বৃহস্পতিবার 20 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 21 নভেম্বর 2024
বাংলা

জনৈক ব্যক্তি নিজের বাড়িটি তার প্রয়োজনগ্রস্ত সন্তানদের জন্য ওয়াকফ করে গেছেন, বাড়িটি পুরাতন হয়ে ধ্বসে পড়ার উপক্রম

প্রশ্ন

তিনি তার বাড়িটি তার ছেলে-মেয়েদের মধ্যে যারা প্রয়োজনগ্রস্ত তাদের জন্য ওয়াকফ করে গেছেন। তার মৃত্যুর দুই বছর পর বাড়িটি পুরাতন হয়ে যায় এবং ধ্বসে পড়ার উপক্রম হয়। এখন তার ছেলেমেয়েরা কী করবে? তারা কি বাড়িটি বিক্রি করে দিবে; কিংবা কী করবে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

সন্তান ও বংশধরদের জন্য ওয়াকফ করা সঠিক। এক্ষেত্রে ওয়াকফকারীর শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। যেমন তিনি যদি শর্ত করে থাকেন যে, ছেলেমেয়েদের মধ্যে কেবল প্রয়োজনগ্রস্ত যারা তাদের জন্য; তাহলে এই শর্ত বাস্তবায়ন করা আবশ্যক।

ইমাম বুখারী "সহিহ" গ্রন্থে বলেন: "যুবায়র (রাঃ) তাঁর ঘর সদকাহ করে দেন (ওয়াকফ করে দেন) এবং তার কন্যাদের মধ্যে যারা তালাক প্রাপ্তা তাদের ব্যাপারে বলেন: তারা কোন প্রকার ক্ষতিসাধন না করে এখানে বসবাস করতে পারবে; এবং তাদেরও যেন কোন কষ্ট দেয়া না হয়। তবে তারা যদি স্বামী গ্রহণ করে প্রয়োজনমুক্ত হয়ে যায় তাহলে সেখানে তাদের অধিকার থাকবে না।"

"যাদুল মুসতাকনি" গ্রন্থে বলেন: "যদি কেউ তার সন্তানের জন্য কিংবা অন্যের সন্তানের জন্য এবং এদের পর মিসকীনদের জন্য ওয়াকফ করে যায় তাহলে সে ওয়াকফ তার ছেলেমেয়ে সবার জন্য সমানভাবে কার্যকর হবে। এরপর তার ছেলেদের সন্তানের জন্য কার্যকর হবে; মেয়েদের সন্তানের জন্য নয়। অনুরূপভাবে যদি বলে: তার সন্তানদের সন্তান ও তার ঔরশজাত বংশধরদের জন্য (সেক্ষেত্রেও ছেলেদের সন্তানদের জন্য কার্যকর হবে)।"

দুই:

যদি ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায়; এর মেরামত ও সংস্কার প্রয়োজন হয় তাহলে এর অংশ বিশেষ বিক্রি করে বাকী অংশ বাসযোগ্য করা জায়েয। যদি আবাদ করা সম্ভবপর না হয় তাহলে পুরাটুকু বিক্রি দেওয়া হবে এবং এর মূল্য দিয়ে অপর একটি বাড়ি কিনে ওয়াকফ করা হবে।

ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন:

"মোদ্দা কথা হল: যদি ওয়াকফ সম্পত্তি বিরান হয়ে যায় কিংবা এর উপযোগ শূণ্য হয়ে যায়; যেমন— কোন ঘর ধ্বসে পড়ে গেল কিংবা জমি বিরান হয়ে অনাবাদী জমিতে পরিণত হয়ে গেল এবং এটাকে আবাদ করা সম্ভবপর না হয় কিংবা কোন মসজিদ ছেড়ে গ্রামবাসী অনত্র চলে গেল এবং এ জায়গায় এখন আর কেউ নামায পড়ে না কিংবা মসজিদটিতে মুসল্লিদের সংকুলান হচ্ছে না এবং একই জায়গায় মসজিদ সম্প্রসারণ করার সুযোগ নাই কিংবা গোটা মসজিদে ফাটল ধরেছে; ফলে গোটা মসজিদটি কিংবা মসজিদের অংশ বিশেষ আবাদ করা সম্ভবপর নয়; কিছু অংশ বিক্রি করা ছাড়া— তাহলে কিছু অংশ বিক্রি করে বাকী অংশ আবাদ করা জায়েয।

আর যদি মসজিদের কোন কিছুই কোন কাজে না লাগে তাহলে সম্পূর্ণ মসজিদটাই বিক্রি করে দেওয়া হবে।

আবু দাউদের বর্ণনায় ইমাম আহমাদ বলেন: যদি মসজিদের ভেতরে দুটো কাঠ থাকে এবং কাঠদ্বয়ের মূল্য থাকে তাহলে সে কাঠদ্বয় বিক্রি করে দিয়ে কাঠদ্বয়ের মূল্য মসজিদের জন্য খরচ করা জায়েয। সালেহ এর বর্ণনায় এসেছে: চোরের আশংকার কারণে এবং মসজিদের জায়গাটি নোংরা হলেও মসজিদ স্থানান্তর করা যাবে। কাযী বলেন: অর্থাৎ সেটা যদি নামায আদায়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে তখন।[আল-মুগনী (৫/৩৬৮) থেকে সমাপ্ত]

ড. আব্দুল আযিয বিন সাদ আল-দাগিছিরকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: আমার একটি ওয়াকফ আছে; যেটার মেরামত ও সংস্কার প্রয়োজন। ভাড়টিয়ারা সবাই বেরিয়ে গেছে। এখন ওয়াকফ সম্পত্তিটি মেরামত ও সংস্কারের জন্য শরয়ি করণীয় কী?

জবাবে তিনি বলেন: আবশ্যক হল ওয়াকফ সম্পত্তির আয় থেকে এটি সংস্কারের অর্থ গ্রহণ করা। যদি ওয়াকফের আয় মেরামতের জন্য যথেষ্ট না হয় তাহলে মুতাওয়াল্লি ওয়াকফ সম্পত্তিটি সংস্কার করার জন্য ঋণ গ্রহণ করবেন কিংবা অর্থায়ন গ্রহণ করবেন এবং ওয়াকফের আয় থেকে সেটা পরিশোধ করবেন। এটা করার উদ্দেশ্য আবাদ করা ও কাজে লাগানোর স্বার্থে। তবে, এক্ষেত্রে শর্ত হল বিচারকের অনুমতি থাকা এবং ওয়াকফকৃত জিনিসটি ভাড়া দিয়ে এর ভাড়া থেকে খরচ করাও সম্ভবপর না হওয়া। এক্ষেত্রে হাম্বলী আলেমগণ বিচারকের অনুমতি নেয়ার শর্ত করেন না। আল-বুহুতী বলেন: "ওয়াকফের মুতাওয়াল্লি বিচারকের অনুমতি ছাড়াই ওয়াকফের স্বার্থে ঋণ নিতে পারবেন; যেমনিভাবে ওয়াকফ সম্পত্তির জন্য কোন কিছু বাকীতে বা অনির্দিষ্ট নগদে খরিদ করেন।"

আর যদি ওয়াকফের আয় এটির সংস্কারের জন্য যথেষ্ট না হয়, ঋণ নেওয়াও সম্ভবপর না হয় তাহলে মুতাওয়াল্লি কিছু সম্পত্তি বিক্রি করে বাকীটুকু সংস্কার করতে পারবেন। হাম্বলী মাযহাবের আলেমগণ কিছু ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রি করে অবশিষ্ট ওয়াকফ সম্পত্তির সংস্কার করাকে জায়েয বলেছেন; যদি ওয়াকফকারী ও ওয়াকফের খাত অভিন্ন হয়। যেমন কেউ যদি দুটো ঘর ওয়াকফ করে যান এবং দুটো ঘরই নষ্ট হয়ে যায় তাহলে একটি বিক্রি করে সেটার মূল্য দিয়ে অপরটি আবাদ করা হবে; অন্য কোন ওয়াকফ থেকে আবাদ করা হবে না।"[সমাপ্ত]

তিন:

যদি ওয়াকফকারী তার ছেলেমেয়েদের পর কারা ওয়াকফের সুবিধাভোগী সেটা নির্দিষ্ট করে না যান এবং বলে না যান যে: তাদের সন্তানেরা কিংবা তাদের পর যারা আছে তারা কিংবা এরপর মিসকীনেরা। তাই সন্তানেরা সবাই যদি মারা যায় কিংবা তাদের মধ্যে প্রয়োজনগ্রস্ত কেউ না থাকে তাহলে এমন ওয়াকফ সুবিধাভোগী শূণ্য হয়ে পড়বে। এ ধরণের ওয়াকফ সম্পত্তির বিধান হল এটি ওয়াকফকারীর ওয়ারিশদের মাঝে ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে তাদের মিরাছের হিস্যা অনুযায়ী বণ্টিত হবে; যদি না ওয়াকফকারী অন্য কিছু বলে না যান।

দেখুন: "আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা (৪৪/১৪৭) 

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব