রবিবার 21 জুমাদাল ছানী 1446 - 22 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

কোন আচরণ বা কথা ইসলামকে নিয়ে বিদ্রূপের পর্যায়ে গণ্য হবে এ সংক্রান্ত মূলনীতি

163627

প্রকাশকাল : 05-12-2022

পঠিত : 11425

প্রশ্ন

 আমরা কিভাবে ইসলাম নিয়ে বিদ্রূপ করা আচরণ ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য করব? কোন ব্যক্তি যদি এ ধরনের কোন কিছু শুনে কিংবা দেখে; কিন্তু প্রতিবাদ করতে না পেরে হাসে এর হুকুম কি? কখনো কখনো আমার সামনে এমন কিছু ঘটে অথবা আমার মনে ইসলাম সম্পর্কে এমন কিছু উদয় হয় যাতে আমার হাসি আসে। কিন্তু পরক্ষণেই আমি সচেতন হয়ে যাই যে, আমার হাসাটা উচিত হয়নি। আমার এ হাসাটা কি ইসলামকে বিদ্রূপ করার পর্যায়ে পড়বে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

ইসলাম নিয়ে বিদ্রূপ করা কবিরা গুনাহ এবং আল্লাহর সীমারেখার লঙ্ঘন। এটি কুফরের গর্ত; যে গর্তে না জেনে না বুঝে অনেক জাহেল ও মূর্খ লোক পড়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন: “মুনাফেকরা এ ভয়ে থাকে যে, না জানি তাদের সম্পর্কে এমন এক সূরা নাযিল হয়যা ওদের অন্তরের গোপন বিষয় ব্যক্ত করে দিবে। বলুন, তোমরা বিদ্রূপ করতে থাক; তোমরা যে ভয় করছ নিশ্চয় আল্লাহ তা প্রকাশ করে দিবেন। আর আপনি তাদেরকে প্রশ্ন করলে অবশ্যই তারা বলবে, ‘আমরা তো আলাপ-আলোচনা ও খেল-তামাশা করছিলাম’। বলুন, ‘তোমরা কি আল্লাহ্‌, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলকে বিদ্রূপ করছিলে? তোমরা ওজর পেশ করো না। তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফরী করেছ। আমরা তোমাদের মধ্যে কোন দলকে ক্ষমা করলেও অন্য দলকে শাস্তি দেব; কারণ তারা অপরাধী।[সূরা তাওবা, আয়াত: ৬৪-৬৬]

ইমাম ইবনে হাজম আল-যাহেরী বলেন:

প্রত্যক্ষ দলিলের ভিত্তিতে বিশুদ্ধভাবে সাব্যস্ত: যে ব্যক্তির নিকট দলিল পৌঁছার পরও সে ব্যক্তি যদি মহান আল্লাহকে কিংবা কোন ফেরেশতাকে কিংবা কোন নবীকে কিংবা কুরআনের কোন আয়াতকে কিংবা ইসলামের কোন একটি ফরজ বিধানকে বিদ্রূপ করে সে ব্যক্তি কাফের।[আল-ফাসল ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়া ওয়ান নিহাল (৩/১৪২)]

শাইখ সুলাইমান আলে-শাইখ বলেন:

যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে, কিংবা আল্লাহর কিতাবের সাথে কিংবা তাঁর রাসূলের সাথে, কিংবা তাঁর ধর্মের সাথে বিদ্রূপ করে: সকল আলেমের ইজমার ভিত্তিতে সে কাফের। যদিও সে এর দ্বারা প্রকৃতপক্ষে বিদ্রূপ করা উদ্দেশ্য না করে থাকুক।[তাইসীরুল আযিযিল হামিদ, পৃষ্ঠা-৬১৭]

দুই:

ইসলামকে বিদ্রূপ করা এমন সব কথা ও কাজকে শামিল করবে; যে কথা ও কাজ ইসলামের উপর দোষারোপ করে, ইসলামের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে কিংবা সম্মানহানি করে।

আবু হামেদ আল-গাজালী বলেন:

উপহাস মানে- মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা, হেয় প্রতিপন্ন করা, দোষত্রুটি ও অপূর্ণতাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা যাতে হাসি পায়। কখনো কখনো কোন কথা ও কাজকে অভিনয় করে দেখানোর মাধ্যমেও এটি হতে পারে; কখনো কখনো ইশারা-ইঙ্গিতেও হতে পারে।[ইহইয়াউ উলুমুদ্দিন, (৩/১৩১)]

তাই, কোন জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষাতে কিংবা প্রচলিত প্রথাতে যেসব কথা ও কাজ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের, কুরআন ও সুন্নাহর কিংবা ইসলামের কোন একটি নির্দশনের অমর্যাদা ও অসম্মান নির্দেশ করে সেটি ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয় এমন উপহাস।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া ‘আল-সারেম আল-মাসলুল’ গ্রন্থে (৫৪১) বলেন:

ভাষা অনুযায়ী কিংবা ইসলামী শরিয়তে গালির কোন বিধিবদ্ধ সংজ্ঞা নেই। এটি মানুষের প্রচলিত প্রথার উপর নির্ভর করবে। সুতরাং মানুষ যেটাকে নবীর প্রতি গালি হিসেবে সাব্যস্ত করে সেটার উপর সাহাবাযে কেরাম ও আলেমদের উদ্বৃত হুকুমকে জারী করা হবে; আর মানুষের প্রচলনে যেটি গালি নয়; সেটার ক্ষেত্রে এ হুকুম দেয়া হবে না।[সমাপ্ত]

তিন:

আর যদি কোন কথা বা কাজ মানহানিকর, অমর্যাদাকর ও ব্যঙ্গাত্মক না হয় তাহলে সেটা ইসলাম থেকে খারিজকারী বিদ্রূপ নয়।

হতে পারে কোন কোন বিদ্রূপ পাপের পর্যায়ে পড়ে; কুফরের পর্যায়ে নয়। যেমন- ব্যক্তিগতভাবে কোন মুসলমানকে বিদ্রূপ করা। তবে যদি কোন মুসলমানের দ্বীনদারির কারণে কিংবা তার সুন্নতি পোশাকের কারণে তার সাথে বিদ্রূপ করা হয় তাহলে সেটা মহা বিপদ। হতে পারে সেটি কখনো কখনো কুফরের পর্যায়ে পড়বে; আল্লাহ আমাদেরকে আশ্রয় দিন। 

চার:

যদি কোন মুসলমান ইসলামকে নিয়ে কাউকে উপহাস করতে শুনে কিংবা দেখে তাহলে তার আবশ্যকীয় কর্তব্য হচ্ছে এ কথা ও কাজকারীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করা। যদি সে ব্যক্তি এতে সাড়া না দেয় তাহলে মুসলমানের উচিত সে স্থান ত্যাগ করে চলে যাওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন: “কিতাবে তোমাদের প্রতি তিনি তো নাযিল করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে এবং তা নিয়ে বিদ্রূপ করা হচ্ছে, তখন যে পর্যন্ত তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত না হবে তোমরা তাদের সাথে বসো না, নয়তো তোমরাও তাদের মত হবে। মুনাফিক এবং কাফের সবাইকে আল্লাহ্‌ তো জাহান্নামে একত্র করবেন”।[সূরা নিসা, আয়াত: ১৪০]

পক্ষান্তরে এ ধরনের কথা শুনে মুচকি হাসা কিংবা সাধারণভাবে হাসা একই পাপে অংশ গ্রহণ করার শামিল; যদি এ হাসাটা উক্ত কথার প্রতি সন্তুষ্টিমূলক হয়ে থাকে। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “তা করলে তোমরাও তাদের মতই”। আর যদি সন্তুষ্টিমূলক না হয় তারপরেও এটি মহাপাপ; যা প্রমাণ করে যে, এ ব্যক্তির অন্তরে আল্লাহর মহত্ব ও বড়ত্ব অনুপস্থিত।

মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে- আল্লাহর দ্বীনের নির্দশনাবলিকে সম্মান করা, মর্যাদা দেয়া ও বড় করে দেখা। আল্লাহ তাআলা বলেন: “এটাই আল্লাহর বিধান এবং কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে সম্মান করলে এ তো তার হৃদয়ের তাক্‌ওয়াপ্রসূত।”[সূরা হাজ্জ, আয়াত: ৩২]

আল্লাম সাদী বলেন:

দ্বীনদারির মূলভিত্তি আল্লাহকে, আল্লাহর দ্বীনকে ও তাঁর রাসূলগণকে সম্মান করার উপর নির্ভরশীল। আর এর কোনটিকে বিদ্রূপ করা এ মূলভিত্তির সাথে সাংঘর্ষিক ও এর চরম বিরোধী।[তাইসীরুল কারিমির রহমান (পৃষ্ঠা-৩৪২) থেকে সমাপ্ত]

আল্লাহই ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব