আলহামদু লিল্লাহ।.
আমাদের ওয়েবসাইটে আমরা ইতঃপূর্বে নাপাকির হুকুমের ক্ষেত্রে ভেজা ও আর্দ্র বস্তুর মাঝে পার্থক্য করিনি। বরং এক্ষেত্রে আর্দ্র ও ভেজা বস্তুর হুকুম একই। পার্থক্য করা হয়েছে ভেজা বস্তু (নাপাকির মাধ্যমে সিক্ত) ও শুকনো ব্স্তুর মাঝে।
শুকনো নাপাকি অনুরূপ কোনো শুকনো বস্তুর সংস্পর্শে আসলেও নাপাকি নিজের স্থান অতিক্রম করে না। এটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে দৃশ্যমান ব্যাপার। কেননা শুকনো বস্তু অনুরূপ কোনো শুষ্ক নাপাকির নিছক সংস্পর্শের কারণে এর মধ্যে নাপাকির কোনো বৈশিষ্ট্য (রং, স্বাদ ও গন্ধ) প্রকাশ পায় না।
সুয়ূত্বী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “নিয়ম: কামূলী তার ‘আল-জাওয়াহের’ বইয়ে বলেন: নাপাক বস্তু যদি পবিত্র বস্তুকে স্পর্শ করে এবং উভয়টি শুষ্ক হয়, তাহলে নাপাক বস্তুটি পবিত্র বস্তুকে নাপাক করে দেয় না।”[সমাপ্ত][আল-আশবাহ ওয়ান-নাযায়ের (১/৪৩২)]
শাইখ ইবনে জিবরীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘শুকনো শরীর বা শুকনো কাপড়ে শুকনো নাপাকি স্পর্শ করলে সেটি কোনো ধরনের ক্ষতি করে না। কারণ নাপাকির সিক্ততা অন্য কিছুকে নাপাক করে।’[সমাপ্ত][ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা: ১/১৯৪]
আর নাপাকি যদি ভেজা হয় তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটি নিজের স্থান ছাড়িয়ে অন্য স্থানকে নাপাক করবে; চাই সংস্পর্শে আসা সে স্থানটি ভেজা হোক কিংবা শুকনো হোক।
দুই:
মধু, ক্রিম এবং এর অনুরূপ যাবতীয় তরল বস্তু নাপাকির স্পর্শ পেলে প্রভাবিত হয় এবং নাপাকি বহন করে। এর মাধ্যমে নাপাকি স্থানান্তরিত হয়। বিশেষতঃ যে তরলে নাপাকি পড়েছে সেটি যদি অল্প হয় তাহলে তাতে নাপাকি ছড়িয়ে পড়ে। সেটি এত বেশি নয় যে নাপাকির প্রভাব শুধু নাপাকির আশেপাশে থাকা তরলের মাঝেই সীমিত থাকবে।
ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন, মাইমূনা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘ঘি’তে পতিত মৃত ইঁদুর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন: ‘তোমরা ইঁদুরটিকে ফেলে দাও এবং ইঁদুরের আশপাশ যা আছে তাও ফেলে দাও। আর ঘি খাও।’[হাদীসটি বুখারী (৫৫৩৮) বর্ণনা করেন]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী ‘ইঁদুরের আশেপাশ যা আছে’ প্রমাণ করে যে, মৃত নাপাক প্রাণীর আশেপাশে থাকা বস্তু নাপাকি দ্বারা প্রভাবিত হয়। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের মতভেদ নেই। মতভেদ আছে আশপাশের বাড়তি তরলের ক্ষেত্রে।
যাইহোক, এখানে আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তরল জিনিস নাপাকি দ্বারা প্রভাবিত হয় যেমনিভাবে পানিও নাপাকি দ্বারা প্রভাবিত হয়। বরং তরল জিনিস প্রভাবিত হওয়া অধিক যুক্তিযুক্ত। কারণ পানির মধ্যে নাপাকি দূর করার এমন শক্তি আছে যা অন্য তরল জিনিসের মধ্যে নেই।
তিন:
এক্ষেত্রে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান উভয় প্রকার নাপাকির মাঝে কোনো পার্থক্য নেই; যেমন: পেশাবের নাপাকি। যদি জানা যায় যে এ নাপাকি কোনো স্থানকে স্পর্শ করেছে কিংবা এর মধ্যে নাপাকির তিন বৈশিষ্ট্য তথা রং, স্বাদ বা গন্ধের কোনো একটি বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে, তাহলে স্থানটি নাপাক গণ্য হবে। ধরে নিই কাপড়ে পেশাব লেগেছে, আর কাপড়ের রং এমন যে তাতে পেশাবের কোনো চিহ্ন ফুটে ওঠে না; এর মানে এ নয় যে কাপড়টি নাপাক হয়নি।
কিন্তু নাপাকি যদি যৎসামান্য হয়, যা খালি চোখে দেখা যায় না, যেমন: পেশাবের গুঁড়ি গুঁড়ি ছিটা বা অনুরূপ কিছু, তাহলে আলেমদের কেউ কেউ বলেন যে এটি ক্ষমার্হ।
শীরাযী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘যদি নাপাকি এমন হয় যা চোখে দেখা যায় না, তাহলে এক্ষেত্রে তিনটি পন্থা রয়েছে। আমাদের মাযহাবের আলেমদের কেউ কেউ বলেন: এর কোনো হুকুম নেই; কারণ এর থেকে বেঁচে থাকা সম্ভবপর নয়। এটি গোবরের ধুলার মত। আর কেউ কেউ বলেন: এর হুকুম অন্য সব নাপাকির মত। কারণ এটি যে, নাপাকি তা সুনিশ্চিত। সুতরাং এটি চোখে দেখা যায় এমন নাপাকির অনুরূপ। …’[সমাপ্ত]
নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “এই সকল মতের মধ্যে নির্বাচিত সঠিক মত হলো: এতে পানি বা কাপড় কোনোটি নাপাক হয় না। মাহামেলী তার মুক্বনি বইয়ে এ বিষয়টি অকাট্যভাবে সাব্যস্ত করেছেন। তিনি আবুত্ব ত্বাইয়্যিব ইবনে সালামাহ থেকে নিজের দুটি বইয়ে এটি উদ্ধৃত করেছেন। গাযালী ও উদ্দাহ প্রণেতা প্রমুখ এ মতকে সঠিক বলেছেন; কেননা এর থেকে বেঁচে থাকা অসম্ভব। আর আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: “তিনি দ্বীনের ক্ষেত্রে তোমাদের উপর কোনো রূপ কাঠিন্য রাখেননি।” আর আল্লাহ ভালো জানেন।”[সমাপ্ত][শারহুল-মুহায্যাব: (১/১৭৮)]
মারদাওয়ী রাহিমাহুল্লাহ ক্ষমার্হ নাপাকি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন: “তন্মধ্যে রয়েছে: আর-রি’আয়াহ গ্রন্থে যা বলেছেন: সঠিক মতানুযায়ী যৎসামান্য নাপাক পানি ক্ষমার্হ যদি তা সে পরিমাণে হয়ে থাকে যে পরিমাণ রক্ত ও অনুরূপ বস্তুর ক্ষেত্রে ক্ষমার্হ। আর চোখে দেখা যায় না এমন যৎসামান্য পরিমাণ ক্ষমার্হ হওয়ার অভিমতটি তিনি নির্বাচন করেছেন…। শাইখ তকীউদ্দীন সকল প্রকার নাপাকির ক্ষেত্রে যৎসামান্য পরিমাণ ক্ষমার্হ হওয়ার অভিমতটি নির্বাচন করেছেন। সেই নাপাকি খাদ্যদ্রব্যে হোক কিংবা অন্য কিছুর ক্ষেত্রে হোক। এমনকি ইঁদুরের বর্জ্যের ক্ষেত্রেও। তিনি ‘আল-ফুরু’ বইয়ে বলেন: এর অর্থ তিনি ‘নাযম’ (পংক্তিমালা) প্রণেতার মত নির্বাচন করেছেন। আমি বলব: মাজমাউল বাহরাইন গ্রন্থ প্রণেতা বলেছেন: আমি বলব: পোশাক-আশাক ও খাবার-দাবারে এটি ক্ষমার্হ হওয়ার বিষয়টি অধিক যুক্তিযুক্ত। যেহেতু এর থেকে বেঁচে থাকা কষ্টসাধ্য। কোনো আকলবান মানুষ এ সংকটের ব্যাপকতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করবে না। বিশেষতঃ খাদ্যশস্য চূর্ণ করার কারখানা, চিনির কল ও তেলের ঘানির মত স্থানে। সংকটটি হলো ইঁদুরের উচ্ছিষ্ট, মাছির রক্ত ও মল থেকে বেঁচে চরম কঠিন। মাযহাবের অনেক আলেম: এর পবিত্রতার মত নির্বাচন করেছেন।” [সমাপ্ত][আল-ইনসাফ (১/৩৩৪)]
আরেকটি অভিমত হলো: যৎসামান্য পরিমাণ নাপাকিও ক্ষমার্হ নয়; এমনকি সেটা যদি চোখে দেখা না যায় তবুও। দেখুন: কাশ্শাফুল ক্বিনা (১/১৯০)।
ব্যক্তি নাপাক হয়ে গেলে তার জন্য সুন্নত হলো দ্রুত নাপাকি দূর করে ফেলা এবং শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সেটাকে অবকাশ না দেওয়া। কারণ আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে: এক বেদুঈন এসে মসজিদের প্রান্তে পেশাব করে দিলে লোকজন তাকে ধমক দিতে গেল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে নিষেধ করে দিলেন। পেশাব শেষ হওয়ার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বালতি পানি তাতে ঢেলে দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করলেন। তারপর তা ঢেলে দেওয়া হলো।[হাদীসটি বুখারী (২২১) বর্ণনা করেন]
হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘উক্ত হাদীস থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা হলো: প্রতিবন্ধক দূর হয়ে যাওয়ার পর অবিলম্বে অনিষ্ট দূর করা। কেননা লোকটি পেশাব শেষ করার পরপরই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে পানি ঢেলে দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।’[সমাপ্ত][ফাতহুল বারী]
পাঁচ:
যদি নাপাক পা ঘর্মাক্ত হয় তাহলে নাপাকি মোজায় স্থানান্তরিত হবেই; এর কোন গত্যন্তরণ নেই। কারণ ভেজা নাপাকি অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয় যেমনটি ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে; নাপাকি স্থানান্তরের জায়গাটি শুকনো হলেও।
আর আল্লাহই সর্বজ্ঞ।