সোমবার 29 শাওয়াল 1446 - 28 এপ্রিল 2025
বাংলা

নির্মাণ সামগ্রীর মালিক হওয়ার জন্য সঠিক মুরাবাহার শর্তাবলি

প্রশ্ন

মুরাবাহা বিক্রয় পদ্ধতি সম্পর্কে আমার হালকা কিছু জানাশোনা আছে। আপনার কাছে আশা করছি, আপনি বিষয়টিকে এভাবে স্পষ্ট করে দিবেন যাতে করে আমরা হারাম থেকে বিরত থাকতে পারি।

আমি একটি কোম্পানিতে চাকুরি করি। আমাদের এখানে মুরাবাহা পদ্ধতি চালু আছে। আমি একটি বাড়ি বানাতে চাই। সে জন্য মুরাবাহা পদ্ধতিতে ঋণের আবেদন করেছি। এ সংক্রান্ত আমার কিছু জানার আছে:

১- কোম্পানি যদি একজন নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসায়ীর সাথে চুক্তি করে তাহলেই কি যথেষ্ট হবে; নাকি সে সামগ্রীগুলো তার কাছ থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেতে হবে?

২- বর্তমানে আমাদের এখানে নির্মাণ সামগ্রী খুবই দামী। যে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোম্পানি নির্মাণ সামগ্রী ক্রয় করেছে ঋণ ইস্যু হওয়ার পর আমি কি ঐ ব্যবসায়ীকে দিরহামগুলো তার কাছে রেখে দিতে বলতে পারি যতদিন না নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য হ্রাস পায়? তাছাড়া বাড়ীর কাজে সময় দেয়ার জন্য আমি চাই ছুটি শুরু হোক।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

মুরাবাহা বিক্রয়ের উদাহরণ হলো: আপনি একটি কোম্পানি বা ব্যাংকের সাথে কোন নির্দিষ্ট পণ্য কেনার জন্য চুক্তি করলেন। হতে পারে সেটি গাড়ি বা নির্মাণ সামগ্রী। আপনি ঐ কোম্পানিকে প্রতিশ্রুতি দিবেন যে কোম্পানি ঐ পণ্যটি কিনে সেটার মালিক হলে আপনি কোম্পানির কাছ থেকে নির্দিষ্ট লাভে সেটি কিনবেন। মুরাবাহা বিক্রিতে কোনো ঋণ নেই। এই লেনদেনকে ঋণ নাম দেওয়া ভুল। তবে যদি মুরাহাবটি বাতিল গণ্য হয় তাহলে ভিন্ন কথা। সেটা ঐ ক্ষেত্রে কোম্পানি যদি নিজের জন্য পণ্যটি না কিনে, বরং কাস্টমারকে অর্থায়ন করে, মানে অর্থটি সরাসরি তার হাতে দিয়ে দেয়; তাহলে এটি ঋণ। এবং এটি হারাম ঋণ। কারণ কোম্পানি তার কাস্টমারের কাছে ঋণের সাথে আরও অতিরিক্ত অর্থ দাবী করবে।

সঠিক মুরাবাহা নিম্নোক্ত ধাপসমূহে সম্পাদিত হয়:

১- আপনি যে পণ্যটির মালিক হতে চান সেটি কোম্পানিকে জানানো।

২- কোম্পানি সেই পণ্যটি নিজের জন্য ক্রয় করা।

৩- কোম্পানি পণ্যটি হস্তগত করে ব্যবসায়ীর দোকান থেকে স্থানান্তরিত করা। হস্তগত করার আগে কাস্টমারের কাছে পণ্যটি বিক্রি করা জায়েয নেই।

৪- হস্তগত করে নিজ আয়ত্তে নেওয়ার পর কোম্পানি কাস্টমারের কাছে পণ্যটি বিক্রি করা।

৫- কোম্পানি আপনার কাছে পণ্যটি বিক্রি করার পর আপনি চাই্লে সেই পণ্য বাড়ি নির্মাণে ব্যবহার করতে পারবেন। আবার চাইলে বাজারে বিক্রি করে নগদ অর্থও সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে শর্ত হলো আপনি এমন কারো কাছে বা পক্ষের কাছে বিক্রি করবেন যার সাথে কোম্পানির বা কোম্পানির কাছে বিক্রয়কারীর কোনো সম্পর্ক নেই। আরো শর্ত হলো: আপনি নিজেই বিক্রি করবেন। যে কোম্পানি আপনার কাছে বিক্রি করেছে, তাকে আপনার পক্ষ থেকে বিক্রি করার জন্য এজেন্ট বানানো জায়েয নেই।

এই শর্তাবলি পাওয়া গেলে মুরাবাহা পদ্ধতির বিক্রয় সঠিক হবে।

কোম্পানিকে যে পণ্যটি হস্তগত করে বিক্রেতার দোকান থেকে সরাতে হবে, সেটির প্রমাণ হলো: আহমদ (১৫৩৯৯) ও নাসাঈ (৪৬১৩)-র বর্ণিত হাদিস: হাকীম ইবনে হিযাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমি বেশ কিছু জিনিসপত্র ক্রয়-বিক্রয় করি। এর মাঝে কোনগুলো আমার জন্য হালাল আর কোনগুলো হারাম হবে? তিনি বলেন: “তুমি কিছু ক্রয় করলে হস্তগত না করার পূর্বে সেটি বিক্রয় করবে না।”[শাইখ আলবানী সহীহুল জামে গ্রন্থে (৩৪২) এটিকে সহীহ বলেছেন]

দারাকুত্বনী ও আবু দাউদ (৩৪৯৯) যাইদ ইবনু সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্রয় করার স্থানে পণ্য বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন যতক্ষণ না ক্রেতা সেটিকে তার আয়ত্তে নিয়ে যায়।[হাদীসটি ইবনে হিব্বান ও হাকেম সহিহ বলেছেন, আর শাইখ আলবানী সহিহু আবি দাউদে এটিকে হাসান বলেছেন]

সহিহ বুখারী ও মুসলিমে আছে: ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি কোনো খাবার ক্রয় করবে, সে যেন সেটিকে পুরোপুরি করায়ত্তে না এনে বিক্রি না করে।”[হাদীসটি বুখারী (২১৩২) ও মুসলিম (১৫২৫) বর্ণনা করেন] তিনি আরো যুক্ত করেন: ইবনে আব্বাস বলেন: আমি মনে করি সকল কিছুই এ রকম। অর্থাৎ খাদ্য ও অন্য কিছুর মাঝে এতে কোনো পার্থক্য নেই।

দুই:

আপনার সাথে নির্মাণ সামগ্রী বিক্রেতা ব্যবসায়ীর কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং মূল্য হ্রাস পাওয়া অবধি আপনি তাকে দিরহাম সংরক্ষণ করতে বলতে পারবেন না। কারণ সঠিক মুরাবাহায় (যেমনটি ইতঃপূর্বে বলা হয়েছে) অবশ্যই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোম্পানির ক্রয় সম্পন্ন হবে। কোম্পানি পণ্য ক্রয় করে করায়ত্তে নিয়ে আসার পর কোম্পানি থেকে পণ্যটি ক্রয় করার সুযোগ আপনি পাবেন।

যদি নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বেশি হয় তাহলে মূল্য হ্রাস হওয়া পর্যন্ত আপনি অপেক্ষা করুন। তারপর মুরাবাহার জন্য আবেদন করুন।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব