে এবং তার নামাযটিকে যোহরের নামায হিসেবে চার রাকাতে পরিপূর্ণ করবে; জুমার নামায হিসেবে নয়। এটা অধিকাংশ আলেম তথা মালেক, শাফেয়ী ও আহমদ রাহিমাহুমুল্লাহুর মাযহাব। দেখুন: নববীর ‘আল-মাজমূ’ (৪/৫৫৮)। তারা এর পক্ষে তারা বেশ কিছু দলীল পেশ করেছেন; যথা:

১- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, যে ব্যক্তি নামাযের এক রাকাত পেল, সে নামায পেল।[বুখারী (৫৮০) ও মুসলিম (৬০৭)]।

২- নাসাঈ বর্ণনা করেন: আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কেউ যদি জুমা বা অন্য কোনো নামাযের এক রাকাত পায়, সে যেন এর সাথে আরেক রাকাত যোগ করে নেয়। এভাবে তার নামায পূর্ণ হয়ে যাবে।[আলবানী হাদীসটিকে তার ‘ইরওয়া’ বইয়ে (৬২২) সহীহ বলেছেন]

নিজ ইচ্ছার বাহিরের কোন ওজরের কারণে একজন মানুষ যদি নামায না পায়; যেমনটি প্রশ্নকারী প্রশ্নে বাস নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন কিংবা অনুরূপ কোনো ওজর; যেমন- ঘুম বা ভুলে যাওয়া; তাহলে তার কোনো পাপ হবে না। কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেন: তোমরা কোনো ভুল করে ফেললে তোমাদের কোনো পাপ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তরে দৃঢ় সংকল্প থাকলে (পাপ হবে)”[আহযাব: ৫] এমন ব্যক্তি ইচ্ছা করে নামায ছাড়েনি।

আরো কারণ হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: আল্লাহ আমার উম্মতের ভুল, বিস্মৃতি এবং বলপূর্বক যা করিয়ে নেওয়া হয়; তা ক্ষমা করে দিয়েছেন।[ইবনে মাজাহ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং শাইখ আলবানী তার ‘ইরওয়া’ বইয়ে (৮২) হাদীসটি সহীহ বলেছেন।]

এই ক্ষেত্রে যদি নামায পড়ার ব্যাপারে তার দৃঢ় সংকল্প থেকে থাকে; যদি না তার ওজরটি ঘটত; তাহলে সে পূর্ণ নেকী পাবে। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: সকল আমল নিয়ত দ্বারা মূল্যায়িত হয়। প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করে সেটাই তার পাপ্য।[বুখারী (১) ও মুসলিম (১৯০৭)]

আরো কারণ হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক যুদ্ধ থেকে ফেরার সময় সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, “মদীনায় এমন কিছু মানুষ আছে; যারা তোমরা যে পথ চলেছ ও যে উপতক্যা অতিক্রম করেছ এর নেকীতে তোমাদের সাথে অংশীদার। অসুস্থতা তাদেরকে (মদীনায়) আটকে রেখেছে।”[মুসলিম (১৯১১)]

আল্লাহ সর্বজ্ঞ।

সূত্র: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ