আলহামদু লিল্লাহ।.
ফরয নামাযের পরে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবর ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর যিকির করার বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে একাধিক রূপ সুন্নাহতে বর্ণিত হয়েছে:
প্রথম রূপ:
প্রত্যেক ওয়াক্তের নামায শেষে তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশ বার আলহামদুলিল্লাহ ও তেত্রিশ বার আল্লাহু আকবার বলার পরে একশত বার পূর্ণ করার জন্য لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِير পড়া। তখন সর্বমোট একশ বার হবে।
কেননা মুসলিম (৫৯৭) বর্ণনা করেন: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি প্রত্যেক ওয়াক্তের নামায শেষে তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশ বার আলহামদুলিল্লাহ, তেত্রিশ বার আল্লাহু আকবর বলে নিরানব্বই বার পূর্ণ করে এবং একশত পূর্ণ করার জন্য বলে: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ তার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়।”
এ যিকিরগুলো আলাদা আলাদাভাবে পড়া যেতে পারে। অর্থাৎ তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহ পড়বে। তারপর তেত্রিশ বার আলহামদুলিল্লাহ পড়বে। তারপর তেত্রিশ বার আল্লাহু আকবর বলবে।
আবার একত্র করেও পড়া যেতে পারে। অর্থাৎ সবগুলো একত্র করে বলবে: ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবর।’ এভাবে বারবার পড়তে পড়তে তেত্রিশ বার পূর্ণ করবে।
বুখারী (৮৪৩) ও মুসলিম (৫৯৫) বর্ণনা করেন (হাদীসের ভাষ্য বুখারীর): আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন: (একবার) দরিদ্র লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল: সম্পদশালী ও ধনী লোকেরা (তাদের সম্পদের দ্বারা) উচ্চমর্যাদা ও (জান্নাতের) স্থায়ী নেয়ামত অর্জন করছেন। তারা আমাদের মতো নামায আদায় করেন, আমাদের মতো রোযা রাখেন। আর তাদের আছে অতিরিক্ত মাল; যা দিয়ে তারা হজ্জ করেন, উমরা করেন, জিহাদ করেন এবং দান-সদকা করেন। এ শুনে তিনি বললেন: “আমি কি তোমাদেরকে এমন কিছু আমলের কথা বলব না, যা আমল করলে যারা নেক কাজে তোমাদের চেয়ে অগ্রগামী তোমরা তাদেরকে ধরতে পারবে না এবং যারা তোমাদের পশ্চাৎবর্তী তাদের কেউ তোমাদেরকে ধরতে পারবে না। তোমরা হবে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম। তবে যারা এ ধরনের আমল করবে তারা ছাড়া। তোমরা প্রত্যেক নামাযের পর তেত্রিশ বার করে তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ), তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ) এবং তাকবীর (আল্লাহু আকবর) পাঠ করবে।”
(এ বিষয়টি নিয়ে) আমাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হলো। কেউ বলল: ‘আমরা তেত্রিশ বার তাসবীহ পড়ব, তেত্রিশ বার তাহমীদ পড়ব, আর চৌত্রিশ বার তাকবীর পড়ব।’ অতঃপর আমি তাঁর নিকট ফিরে গেলাম।
তিনি বললেন: “তোমরা বলবে: ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবর’ যাতে সবগুলোই তেত্রিশবার করে হয়ে যায়।”
দ্বিতীয় রূপ:
প্রত্যেক নামাযের পর তেত্রিশ বার তাসবীহ, তেত্রিশ বার তাহমীদ এবং চৌত্রিশ বার তাকবীর পড়বে। ফলে মোট একশত বার হবে।
কেননা মুসলিম (৫৯৬) বর্ণনা করেন: কা’ব ইবনে উজরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “প্রতি ফরয নামাযের পর পড়ার মতো কিছু কথা আছে যেগুলো পাঠকারী বা আমলকারী ব্যর্থ হয় না। সে কথাগুলো হলো: ‘সুবহানাল্লাহ’ তেত্রিশবার, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ তেত্রিশবার ও ‘আল্লাহু আকবর’ চৌত্রিশবার করে পড়া।”
তৃতীয় রূপ:
তাসবীহ, তাহমীদ, তাকবীর ও তাহলীল পঁচিশ বার করে বলবে। সর্বমোট একশ বার হবে। দলিল হলো নাসাঈ (১৩৫০) বর্ণনা করেছেন: যায়েদ ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন: তিনি বলেন: একবার সাহাবায়ে কেরামকে আদেশ করা হলো: তারা যেন প্রত্যেক নামাযের পর তেত্রিশ বার ‘সুবহানাল্লাহ’, তেত্রিশ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এবং চৌত্রিশ বার ‘আল্লাহু আকবর’ বলে। তারপর যায়েদ ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্বপ্নে এক আনসারী সাহাবীকে আনা হলো এবং তাকে (যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে) উদ্দেশ্য করে বলা হল: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি তোমাদেরকে আদেশ করেছেন যে: তোমরা প্রত্যেক নামাযের পর তেত্রিশ বার ‘সুবহানাল্লাহ’, তেত্রিশ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এবং চৌত্রিশ বার ‘আল্লাহু আকবর’ বলবে? তিনি বললেন: হ্যাঁ। তখন ঐ আনসারী বললেন: তোমরা ঐ তাসবীহগুলোকে পঁচিশ বার পড়বে এবং তাতে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহুকেও অন্তর্ভুক্ত করে নেবে। যখন সকাল হল তখন তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে স্বপ্ন বর্ণনা করার পর তিনি বললেন: “তোমরা তাসবীহগুলোকে অনুরূপভাবেই পড়বে।”[শাইখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহুন নাসাঈতে সহীহ বলেছেন]
চতুর্থ রূপ:
তাসবীহ, তাহমীদ ও তাকবীর দশ বার করে বলবে।
দলিল: আবু দাউদ (৫০৬৫) বর্ণনা করেন: আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “দুটি বিষয় বা দুটি অভ্যাসে যে মুসলিম নিয়মিত হবে সে নিশ্চয়ই জান্নাতে প্রবেশ করবে। অভ্যাস দুটি সহজ; কিন্তু এর উপর আমলকারীর সংখ্যা কম। অভ্যাস দুটি হলো: প্রত্যেক নামাযের পর দশ বার সুবহানাল্লাহ, দশ বার আলহামদু লিল্লাহ ও দশ বার আল্লাহু আকবর বলবে। মুখ দিয়ে (পাঁচ ওয়াক্তে) এর পাঠকৃত সংখ্যা একশ পঞ্চাশ, কিন্তু মীযানে তা এক হাজার পাঁচশ। যখন শয্যায় যাবে তখন চৌত্রিশ বার আল্লাহু আকবার, তেত্রিশ বার আলহামদুলিল্লাহ ও তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহ বলবে। এভাবে তা মুখ দিয়ে পাঠের সংখ্যা একশ; কিন্তু মীযানে এক হাজার।” আমি (আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তা হাতের আঙ্গুলে গণনা করতে দেখেছি। সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! অভ্যাস দুটি সহজ হওয়া সত্ত্বেও এর আমলকারীর সংখ্যা কম কেন? তিনি বললেন: “তোমরা বিছানায় ঘুমাতে গেলে শয়তান তোমাদের কোনো লোককে তা বলার আগেই ঘুম পাড়িয়ে দেয়। আর নামাযের মধ্যে শয়তান এসে তার বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং সে ঐগুলো বলার আগেই প্রয়োজনের দিকে চলে যায়।”[হাদীসটি হাফেয ইবনে হাজার তার তাখরীজুল আযকার (২/২৬৭) বইয়ে সহিহ বলে গণ্য করেন। শাইখ আলবানী আল-কালিমুত তাইয়্যিব বইয়ে (পৃ. ১১৩) এটিকে সহিহ বলেন]
এই হলো সকল বিশুদ্ধ রূপসমূহের বিবরণ। উত্তম হলো এগুলোর মাঝে বৈচিত্র্য আনা। কখনো এভাবে পড়বে, কখনো অন্যভাবে পড়বে।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন:
“নামাযের পরে পঠিতব্য তাসবীহ চারভাবে বর্ণিত হয়েছে:
১. দশ বার সুবহানাল্লাহ, দশ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং দশ বার আল্লাহু আকবর।
২. তেত্রিশ বার করে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবর। সর্বমোট নিরানব্বই বার। তারপর শেষ করবে لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ বলার মাধ্যমে।
৩. তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং চৌত্রিশ বার আল্লাহু আকবর বলা।
৪. সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও আল্লাহু আকবর পঁচিশ বার করে সর্বমোট একশত বার বলা।”[শারহু মানযূমাতি উসূলিল ফিকহ ওয়া কাওয়াইদুহু (পৃ. ১৭৬-১৭৭)]
প্রশ্নকারী ভাই যোহর, আসর ও এশার পর বিশেষভাবে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবর দশ বার করে পড়ার ব্যাপারে যে বক্তব্য উল্লেখ করেছেন আমরা সুন্নাহ থেকে সেটির কোনো প্রমাণ পাইনি। বরং সুন্নাহতে রয়েছে: এই যিকির প্রত্যেক ফরয নামাযের পর পঁচিশ বার বলতে হবে। এটি যোহর, আসর ও এশার সাথে নির্দিষ্ট নয়।
আরো জানতে দেখুন (131850) ও (175771) নং প্রশ্নের উত্তর।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।