বৃহস্পতিবার 20 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 21 নভেম্বর 2024
বাংলা

দুই মসজিদ কাছাকাছি; দ্বিতীয়টিতে মুসল্লি কম বা নাই বললে চলে; এমতাবস্থায় কোন মসজিদে নামায পড়বেন?

প্রশ্ন

আমাদের এলাকাতে কাছাকাছি দুটো মসজিদ রয়েছে। একটি মসজিদ মুসল্লিতে ভরপুর। অপরটিতে মুসল্লি নাই; এমন কি কখনও কখনও সেই মসজিদ খোলা হয় না। এমতাবস্থায় কোনটিতে নামায পড়া উত্তম: যে মসজিদে মুসল্লি ভরপুর; নাকি দ্বিতীয় মসজিদটিকে আবাদ করা? দ্বিতীয়ত: বারাকাল্লাহু ফিক; যে মসজিদটি মুসল্লিতে ভরপুর সেই মসজিদের ইমাম সুন্নাহর পাবন্দি নন। তিনি টাকনুর নীচে কাপড় পরেন। তিনি সুন্নাহকে গুরুত্ব দেন না। পক্ষান্তরে, অন্য মসজিদের ইমাম সাধ্যানুযায়ী এক রকম সুন্নাহ্‌র অনুসারী। আশা করব আপনারা বিষয়টি পরিস্কার করবেন যে, কোন মসজিদটিতে নামায পড়া উত্তম?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

মসজিদের বিস্তার ও মসজিদ বাড়া; এমনকি সেটা এক মহল্লায় হলেও এটি কল্যাণের আলামত। এটি মানুষকে আল্লাহ্‌র ঘরে নামায আদায় করতে উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু তারপরেও আমরা কিছু বিষয়ে সতর্ক করছি:

১। মসজিদগুলো যেন অতি বেশি কাছাকাছি স্থানে নির্মাণ করা না হয়; যাতে করে এটি মুসলমানদেরকে বিভেদ-বিচ্ছেদের দিকে ধাবিত না করে। হতে পারে এ মসজিদগুলো নির্মাণে কিছু অপব্যয় হবে, বাহাদুরি হবে এবং মুসল্লি না থাকার কারণে কোন কোনটি কখনও কখনও বন্ধ থাকতে পারে।

২। উভয়টিতে জুমার নামায আদায় না করা। বরং উভয়টির মধ্যে যেটি অপেক্ষাকৃত বড় সেটিতে জুমার নামায আদায় করা; যাতে করে মুসল্লিরা সবাই এক মসজিদে একত্রিত হতে পারে।

৩। যেই স্থানগুলোতে আদৌ মসজিদ নাই সেখানে মসজিদ নির্মাণ করা; যেখানে মসজিদ আছে কিন্তু মুসল্লিদের স্থান সংকুলান হয় না সেখানে মসজিদ নির্মাণ করার চেয়ে উত্তম।

দুই:

আপনি যে পরিস্থিতি উল্লেখ করেছেন সেগুলোর আলোকে আমরা মনে করি প্রথম মসজিদে নামায পড়াই উত্তম; নিম্নোক্ত কারণে:

১. মুসল্লিরা সবাই এক মসজিদে একত্রিত হওয়া; এর মাধ্যমে তাদের মধ্যে সম্প্রীতি বাস্তবায়িত হবে ও সম্পর্ক বাড়বে। তারা তাদের মধ্যে কে অসুস্থ জানতে পারবে এবং তাকে দেখতে যেতে পারবে। যে দরিদ্র তাকে সাহায্য করতে পারবে। যে মারা গেছে তার জানাযার নামায পড়তে পারবে এবং তার পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে পারবে।

২. যেই মসজিদে এলাকার সব মানুষ নামায পড়ে; এটি তাদেরকে তা’লীম দেয়া ও ওয়াজ করার জন্য সহায়ক; তারা যদি একাধিক স্থানে বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকে সেটা থেকে। কেননা কোন আলেম তাদেরকে শিক্ষা দিতে এলে, কোন ওয়ায়েজ তাদেরকে ওয়াজ করতে এলে; মানুষ যদি সবাই এক স্থানে একত্রিত হয় তাহলে কল্যাণ ও উপকার তাদের সকলের কাছেই পৌঁছে।

৩। নামাযের জামাতে মুসল্লির সংখ্যা যত বেশি হবে সেটি আল্লাহ্‌র কাছে তত বেশি প্রিয়।

উবাই বিন কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয় কোন ব্যক্তির অন্য একজনের সাথে নামায আদায় করা একা নামায আদায় করার চেয়ে অধিক সওয়াবপূর্ণ এবং অন্য দুই জনের সাথে নামায আদায় করা একজনের সাথে নামায আদায় করার চেয়ে অধিক সওয়াবপূর্ণ। যত বেশি সংখ্যা হবে ততবেশি আল্লাহ্‌ তাআলার কাছে প্রিয়।[সুনানে আবু দাউদ (৫৫৪), সুনানে নাসাঈ (৮৪৩); আলবানী ‘সহিহ আবু দাউদ’-এ হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]

শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উছাইমীন বলেন:

“যদি ধরে নেয়া হোক: এমন দুটি মসজিদ আছে যে দুটির একটাতে অন্যটির চেয়ে অধিক মুসল্লি হয়; সেক্ষেত্রে উত্তম হলো অধিক সংখ্যকের মসজিদটিতে যাওয়া। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয় কোন ব্যক্তির অন্য একজনের সাথে নামায আদায় করা একা নামায আদায় করার চেয়ে অধিক সওয়াবপূর্ণ।

এটি সাধারণ। তাই যদি এমন দুইটি মসজিদ থাকে একটিতে অন্যটির তুলনায় মানুষ বেশি হয় তাহলে উত্তম হলো: বেশি মানুষের মসজিদে নামায আদায় করা।[সমাপ্ত][আস-শারহুল মুমতি আলা যাদিল মুসতানক্বি (৪/১৫০, ১৫১)]

শাইখ আরও বলেন:

“যে ব্যক্তি সীমানাবর্তী নয় তার জন্য এমন মসজিদে নামায পড়া উত্তম যেখানে সে উপস্থিত হলে জামাত অনুষ্ঠিত হয়; আর সে উপস্থিত না হলে জামাত অনুষ্ঠিত হয় না। এর উদাহরণ হচ্ছে: যদি এমন কোন মসজিদ থাকে যেখানে লোকেরা নামায আদায় করে; তবে সেখানে এমন একজন লোক আছে যিনি হাযির হলে ইমাম হন এবং জামাত অনুষ্ঠিত হয়। আর তিনি উপস্থিত না হলে লোকেরা বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়; এই লোকের জন্য মসজিদকে আবাদ করার নিমিত্তে এই মসজিদে নামায পড়া উত্তম। কেননা তিনি হাযির না হলে মসজিদ বিরান হয়ে পড়ে। মসজিদ বিরান হওয়া অনুচিত। এই লোকের এই মসজিদে নামায পড়া অনেক মানুষ যেই মসজিদে নামায পড়ে সেখানে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম।

তবে একটি শর্ত প্রযোজ্য আর হলো: মসজিদটি অধিক মুসল্লি সমাগমের মসজিদের কাছাকাছি না হওয়া। কেননা বলা হতে পারে: সকল মুসলমান এক মসজিদে একত্রিত হওয়াই উত্তম এবং বিচ্ছিন্নভাবে নামায পড়ার চেয়ে এটাই উত্তম। যদি ধরে নেয়া হয় যে, এই মসজিদ পুরাতন; এখানে পাঁচজন বা দশজন মুসল্লি হাজির হয়। এর পার্শ্বে আরেকটি মসজিদে অনেক মানুষ হাযির হয়। এবং পুরাতন মসজিদের মুসল্লিদের উপর ঐ মসজিদে যাওয়া কষ্টকর হয় না; তাহলে তারা অন্য মসজিদটিতে যাবে। এবং কেউ হয়তো এটাও বলতে পারেন যে, নিশ্চয় কর্তব্য হলো অপর মসজিদটির সাথে যুক্ত করে সবাই মিলে সেখানে  একত্রিত হওয়া। কেননা মানুষ যত বেশি তত উত্তম।”[সমাপ্ত][আল-শারহুল মুমতি (৪/১৫০)]

আপনাদের কর্তব্য এই ইমামকে নসিহত করতে থাকা। আশা করি আল্লাহ্‌ তাকে সুন্নাহ অনুসরণের ও সুন্নাহ্‌র প্রতি আগ্রহী হওয়ার তাওফিক দিবেন।

সবশেষে... যে মসজিদের মুসল্লি সংখ্যা কম সেই মসজিদে আপনাদেরকে নামায পড়ার ফতোয়া দেয়ার আমাদের সুযোগ থাকত যদি সেই মসজিদবাসী সুন্নাহকে অপছন্দ করা, সুন্নাহর বিপক্ষে ও সুন্নাহপন্থীদের বিপক্ষে লড়াই করা জন্য পরিচিত হত এবং আপনারা তাদেরকে উপদেশ দেয়ার দায়িত্ব পালন করে কোন ফলাফল না পেতেন।

এমনটা হলে এই মসজিদে আপনারা নামায আদায় করা, সুন্নাহ্‌ প্রতিষ্ঠিত করা এবং মানুষকে সুন্নাহ্‌ শিক্ষা দেয়া উত্তম; এতে কোন সন্দেহ নেই।

কিন্তু যেহেতু বিষয়টি এই পর্যায়ে পৌঁছে নাই; সুতরাং আমরা মনে করি যে, আপনারা সকলে এক মসজিদে একত্রিত হবেন।

আমরা আল্লাহ্‌র কাছে আপনাদের জন্য তাওফিক ও হেদায়েতের দোয়া করছি।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব