বৃহস্পতিবার 25 জুমাদাল ছানী 1446 - 26 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

মাস শুরু হওয়ার একদিন বা দুইদিন আগে থেকে রমযানের রোযা রাখার নিষেধাজ্ঞা

প্রশ্ন

আমি শুনেছি যে, রমযানের আগে রোযা রাখা জায়েয নয়; এ কথা কি সঠিক?

আলহামদু লিল্লাহ।.

শাবান মাসের দ্বিতীয় অর্ধাংশে রোযা রাখা নিষেধ মর্মে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কিছু হাদিস উদ্ধৃত হয়েছে । তবে দুই অবস্থা ব্যতীত:

এক. যে ব্যক্তির রোযা রাখার বিশেষ কোন অভ্যাস আছে। যেমন— যে ব্যক্তির অভ্যাস হচ্ছে প্রতি সোমবার ও প্রতি বৃহস্পতিবারে রোযা রাখা; সে ব্যক্তি এ দুইদিন রোযা রাখতে পারবেন; এমনকি সেটা যদি শাবান মাসের দ্বিতীয় অর্ধাংশে পড়ে তবুও।

দুই. যদি কেউ শাবান মাসের প্রথম অংশের সাথে দ্বিতীয় অংশেও লাগাতরভাবে রোযা রাখে। সেটা এভাবে যে, শাবান মাসের প্রথমার্ধে রোযা শুরু করে রমযান শুরু হওয়া পর্যন্ত রোযা অব্যাহত রাখা। এটি জায়েয। আরও জানতে দেখুন 13726 নং প্রশ্নোত্তর।

এ সংক্রান্ত হাদিসগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা রমযানের একদিন কিংবা দু’দিন আগে থেকে রোযা রাখা শুরু করবে না। তবে কারো যদি রোযা রাখার বিশেষ কোন অভ্যাস থাকে তাহলে সে সেদিন রোযা রাখুক।”[সহিহ বুখারী (১৯১৪) ও সহিহ মুসলিম (১০৮২)]
  • আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যখন শাবান মাসের অর্ধেক পার হয়ে যায় তখন তোমরা আর রোযা রেখ না।”[সুনানে আবু দাউদ (৩২৩৭), সুনানে তিরমিযি (৭৩৮) ও ইবনে মাজাহ (১৬৫১) এবং আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

ইমাম নববী বলেন:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “তোমরা রমযানের একদিন কিংবা দু’দিন আগে থেকে রোযা রাখা শুরু করবে না। তবে কারো যদি রোযা রাখার বিশেষ কোন অভ্যাস থাকে তাহলে সে সেদিন রোযা রাখুক।” –র মধ্যে রমযানের একদিন বা দু’দিন আগে থেকে রোযা শুরু করার ব্যাপারে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে, ঐ ব্যক্তির জন্য নয়— যার বিশেষ অভ্যাসগত রোযা এ দিনের মধ্যে পড়বে কিংবা এর আগে থেকে সে লাগাতরভাবে রোযা রেখে আসবে। যদি কেউ এর আগে থেকে রোযা রেখে না আসে কিংবা তার বিশেষ অভ্যাসগত রোযাও না হয় তাহলে এ সময়ে রোযা রাখা হারাম।[সমাপ্ত]

  • আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) বলেন: “যে ব্যক্তি এমন দিনে রোযা রাখল যে দিনটি নিয়ে মানুষ সন্দেহে রয়েছে সে আবুল কাসেমের (নবীর) অবাধ্য হল।”[সুনানে তিরমিযি (৬৮৬), সুনানে নাসাঈ (২১৮৮)] আরও জানতে দেখুন: 13711 নং প্রশ্নোত্তর।

হাফেয ইবনে হাজার ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে বলেন:

এ উক্তিটি দিয়ে সন্দেহের দিন রোযা রাখা হারাম হওয়ার পক্ষে দলিল দেওয়া হয়। কেননা এমন কথা সাহাবী নিজ অভিমত থেকে বলতে পারেন না।[সমাপ্ত]

সন্দেহের দিন হল— শাবান মাসের ৩০ তারিখ; যেইদিন আকাশে মেঘ থাকার কারণে চাঁদ দেখা যায়নি। এ দিনটিকে সন্দেহের দিন বলার কারণ হল, এ দিনটি কি শাবান মাসের ৩০ তারিখ; নাকি রমযান মাসের ১ তারিখ সেটা নিয়ে সন্দেহ হওয়া।

তাই সেই দিন রোযা রাখা হারাম। তবে, কারো অভ্যাসগত রোযা এ দিনে পড়ে গেলে তার জন্যে হারাম নয়।

ইমাম নববী ‘আল-মাজমু’ গ্রন্থে (৬/৪০০) সন্দেহের দিন রোযা রাখার হুকুম সম্পর্কে বলেন:

আর যদি কেউ এই দিন নফল রোযা রাখে: যদি এ নফল রোযার বিশেষ কোন কারণ থাকে; যেমন—কারো অভ্যাস হল সারা বছর রোযা রাখা কিংবা কারো অভ্যাস হল একদিন রোযা রাখা, একদিন রোযা না-রাখা কিংবা কারো অভ্যাস হল সোমবারের মত নির্দিষ্ট কোন দিনে রোযা রাখা; আর সন্দেহের দিনে তার রোযার দিনটি পড়ে তাহলে তার জন্য রোযা রাখা জায়েয হবে। এ ব্যাপারে আমাদের মাযহাবের আলেমগণের মধ্যে কোন মতভেদ নেই...। এর সপক্ষে দলিল হল আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদিস: “তোমরা রমযানের একদিন কিংবা দু’দিন আগে থেকে রোযা রাখা শুরু করবে না। তবে কারো যদি রোযা রাখার বিশেষ কোন অভ্যাস থাকে তাহলে সে সেদিন রোযা রাখুক।”  আর যদি তার রোযা রাখার বিশেষ কোন কারণ না থাকে তাহলে সেই দিন রোযা রাখা হারাম।[পরিমার্জিত ও সমাপ্ত]

শাইখ উছাইমীন “তোমরা রমযানের একদিন কিংবা দু’দিন আগে থেকে রোযা রাখা শুরু করবে না।” হাদিসটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন: আলেমগণ এ নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে মতভেদ করেছেন যে, এটি কি হারামসূচক নিষেধাজ্ঞা; নাকি মাকরুহসূচক নিষেধাজ্ঞা? সঠিক অভিমত হচ্ছে—এটি হারামসূচক নিষেধাজ্ঞা। বিশেষ করে সন্দেহের দিনের ব্যাপারে।[সমাপ্ত][শারহু রিয়াদুস সালেহীন (৩/৩৯৪)]

পূর্বের আলোচনার ভিত্তিতে শাবান মাসের দ্বিতীয় অর্ধাংশের রোযা দুই প্রকার:

১। শাবান মাসের ১৬ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে রোযা রাখা। এটি মাকরুহ; তবে যে ব্যক্তির বিশেষ কোন অভ্যাস আছে সে ব্যক্তি ব্যতীত।

২। সন্দেহের দিনে রোযা রাখা কিংবা রমযানের একদিন বা দুইদিন আগে রোযা রাখা। এটি হারাম; তবে যে ব্যক্তির বিশেষ কোন অভ্যাস আছে সে ব্যক্তি ব্যতীত।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব