আলহামদু লিল্লাহ।.
পুলসিরাত জাহান্নামের (আল্লাহ এর থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন) উপরে স্থাপিত একটি সেতু। মানুষজন তাদের আমল অনুসারে এই পুলসিরাত পার হবে। কেউ চোখের পলকে, কেউ বিদ্যুৎগতিতে, কেউ বাতাসের গতিতে, আর কেউ উন্নত মানের ঘোড়ার গতিতে।
কেউ দৌঁড়ে পার হবে, কেউ হেঁটে, কেউ বা হামাগুড়ি দিয়ে। কাউকে আবার ছিনিয়ে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। প্রত্যেকে তার আমল অনুযায়ী।
সহীহ বুখারী (৭৪৩৯) ও মুসলিম (১৮৩) কর্তৃক সংকলিত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সনদে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসের কিছু অংশ হলো: ... ‘অতঃপর পুলসিরাত আনা হবে এবং তা জাহান্নামের ওপরে স্থাপন করা হবে।’ আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! পুলসিরাত কী? তিনি বললেন: ‘পদস্খলনের স্থান, তার ওপর রয়েছে ছো মারার হুক, পেরেক, বিশাল বড়শি যার রয়েছে বড় কাঁটা; যেমনটি নজদ এলাকায় আছে। এটাকে সা’দান বলা হয়। মুমিনগণ এর ওপর দিয়ে চোখের পলকে, বিদ্যুতের গতিতে, বাতাসের গতিতে, শক্তিশালী ঘোড়া চলার ন্যায় পার হবে। কেউ নিরাপদে নাজাত পাবে। কেউ ক্ষতবিক্ষত হয়ে নাজাত পাবে এবং কেউ জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি অতিক্রম করবে এভাবে তাকে টেনে-হিঁছড়ে পার করা হবে।’
মুসলিমের বর্ণনায় আরেকটু বাড়তি আছে: আবু সাঈদ বলেন: ‘আমি জেনেছি যে পুলসিরাত হবে চুলের চেয়ে সরু এবং তরবারীর চেয়ে ধারালো।’
নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘কেউ নিরাপদে নাজাত পাবে ...’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই বক্তব্যের অর্থ হলো: তারা তিন প্রকার: এক প্রকার নিরাপদে বেঁচে যাবে, যারা কোন কিছুতে আক্রান্ত করবে না। আরেক প্রকার ক্ষত-বিক্ষত হওয়ার পর ছাড় পাবে এবং বেঁচে যাবে। তৃতীয় প্রকারের ব্যক্তিদেরকে ছিনিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।[সমাপ্ত][শরহুন নববী ‘আলা মুসলিম (৩/২৯)]
শাইখ ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “পুলসিরাত জাহান্নামের উপর থাকা একটি সেতু। এটি চুলের চেয়ে সুক্ষ্ম ও তরবারির চেয়ে ধারালো। মানুষজন তাদের আমল অনুযায়ী এটি পার হবে। যে ব্যক্তি দুনিয়ায় নেককাজে অগ্রণী ছিল, সে এই পুলসিরাত দ্রুতগতিতে পেরিয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি নেক কাজে ধীরগতি ছিল এবং যে ব্যক্তি ভালো-মন্দ উভয় প্রকার আমল করত; কিন্তু আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেননি তাকে হয়তো জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।
এর উপর দিয়ে পার হওয়ার ক্ষেত্রে মানুষজনের নানান অবস্থা হবে। কেউ চোখের পলকে পেরিয়ে যাবে। কেউ বিদ্যুৎ গতিতে। কেউ বাতাসের গতিতে। কেউ উন্নত মানের ঘোড়ার গতিতে। কেউ উটের গতিতে। কেউ হেঁটে। কেউ হামাগুড়ি দিয়ে। কাউকে জাহান্নামে নিক্ষেপও করা হবে। এই পুলসিরাত পার হবে শুধু ঈমানদাররা। আর কাফেররা এটি পার হবে না। কারণ তাদেরকে কিয়ামতের ময়দান থেকে সরাসরি জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে।”[সমাপ্ত][শরহু রিয়াদিস সালিহীন: (১/৪৭০)]
মানুষের পুলসিরাত পার হওয়ার ব্যাপারে বর্ণনাসমূহের সার-সংক্ষেপ এতটুকু। তাদের আমলের ভিন্নতা অনুযায়ী এটি বিভিন্ন হবে। যে ব্যক্তি দুনিয়াতে আল্লাহর দিকে, তাঁর আনুগত্য ও ইবাদতের দিকে অগ্রণী ছিল সে দ্রুত গতিতে পুলসিরাত পার হবে।
আর যে ব্যক্তি এক্ষেত্রে দুনিয়াতে ধীরগতি ছিল সে পুলসিরাতও ধীরগতিতে পার হবে।
পক্ষান্তরে, পুলসিরাতে উঠতে এক হাজার বছর ও নামতে এক হাজার বছর লাগবে মর্মে প্রশ্নে যে বক্তব্যটি এসেছে তার কোনো ভিত্তি আমরা জানি না। আমাদের উচিত শরয়ি দলিল-প্রমাণে ও দলিল-প্রমাণের নির্দেশনায় সীমাবদ্ধ থাকা।
আল্লাহ তাআলা সর্বজ্ঞ।