শনিবার 20 জুমাদাল ছানী 1446 - 21 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

হে রমযান! আমাদের জন্য তোমার প্রভুর কাছে সুপারিশ কর এমন কথা বলার হুকুম কি?

প্রশ্ন

আমাদের ইমাম রমযান মাসে কুরআন খতম করার সময় কিছু অপরিচিত দোয়া করেন। যেমন তিনি বলেন: হে রমযান! আমাদের জন্য তোমার প্রভুর কাছে সাক্ষী দিও। আমার প্রবল ধারণা হয় যে, তিনি বলেছেন: আমাদের জন্য সুপারিশ করিও কিংবা আমাদেরকে রাইয়ান দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করিও কিংবা এ ধরণের অর্থবোধক অন্য দোয়া। এ ধরণের কথা কি শির্কের পর্যায়ে পড়বে? উল্লেখ্য, আমার প্রবল ধারণা হয় কিংবা প্রায় নিশ্চিত যে, ইমাম সাহেব জানেন যে, রমযান আমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে না কিংবা আল্লাহ্‌র অনুমতি ছাড়া তার কাছে সুপারিশ করবে না। সুতরাং এর হুকুম কি হবে? অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ডাকে এবং তাঁর কাছে সুপারিশ প্রার্থনা করে। তবে সে ব্যক্তি জানে যে, আল্লাহ্‌র অনুমতি ছাড়া কেউ তার জন্য সুপারিশ করবে না কিংবা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে না। এটি কি শির্ক হিসেবে গণ্য হবে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

দুনিয়াতে কোন মৃতব্যক্তি কিংবা কোন অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে শাফায়াত চাওয়া জায়েয নয়। এমন কি যদি এটি সাব্যস্ত হয় যে, সেই ব্যক্তি আখিরাতে সুপারিশকারী হবেন তবুও। তাই এভাবে বলা জায়েয নেই যে, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আপনি আমার জন্য সুপারিশ করুন। কিংবা হে আল্লাহ্‌র ফেরেশতারা! তোমরা আমার জন্য সুপারিশ করিও; অথচ ফেরেশতারা ও নবীরা কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবেন। কেননা শাফায়াত চাইতে হবে এর সময়মত; যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবিত ও উপস্থিত থাকবেন। লোকেরা তাঁর কাছে এসে তাকে বলবে: আমাদের জন্য আপনার প্রভুর কাছে সুপারিশ করুন; যেমনটি শাফায়াতের প্রসিদ্ধ হাদিসে উদ্ধৃত হয়েছে।

এখন শাফায়াত চাওয়াটা হবে অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে শাফায়াত চাওয়া; যা তার কাছে চাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি। তাই এটি হারাম হবে এবং গায়রুল্লাহ্‌ (আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য সত্তা)-এর কাছে প্রার্থনা করা ও দোয়া করার অন্তর্ভুক্ত হবে।

এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পর কোন সাহাবী তাঁর কাছে শাফায়াত প্রার্থনা করেছেন মর্মে বর্ণিত হয়নি।

কোন মৃতব্যক্তির কাছে: ‘আমার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করুন’ কিংবা ‘আমার জন্য আপনার প্রভুর কাছে শাফায়াত করুন’ বলে দোয়া করা কিংবা শাফায়াত চাওয়া কি শির্ক হবে নাকি শির্কের বাহন হবে এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে।

যদি সরাসরি মৃতব্যক্তিকে এভাবে বলে যে: ‘আমার বিপদ দূর করুন’ কিংবা ‘আমার প্রয়োজন পূরণ করুন’ কিংবা ‘আমাকে সাহায্য করুন’ কিংবা ‘শক্তিবৃদ্ধি করুন’ তাহলে এটি সর্বসম্মতিক্রমে বড় শির্ক।

দুই:

‘হে রমযান! আমার জন্য সুপারিশ করিও’ বলা জায়েয নয়; যদিও সাব্যস্ত হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন রোযা রোযাদারদের জন্য সুপারিশ করবে। কেননা রমযান হল মাস। মাস সুপারিশ করবে না। এবং যেহেতু সুপারিশকারীকে সম্বোধন করার ও তার কাছে সুপারিশ চাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি। এবং যেহেতু এটি গায়রুল্লাহ্‌-এর কাছে প্রার্থনা করার অন্তর্ভুক্ত। আর গায়রুল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করার মূলবিধান হল হারাম।

শাইখ খালেদ আল-মুশাইকিহ (হাফিযাহুল্লাহ্‌)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:

আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের কাছে শাফায়াত তলব করার হুকুম কী? এই খুদেবার্তাটির হুকুমের ব্যাপারে আমার কাছে খটকা লাগছে: হে রমযান! হে কারীম! আমার জন্য দয়াময় প্রভুর কাছে সুপারিশ করিও...”।

জবাবে তিনি বলেন: নিঃসন্দেহে এটি বিদআত। জীবিত ও সক্ষম ব্যক্তির কাছে শাফায়াত চাইতে কোন অসুবিধা নাই। যেমন কেউ যদি বলে: আল্লাহ্‌র কাছে সুপারিশ করুন যেন আমাকে মাফ করে দেয়। অর্থাৎ আমার জন্য দোয়া করুন যাতে আল্লাহ্‌ আমাকে ক্ষমা করে দেন। এতে অসুবিধা নাই।

অপর ব্যক্তি থেকে দোয়া চাওয়া আলেমদের মধ্যে মতভেদপূর্ণ বিষয়। কিন্তু শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেছেন: যদি দোয়াপ্রার্থী দোয়াকারী থেকে উপকৃত হওয়ার নিয়ত করে থাকে তাহলে এটি জায়েয; ইনশাআল্লাহ্‌ এতে কোন অসুবিধা নাই।

পক্ষান্তরে, মৃত ব্যক্তিদের কাছে তারা আল্লাহ্‌র কাছে সুপারিশ করার জন্য চাওয়াএটি নিঃসন্দেহে হারাম ও নাজায়েয।

কোন কোন আলেম এটাকে বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত করেছেন, আর কোন কোন আলেম এটাকে ছোট শির্কের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

রমযানের কাছে শাফায়াত তলব করা হারাম এবং দোয়ার ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন। কেননা রমযান সুপারিশ করবে না। বরঞ্চ রমযান হল মাধ্যম; যাতে করে একজন মুসলিম রমযান মাসে তার প্রভুকে ভয় করে। এ ভয় বান্দাকে আল্লাহ্‌র নৈকট্য হাছিল করিয়ে দেয়; যদি সে আল্লাহ্‌র নির্দেশ পালন করে ও নিষেধ থেকে বিরত থাকে। আল্লাহ্‌ই তাওফিকদাতা। লিংক দেয়া ওয়েবসাইট থেকে সমাপ্ত:

পক্ষান্তরে, বাহ্যতঃ যা বুঝা যায় ‘হে রমযান! তুমি সাক্ষী থাক’ এর মধ্যে প্রকৃতপক্ষে কোন চাওয়া নাই। তবে এমন কথা পরিহার করাই উত্তম।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব