শুক্রবার 21 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 22 নভেম্বর 2024
বাংলা

সাঈ-এর পরে দুই রাকাত নামায পড়া কি সুন্নত?

প্রশ্ন

উমরা বা হজ্জের সাঈর পর দুই রাকাত নামায পড়ার হুকুম কি?

উত্তরের সংক্ষিপ্তসার

সাঈ-এর পর দুই রাকাত নামায পড়া সুন্নত নয়। এক্ষেত্রে তাওয়াফের উপর সাঈ-কে কিয়াস করা ঠিক নয়।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

সাঈ-এর পরে দুই রাকাত নামায পড়া সুন্নত নয়। হানাফী মাযহাবের আলেমগণ এটাকে মুস্তাহাব বলেছেন।

ইবনুল হুমাম (রহঃ) বলেন: “সাঈ শেষ করার পর মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত নামায পড়া মুস্তাহাব; যাতে করে তাওয়াফের মত সাঈ-র শেষ কাজটি হয় এটি। যেমনিভাবে তাওয়াফের সূচনা হয় নবী সাল্লাল্লাহু আলা্হি ওয়া সাল্লামের সূচনার মত হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করার মাধ্যমে। এই কিয়াসের কোন প্রয়োজন নেই। যেহেতু এ ব্যাপারে সরাসরি দলিল রয়েছে। সেটি হলো: আল-মুত্তালিব বিন আবি ওয়াদাআ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

رأيت رسول الله - صلى الله عليه وسلم - حين فرغ من سعيه ، جاء، حتى إذا حاذى الركن ، فصلى ركعتين في حاشية المطاف، وليس بينه وبين الطائفين أحد .

(আমি দেখেছি যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সাঈ শেষ করলেন তখন তিনি রুকন বরাবর এলেন এবং মাতাফের (তাওয়াফস্থলের) প্রান্তভাগে দুই রাকাত নামায পড়লেন। তাঁর মাঝে ও তাওয়াফকারীদের মাঝে আর কেউ ছিল না।)[মুসনাদে আহমাদ, সুনানে ইবনে মাজাহ ও সহিহ ইবনে হিব্বান][ফাতহুল কাদির (২/৪৬০) থেকে সমাপ্ত]

এই হাদিস দিয়ে দলিল পেশ করা দুটো দিক থেকে ভুল:

এক: হাদিসটির ভাষ্য হচ্ছে:  حين فرغ من سُبعه  (যখন তিনি সাতচক্কর সমাপ্ত করলেন); হাদিসটির ভাষ্য: (سعيه) (সাঈ শেষ করলেন) নয়। এখানে সাতচক্কর দ্বারা উদ্দেশ্য তাওয়াফের সাতচক্কর।

ইমাম নাসাঈ (২৯৫৯) ও ইবনে মাজাহ (২৯৮৫) এর বর্ণনাতে এসেছে:

عَنْ الْمُطَّلِبِ بْنِ أَبِي وَدَاعَةَ، قَالَ:   رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، حِينَ فَرَغَ مِنْ سُبُعِهِ، جَاءَ حَاشِيَةَ الْمَطَافِ، فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ، وَلَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الطَّوَّافِينَ أَحَدٌ   .

(আল-মু্ত্তালিব বিন আবি ওয়াদাআ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি দেখেছি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সাঈ শেষ করলেন তখন তিনি মাতাফের (তাওয়াফস্থলের) প্রান্তভাগে দুই রাকাত নামায পড়লেন। তাঁর মাঝে ও তাওয়াফকারীদের মাঝে আর কেউ ছিল না।)

এবং ইবনে খুজাইমা (৮১৫) ও ইবনে হিব্বান (২৩৬৩)-এর বর্ণনাতে তাওয়াফের কথাটি স্পষ্টভাবে উদ্ধৃত হয়েছে:

عَنِ الْمُطَّلِبِ بْنِ أَبِي وَدَاعَةَ قَالَ :   رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ فَرَغَ مِنْ طَوَافِهِ، أَتَى حَاشِيَةَ الْمَطَافِ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ، وَلَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الطَّوَّافِينَ أَحَدٌ  .

(আল-মু্ত্তালিব বিন আবি ওয়াদাআ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি দেখেছি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাওয়াফ শেষ করলেন তখন তিনি মাতাফের (তাওয়াফস্থলের) প্রান্তভাগে এসে দুই রাকাত নামায পড়লেন। তাঁর মাঝে ও তাওয়াফকারীদের মাঝে আর কেউ ছিল না।)

দুই: হাদিসটি দুর্বল। আলবানী ‘তামামুল মিন্নাহ’ (পৃষ্ঠা-৩০৩) বলেন: উল্লেখিত হাদিসটি দুর্বল। কেননা সেটি কাছির বিন কাছির বিন আল-মুত্তালিব এর বর্ণনা থেকে। এ সনদে তাকে কেন্দ্র করে মতভেদ হয়েছে। ইবনে উওয়াইনা বলেছেন: তার থেকে, তার পরিবারের কোন সদস্য থেকে, তিনি তার নানা আল-মুত্তালিবকে শুনেছেন।

ইবনে জুরাইজ বলেছেন: কাছির বিন কাছির আমাকে খবর দিয়েছেন তার পিতা থেকে তিনি তার দাদা থেকে।[সমাপ্ত]

আল-আজমী তার কৃত ইবনে খুজাইমার তাহকীকে (পাঠোদ্ধারে) বলেন: সনদটি দুর্বল। ইবনে জুরাইজ মুদাল্লিস এবং তিনি ‘থেকে থেকে’ বলে বর্ণনা করেছেন। এর সনদ নিয়ে এত মতভেদ রয়েছে যে, তা বিস্তারিত উল্লেখ করার সুযোগ এখানে নেই।[সমাপ্ত]

সহিহ ইবনে হিব্বানের ‘তাহকীকে’ (পাঠোদ্ধারে) শুআইব আল-আরনাউত হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।

সারকথা:

সাঈ-এর পর দুই রাকাত নামায পড়া সুন্নত নয়। এক্ষেত্রে তাওয়াফের উপর সাঈ-কে কিয়াস করা ঠিক নয়।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব