শুক্রবার 21 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 22 নভেম্বর 2024
বাংলা

কুরআনের সাথে সম্পৃক্তের মর্যাদা

প্রশ্ন

এই কথাটির সঠিকতা কতটুকু? কোন সলফে সালেহীন কি এ কথাটি বলেছেন? “কুরআনে আযীম মক্কাতে নাযিল হওয়ায় মক্কা হল সর্বাধিক সম্মানিত নগরী। রমযান মাসে নাযিল হওয়ায় রমযান হল সর্বোত্তম মাস। লাইলাতুল ক্বদরে নাযিল হওয়ায় সেই রাত হল হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর নাযিল হওয়ায় তিনি হলেন নবীদের নেতা। কুরআন নিয়ে জিব্রাইল আলাইহিস সালাম নাযিল হওয়ায় তিনি হলেন ফেরেশতাদের সর্দার। আসলেই কুরআন কি ইনাদের মর্যাদার কারণ?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

আল্লাহ্‌ তাআলা কুরআনকে নানাবিধ গুণে উল্লেখ করেছেন। যেমন كتاب عزيز  (সম্মানিত কিতাব)। তিনি বলেন: যারা তাদের কাছে উপদেশ (কুরআন) আসার পর তা অবিশ্বাস করেছে (তারা অবশ্যই শাস্তি ভোগ করবে); এ তো এক সম্মানিত গ্রন্থ। এতে মিথ্যা আসতে পারে না, না তার সামনে থেকে এবং না তার পেছন থেকে (অর্থাৎ কোন দিক থেকে)এটা এক প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত সত্তার (আল্লাহ্‌র) পক্ষ থেকে অবতীর্ণ[সূরা হামীম আস-সাজদাহ; ৪১:৪১-৪২]

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন:    وَالْقُرْآنِ الْمَجِيدِ  (গৌরবময় কুরআনের শপথ)[সূরা ক্বাফ, আয়াত:১]

আরও অন্য অনেক গুণবাচক বৈশিষ্ট্য।

যে ব্যক্তি কুরআনকে ধারণ করবে নিঃসন্দেহে সে মর্যাদা ও সম্মান লাভ করবে; কুরআনকে ধারণ করার কারণে। হাদিসে এসেছে আমের বিন ওয়াছিলা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নাফে’ বিন আব্দুল হারিছ (রাঃ) ‘উসফান’ নামক স্থানে উমর (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। উমর (রাঃ) তাকে মক্কার গভর্নর নিয়োগ করেছিলেন। তখন তিনি বললেন: উপত্যকাবাসীর দায়িত্বে কাকে রেখে এসেছ? নাফে’ বললেন: ইবনে আবযাকে। তিনি বললেন: ইবনে আবযা কে? নাফে’ বললেন: আমাদের জনৈক আযাদকৃত দাস। তিনি বললেন: তুমি তাদের দায়িত্বে একজন আযাদকৃত দাসকে রেখে আসলে? নাফে’ বললেন: সে কিতাবুল্লাহ্‌র (কুরআনের) ক্বারী এবং ফরায়েযের (পরিত্যক্ত সম্পত্তি বণ্টন জ্ঞানের) আলেম।

তখন উমর (রাঃ) বললেন: নিশ্চয় তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ্‌ এই কিতাবের মাধ্যমে কিছু লোককে মর্যাদাবান করেন এবং কিছু লোককে অপদস্ত করেন।[সহিহ মুসলিম (৮১৭)]

সারকথা হলো: কুরআনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া সম্পৃক্ত ব্যক্তির জন্য সম্মান ও মর্যাদাকর; সেটা লিখনগত, লিপিগত, উচ্চারণগত, মুখস্তগত, তেলাওয়াতগত, জ্ঞানগত বা আমলগত যেই ধরণের সম্পৃক্ততা হোক না কেন। অর্থাৎ আল্লাহ্‌র কিতাবের সাথে যে কোন ধরণের সম্পর্ক তৈরী করা ও তাতে নিয়োজিত হওয়া সম্পর্ককারী ব্যক্তির জন্য সম্মানজনক এবং সম্পর্কের অনুপাতে উভয় জাহানে তার জন্য মর্যাদাবৃদ্ধিকর। আল্লাহ্‌ তাআলা প্রত্যেক জিনিসের একটা পরিমাণ নির্ধারণ করে রেখেছেন।

কুরআন মক্কাতে নাযিল হওয়া সম্মানিত শহর মক্কার জন্য সম্মানের, রমযানে কুরআন নাযিল হওয়া রমযানের জন্য সম্মানের, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্তরে কুরআন নাযিল হওয়া মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য সম্মানের, যার মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তাঁকে সম্মানিত করেছেন এবং আসমান থেকে, রাব্বুল আলামীনের কাছ থেকে কুরআন বহন করা বহনকারী ফেরেশতা জিব্রাইল আলাইহিস সালামের জন্য সম্মানের— এ বিষয়গুলোতে আমাদের আপত্তির কিছু নেই। যেহেতু কুরআন সম্মানিত বাণী এবং রাব্বুল আলামীনের বাণী!!

কিন্তু এ কথা বলা ভুল যে, এগুলোই সম্মানের একমাত্র কারণ কিংবা সম্মানকে এর মধ্যে সীমাবদ্ধ করা; সে সীমাবদ্ধ করণের যুক্তি যাই হোক না কেন। এটি ইলম ছাড়া আল্লাহ্‌র নামে কথা বলার পর্যায়ভুক্ত এবং এটি কৃত্রিমতা; যার কোন প্রয়োজন নেই।

বরং পূর্বোক্ত প্রতিটি বিষয়ের মর্যাদার সূচনা কুরআন নাযিল থেকে এমন ধারণা করাটা ভুল। কেননা কুরআন নাযিলের আগে থেকেই জিব্রাইল আলাইহিস সালাম সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতা ও নবীদের কাছে রাব্বুল আলামীনের দূত।

মক্কা আল্লাহ্‌র হারাম (সম্মানিত/নিষিদ্ধ) নগরী। যে নগরীকে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম হারাম ঘোষণা করেছেন। এই নগরীর মর্যাদা কুরআন নাযিলের আগে থেকেই সাব্যস্ত।

আল্লাহ্‌র নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: আদম সন্তানের নেতা এবং নবীদের সীলমোহর (খাতামুন্নাবিয়্যীন) তখন থেকে যখন আদম আলাইহিস সালাম কাদামাটি ছিলেন।

ইতিপূর্বে যা আলোচিত হয়েছে এর ভিত্তিতে সর্বোচ্চ যা বলা যায় তা হলো: আল্লাহ্‌র কিতাবের সাথে কোন না কোনভাবে সম্পৃক্ত হওয়া সম্পৃক্ত ব্যক্তির মর্যাদার অন্যতম একটি কারণ।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব