শুক্রবার 21 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 22 নভেম্বর 2024
বাংলা

ইসলামী শরিয়তে কৃপণতার সীমারেখা

প্রশ্ন

ইসলামী শরিয়া মোতাবেক কখন একজন লোককে তার স্ত্রী ও পুত্রদের খরচাদি দেয়ার ক্ষেত্রে কৃপণ হিসেবে গণ্য করা হবে? কারণ কেউ কেউ মনে করছে যে, আমি আমার আবশ্যকীয় দায়িত্ব পালন করছি। আবার কেউ কেউ মনে করছে যে, আমার মাঝে কৃপণতা আছে।

উত্তরের সংক্ষিপ্তসার

যে ব্যক্তি তার স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য যে ক্ষেত্রে খরচ করা বাঞ্ছনীয় সে ক্ষেত্রে খরচ করে না সে কৃপণ।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

কৃপণতা একটি মন্দ গুণ। কৃপণতার চেয়ে মন্দ গুণ আর কী হতে পারে? কৃপণতার সীমারেখা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আলেমগণের বিবিধ বক্তব্য পাওয়া যায়:

ইবনুল মুফলিহ (রহঃ) বলেন:

আলেমগণ কৃপণতার সীমারেখার ব্যাপারে কয়েকটি মত উল্লেখ করেছেন:

১. যাকাত প্রদান না করা। যে ব্যক্তি যাকাত আদায় করল সে ব্যক্তি কৃপণতার অভিধা থেকে রেহাই পেল।

২. ফরয যাকাত ও ফরয খরচাদি বহন না করা। এ অভিমতের ভিত্তিতে কেউ যদি যাকাত প্রদান করে কিন্তু অন্য ফরয খরচ প্রদানে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে তাকে কৃপণ হিসেবে গণ্য করা হবে।[এটি ইবনুল কাইয়্যেম ও অন্যান্য আলেমের এর মনোনীত অভিমত]

৩. ফরয খরচ ও মুস্তাহাব খরচ প্রদান করা। তাই কেউ যদি শুধু দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে কসুর করে তাহলে সে কৃপণ।[এটি ইমাম গাজ্জালি ও অন্যান্যদের অভিমত][আল-আদাবুশ শারইয়্যা (৩/৩০৩) থেকে সংক্ষেপে সংকলিত]

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন: কৃপণ হচ্ছে- যে ব্যক্তি তার উপরে ফরয খরচ প্রদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। সুতরাং কেউ যদি তার উপরে যা কিছু খরচ করা ফরয সেগুলো আদায় করে তাহলে তাকে কৃপণ বলা যাবে না। বরং কৃপণ হল যে ব্যক্তির দায়িত্বে যা দেয়া ও খরচ করার দায়িত্ব সেটা করতে অস্বীকৃতি জানায়।[জালাউল আফহাম (পৃষ্ঠা-৩৮৫), কুরতুবীরও অনুরূপ উক্তি রয়েছে (৫/১৯৩)]

ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) বলেন:

কৃপণ হচ্ছে- এমন ব্যক্তি যে ব্যক্তি এমন স্থানে খরচ করতে অস্বীকৃতি জানায় যেখানে খরচ করা বাঞ্ছনীয়; সেটা শরিয়তের বিধানের নিরিখে হোক, কিংবা ব্যক্তিত্ব রক্ষার নিরিখে হোক। এর পরিমাপ নির্দিষ্ট করা সম্ভবপর নয়।[ইহইয়া উলুমিদ দ্দীন (৩/২৬০)]

অনুরূপ কথা শাইখ উছাইমীন (রহঃ)ও বলেছেন:

“কৃপণতা হচ্ছে: যা খরচ করা আবশ্যক ও যা খরচ করা বাঞ্ছনীয়।“

[শারহু রিয়াদুস সালেহীন থেকে (৩/৪১০) সমাপ্ত]

দুই:

পুরুষের উপর ফরয তার স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য প্রচলিত রীতি অনুযায়ী ব্যয় করা। খরচাদির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে: খাদ্য, পানীয়, পোশাক ও বাসস্থান এবং স্ত্রী ও সন্তানদের যাবতীয় যা কিছু প্রয়োজন; যেগুলো না হলে নয়। যেমন- চিকিৎসার খরচ, শিক্ষা খরচ ইত্যাদি।

এ খরচাদি প্রদান করা হবে, স্বামীর সামর্থ্য ও তার আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী। দলিল হচ্ছে আল্লাহ্‌ তাআলার বাণী: “বিত্তবান তার সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে। আর যার জীবনোপকরণ সীমিত সে আল্লাহ্‌ তাকে যা দান করেছেন সেটা থেকে ব্যয় করবে। আল্লাহ্‌ যাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন তার চেয়ে গুরুতর বোঝা তিনি তার উপর চাপান না।”[সূরা ত্বালাক, আয়াত: ৭]

এ কারণে মানুষের সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতার ভিত্তিতে স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য ব্যয়ভার একেক জনের একেক রকম। যে ব্যক্তি সচ্ছল সে ব্যক্তি তার স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য সচ্ছলভাবে ব্যয় করবে। যদি এ ক্ষেত্রে তাদেরকে কম দেয় তাহলে সে ব্যক্তি কৃপণ হিসেবে গণ্য হবে। কেননা সে ব্যক্তি তার উপর যে দায়িত্ব রয়েছে সেটা পালন থেকে বিরত থেকেছে। আর যে ব্যক্তি অসচ্ছল সে ব্যক্তি অসচ্ছলভাবে ব্যয় করবে। আর যে ব্যক্তি মধ্যবিত্ত শ্রেণী সে তার অবস্থা অনুযায়ী ব্যয় করবে। আল্লাহ্‌ বান্দাকে যা দিয়েছেন এর উপরে কোন দায়িত্ব দেন না। শরিয়তে এ ব্যয়ের নির্ধারিত কোন সীমা নেই। বরং খরচাদির পরিমাপের মানদণ্ড হচ্ছে- মানুষের সামাজিক রীতি।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব