রবিবার 21 জুমাদাল ছানী 1446 - 22 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

দশদিনের বদলে দশ রাত্রি উল্লেখ করার প্রজ্ঞাপূর্ণ কারণ কী?

প্রশ্ন

আমার জনৈক আত্মীয়ের মনে এ প্রশ্নটির উদ্রেক হয়েছে যে, আল্লাহ্‌ তাআলার বাণীতে: "দশরাত্রি" উল্লেখ করার প্রজ্ঞাপূর্ণ কারণ কী? অথচ যিলহজ্জের দশদিনের ফযিলত দিবাভাগেই ঘটে থাকে; রাত্রিবেলায় নয়। তবে নিঃসন্দেহে আল্লাহ্‌র রয়েছে পরিপূর্ণ প্রজ্ঞা।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: وَالْفَجْرِ وَلَيَالٍ عَشْرٍ "শপথ ফজরের। শপথ দশরাত্রির।"[সূরা আল-ফাজর (১০২)] আলেমদের মাঝে মতভেদ ঘটেছে যে, শপথকৃত দশ দ্বারা উদ্দেশ্য কী:

১। জমহুর আলেমের মতে, সেগুলো যিলহজ্জের দশদিন। বরং ইবনে জারীর (রহঃ) এই মর্মে ইজমা (ঐকমত্য) নকল করে বলেছেন যে: "সেগুলো হচ্ছে— যিলহজ্জের দশরাত্রি; তা'বীলকারগণের (তাফসিরকারগণের) এই মর্মে ইজমা করার দলিলের ভিত্তিতে।"[তাফসীরে তাবারী (৭/৫১৪) থেকে সংকলিত]

ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন: "দশরাত্রি: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে যিলহজ্জ মাসের দশদিন; যেমনটি বলেছেন ইবনে আব্বাস (রাঃ), ইবনুয যুবায়ের ও মুজাহিদ প্রমুখ পূর্বসূরি ও উত্তরসূরি আলেমগণ।"[তাফসিরে ইবনে কাছির (৪/৫৩৫)]

এখানে একটি প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। সেটি হল: দিনগুলোকে রাত বলে উল্লেখ করার প্রজ্ঞাপূর্ণ কারণ কী?

এ প্রশ্নের উত্তর নিম্নোক্তভাবে দেওয়া যেতে পারে:

এখানে দিনগুলো সম্পর্কে রাত শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যেহেতু আরবী ভাষায় প্রশস্ততা রয়েছে। কখনও কখনও রাত শব্দ উল্লেখ করে দিন উদ্দেশ্য করা হয় এবং দিন শব্দ ব্যবহার করে রাত উদ্দেশ্য করা হয়।

তবে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীনদের মুখে অধিক ব্যবহার হল: রাত শব্দকে দিন অর্থে ব্যবহার করা। যেমন তাদের কথার মধ্যে এসেছে: صمنا خمسا (আমরা পাঁচ রাত রোযা রেখেছি)। যদিও রোযা দিনের বেলায় রাখা হয়। আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

বেশ কিছু আলেম এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছে ইবনুল আরাবী 'আহকামুল কুরআন' গ্রন্থে (৪/৩৩৪) এবং ইবনে রজব 'লাতায়েফুল মাআরিফ' গ্রন্থে (৪৭০)।

২। কিছু কিছু আলেমের মতে এবং সেটিও ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত: এখানে দশরাত দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে— রমযান মাসের শেষ দশরাত্রি। তারা বলেন: যেহেতু রমযানের শেষ দশরাত্রির মধ্যে লাইলাতুল ক্বদর রয়েছে। যে রাতের ব্যাপারে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন: "লাইলাতুল ক্বদর (ক্বদরের রাত) হাজার মাসের চেয়ে উত্তম"। তিনি আরও বলেন: “নিশ্চয় আমরা একে (এই কুরআন) নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয়ই আমরা সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ নির্দেশ জারী করা হয়।”[সূরা দুখান, ৪৪:৩-৪] 

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) এ মতকে নির্বাচন করেছেন; কেননা আয়াতের বাহ্যিকতার সাথে এটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ।

দেখুন: শাইখ উছাইমীনের 'তাফসিরে জুয আম্মা'

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব