শনিবার 20 জুমাদাল ছানী 1446 - 21 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

কয়েক ওয়াক্তের নামায আদায় করার পর যে ব্যক্তি নিজের কাপড়ে মযি দেখতে পান

প্রশ্ন

ফজর, যোহর ও আসরের নামায আদায় করার পর আমি আমার আন্ডার ওয়্যারে মযির আলামত দেখতে পেলাম। মাগরিবের আগে আমি আমার পোশাক পরিবর্তন করেছি। এমতাবস্থায় আমি যে নামাযগুলো পড়েছি সেগুলো কি বাতিল?

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

মযি হলো এক প্রকার পিচ্ছিল পানি যা স্বভাবতঃ যৌন উত্তেজনা জেগে উঠলে বের হয়। এটি নাপাকি ও ওযু ভঙ্গকারী। কিন্তু এর নাপাকি হালকা পর্যায়ের। এর পবিত্রতার ক্ষেত্রে লজ্জাস্থানটি ধৌত করা ও কাপড়ে পানি ছিটিয়ে দেয়া যথেষ্ট।

দেখুন: 99507 নং প্রশ্নোত্তর।

দুই:

আপনার ফজর, যোহর ও আসরের নামায ইনশাআল্লাহ্‌ সঠিক; পুনরায় পড়া আবশ্যক নয়; দুই কারণে:

১। যেহেতু আপনি মযি বের হওয়ার সময় কখন সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন। এমন সম্ভাবনাও রয়েছে যে, এটি আসরের পরে বের হয়েছে। এমন সম্ভাবনা থাকায়: মূল অবস্থা হলো পূর্বের নামাযগুলো শুদ্ধ হওয়া। যেহেতু আলেমদের নিকট একটি মূলনীতি হলো: যদি কেউ ইবাদতটি সম্পন্ন করার পর সন্দেহে পড়ে যে, ইবাদতটি কি সহিহ হয়েছে; নাকি হয়নি; তাহলে এমন সন্দেহের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করা। মুসলিম ব্যক্তি মূল অবস্থার উপর নির্ভর করবেন। মূল অবস্থা হলো: ইবাদতটি সঠিক হওয়া যতক্ষণ পর্যন্ত না ইবাদতটিকে বাতিলকারী বিষয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া না যায়।

২। যে ব্যক্তি নাপাকি থাকার কথা না-জেনে নামায পড়ে ফেলেছে কিংবা জানার পর ভুলে গেছে; অগ্রগণ্য মতানুযায়ী তার নামায সহিহ। ইমাম নববী এই অভিমতকে অধিকাংশ আলেমের অভিমত হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং নিজে এই অভিমতকে নির্বাচন করেছেন।[আল-মাজমু (৩/১৬৩)]

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

গ্রন্থকারের বক্তব্য: “ভুলে গেছে”: অর্থাৎ নাপাকি যে লেগেছে সেটি ভুলে গেছে এবং সালাম ফেরানোর পূর্বে তার মনে পড়েনি; তাহলে গ্রন্থকারের মতানুযায়ী তাকে পুনরায় নামায পড়তে হবে। যেহেতু ‘নাপাকি দূর করা’ শীর্ষক নামাযের শর্তটি এতে লঙ্ঘিত হয়েছে। তাই এ ব্যক্তির অবস্থা এমন যে ব্যক্তি ওযু ভাঙ্গার কথা ভুলে গিয়ে ওযু ছাড়া নামায পড়ে ফেলেছে এবং ঐ ব্যক্তির মত যে ব্যক্তি নাপাকি ধোয়ার কথা ভুলে গিয়েছিল।

এ সবকটি মাসয়ালায় অগ্রগণ্য অভিমত হলো: পুনরায় নামায পড়া তার উপর আবশ্যক নয়; হোক সে ব্যক্তি নাপাকি লাগার কথা ভুলে গেছেন কিংবা নাপাকি ধোয়ার কথা ভুলে গেছেন কিংবা নাপাকি যে লেগেছে সেটাই জানত না; কিংবা সেগুলো যে, নাপাকি সেটাই জানত না; কিংবা নাপাকির হুকুম জানত না; কিংবা নাপাকিটা কি নামাযের আগের, না পরের সেটা জানত না।

এর সপক্ষে দলিল হলো সেই মহান সাধারণ মূলনীতি যা আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের জন্য প্রণয়ন করেছেন: আল্লাহ্‌ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কাজ চাপিয়ে দেন না। সে যা (ভাল) উপার্জন করে তার সুফল সে পায়, আবার যা (মন্দ) উপার্জন করে তার কুফলও সে ভোগ করে। হে আমাদের প্রভু! আমরা যদি ভুলে যাই কিংবা ভুল করি তাহলে আমাদেরকে শাস্তি দিবেন না।[সূরা বাক্বারা, ২: ২৮৬] এই হারাম কাজ যে লোক করেছে সে অজ্ঞ ছিল কিংবা বিস্মৃতিগ্রস্ত ছিল। এমন লোককে পাকড়াও করা থেকে আল্লাহ্‌ নিস্তার দিয়েছেন। সুতরাং তার উপর কোন কিছু আরোপ করার বাকী নেই।

এই মাসয়ালায় খাস একটি দলিলও রয়েছে। সেটি হলো যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন দুইটি জুতা পরে নামায পড়লেন যে জুতাতে ময়লা ছিল এবং জিব্রাইল আলাইহিস সালাম তাঁকে বিষয়টি অবহিত করলেন তখন তিনি নতুনভাবে নামায শুরু করলেন না। যদি এটি নামাযের প্রথম অংশকে বাতিল না করে থাকে তাহলে অবশিষ্ট নামাযকেও বাতিল করবে না।[আল-শারহুল মুমতি (২/২৩২) থেকে সমাপ্ত]

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব