বৃহস্পতিবার 18 রমজান 1445 - 28 মার্চ 2024
বাংলা

নিজের জন্মদিন ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিনে রোযা রাখা

প্রশ্ন

প্রশ্ন: সহিহ মুসলিম, সুনানে নাসাঈ ও সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যখন সোমবারে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তখন তিনি বলেন: “এটি এমন দিন যে দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি...”এ হাদিসের ভিত্তিতে কোন ব্যক্তির জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিনে রোযা রাখা জায়েয হবে কি? অনুরূপভাবে নিজের জন্মদিনে রোযা রাখা জায়েয হবে কি? আশা করি বিষয়টি পরিষ্কার করবেন।

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

সহিহ মুসলিমে আবু কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সোমবারে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন: “এটি এমন দিন যে দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং যেদিন আমার ওপর ওহি নাযিল হয়”।

ইমাম তিরমিযি (রহঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “প্রতি সোমবারে ও বৃহস্পতিবারে আমলনামা পেশ করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি আমি রোযা রেখেছি এমতাবস্থায় যেন আমার আমলনামা উপস্থাপন করা হয়”[তিরমিযি হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন। আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘সহিহ’ আখ্যায়িত করেছেন]

পূর্বোক্ত হাদিস থেকে জানা গেল যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবার তাঁর জন্মদিন হওয়ার কারণে যেমন রোযা রেখেছেন তেমনি এ দিনটির মর্যাদার কারণেও রোযা রেখেছিলেন। কেননা এ দিনে আল্লাহ তাঁর ওপর ওহী নাযিল করেছেন। এ দিনে তাঁর আমলনামা আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোযা থাকা অবস্থায় তাঁর আমলনামা পেশ হওয়া চাইতেন। এজন্য ঐ দিনে রোযা রাখার অনেকগুলো কারণের মধ্যে ঐ দিনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম হওয়াটাও একটি কারণ।

সুতরাং যে ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মত সোমবারে রোযা রাখতে চান, এর মাধ্যমে ক্ষমার আশা করেন, আল্লাহ তার বান্দাদেরকে যে সব নেয়ামত দিয়েছেন সেগুলোর শুকরিয়া আদায় করতে চান; যে নেয়ামতগুলোর মধ্যে সেরা নেয়ামত হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম ও তাঁর নবুয়ত এবং সেই দিনে ক্ষমাপ্রার্থীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রত্যাশা করেন— তাহলে এটি একটি ভাল আমল এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে, বিশেষ কোন সপ্তাহে এ আমলটি করা অন্য সপ্তাহে না করা এবং বিশেষ কোন মাসে এ আমলটি করা অন্য মাসে না করা— এমনটি যেন না হয়। বরং ব্যক্তি তার সাধ্যানুযায়ী সবসময় এটি করবে।

আর মিলাদুন্নবী পালনের উদ্দেশ্যে বছরের বিশেষ একটি দিনে এ আমলটি করা— এটি বিদআত ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহর খেলাফ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবারে রোযা রেখেছেন। অথচ মিলাদুন্নবী পালনের নির্দিষ্ট এ দিনটি সোমবারেও পড়তে পারে; আবার সপ্তাহের অন্য কোন দিনও হতে পারে।

মিলাদুন্নবী পালনের হুকুম ও এ সম্পর্কে জানতে পড়ুন 13810 নং ও 70317 নং প্রশ্নোত্তর।

দুই:

বর্তমানে সাধারণ মানুষের মাঝে ‘জন্মদিন’ পালনের নামে বিশেষ দিন উদযাপনের যে প্রথা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে— এটি বিদআত ও শরিয়ত বিরোধী। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা ছাড়া মুসলমানদের আর কোন উৎসব (দিন পালন) নেই। ইতিপূর্বে একাধিক প্রশ্নোত্তরে সে বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। পড়ুন 26804 নং ও 9485নং প্রশ্নোত্তর।

এছাড়া যে নবী হচ্ছেন— প্রকৃত নেয়ামত ও সকল মানুষের জন্য রহমত, যাঁর ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি”[সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭], যিনি হচ্ছেন সকল মানুষের জন্য কল্যাণের পথ উন্মোচনকারী তাঁর জন্মদিন এর সাথে অন্য মানুষের জন্মদিবস বা মৃত্যুদিবসের তুলনা কিভাবে চলে?

তাছাড়া তাঁর সাহাবীগণ ও তাদের পরবর্তী সলফে সালেহীনের কেউ কি এমন কিছু পালন করেছেন?

বরঞ্চ সলফে সালেহীন ও পূর্ববর্তী আলেমদের কেউ এ কথা বলেছেন বলে জানা যায় না যে, সপ্তাহের বিশেষ একটি দিনে, কিংবা মাসের বিশেষ একটি দিনে, কিংবা বছরের বিশেষ একটি দিনে রোযা রাখা কিংবা সে দিনটি উদযাপন করা শরিয়তসম্মত; যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সপ্তাহের যে বারটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন সেই বারে অর্থাৎ সোমবারে রোযা রাখতেন। যদি এটা শরিয়তসম্মত আমল হত তাহলে পূর্ববর্তী আলেমগণ ও নেকীর কাজে অগ্রগামী ব্যক্তিগণ এ দিনটি পালন করতেন। যখন তাঁরা সেটা করেননি কাজেই জানা গেল যে, এটি নব-প্রচলিত; এটি পালন করা যাবে না।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব