শুক্রবার 10 শাওয়াল 1445 - 19 এপ্রিল 2024
বাংলা

তার কুরবানীর পশুটি তার নির্দেশ ছাড়া জবাই করা হয়েছে

প্রশ্ন

আমি আমার বাবাকে জানিয়েছিলাম যে, ভীড়ের কারণে আমি কুরবানী ঈদের দ্বিতীয় দিন আমার পশুটি জবাই করব। কিন্তু ঈদের প্রথম দিন আমার ভাই এসে আমাদের বাসার দরজা নক করল এবং তার সাথে ছিল আমার জবাইকৃত কুরবানীর পশু। সে বলল যে, আমার বাবা অন্য পশুগুলোর সাথে সেটিও জবাই করার নির্দেশ দিয়েছেন। এমতাবস্থায় এই কুরবানীর হুকুম কি?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

যদি কোন মুসলিম কুরবানী করার জন্য কোন একটি বকরীকে নির্দিষ্ট করে রাখে; এরপর তার অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ সে পশুটি জবাই করে ফেলে তাহলে তার কুরবানী সহিহ; যদি কুরবানী করার সময়ের মধ্যে সেটি জবাই করা হয়। এক্ষেত্রে জবাইকারী ব্যক্তি পশুর মালিকের প্রতিনিধি গণ্য হবেন।

‘আল-মাওসুআ’ আল-ফিকহিয়্যা গ্রন্থে (৫/১০৫) এসেছে:

“ফিকাহবিদ আলেমগণ এই মর্মে একমত যে, কুরবানীর পশু জবাই করার ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্ব সঠিক; যদি সে প্রতিনিধি মুসলিম হন।”[সমাপ্ত]

প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে মূল বিধান হল মৌখিক অনুমতি। তবে যদি সমাজের প্রচলিত প্রথায় অনুমতি সাধিত হয় তাহলে সেটাও সঠিক হবে।

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন:

“শরিয়তের কায়েদাগুলো এই মর্মে স্থিতিশীল যে, প্রচলিত প্রথার অনুমতি মৌখিক অনুমতির মত।”[মাদারিজুস সালিক্বীন (২/১০১৯)]

প্রচলিত প্রথা ও পরিস্থিতির দলিল নির্দেশ করছে যে, আপনি আপনার পক্ষ থেকে পশুটি জবাই করার ব্যাপারে আপনার পিতাকে প্রতিনিধি হওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন। অতএব আপনার কুরবানী সঠিক।

আল-কুদুরী আল-হানাফি (রহঃ) বলেন:

“আমাদের আলেমগণ বলেন: যদি কেউ অন্যের কুরবানীর পশু তার অনুমতি ছাড়া জবাই করে তাহলে সেটা মালিকের কুরবানী হিসেবে যথেষ্ট হবে এবং জবাইকারীকে এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না।

শাফেয়ী (রহঃ) বলেন: কুরবানী হিসেবে আদায় হয়ে যাবে; তবে জবাইকারী জবাই করার মাধ্যমে পশুটির যতটুকু মূল্য কমেছে ততটুকু ক্ষতিপূরণ দিবে এবং সেটা মালিকের পক্ষ থেকে সদকা করে দিবে।

আমাদের কথা হল: এটি এমন একটি জবাই যা কুরবানী হিসেবে যথেষ্ট হয়েছে; সুতরাং এ জবাই-এর কারণে জবাইকারীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না...।

এবং যেহেতু অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ নিজের পশু নিজে জবাই করে না। বরং অন্যকে দিয়ে জবাই করায় এবং তাকে পারিশ্রমিক দেয়। কোন কোন ক্ষেত্রে কুরবানীর পশু জবাই করাটা শরিয়তের দৃষ্টিতে অবধারিত হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে পশুর মালিক এতে রাজি থাকেন যে, যে কেউ তার এ কাজটি করে দিবে এবং তাকে পারিশ্রমিক দিতে হবে না। এভাবে এক্ষেত্রে প্রথার ভিত্তিতে জবাইকারী অনুমতিপ্রাপ্ত হয়ে গেলেন। আর প্রথার মাধ্যমে অনুমতি দেয়া মৌখিকভাবে অনুমতি দেয়ার মত।”[আল-তাজরীদ (১২/৬৩৪১)]

আবু আব্দুল্লাহ্‌ আল-খিরাশী আল-মালিকী (রহঃ) বলেন:

“প্রতিনিধি নিযুক্তকরণ এটি মৌখিকভাবে যেমন হতে পারে তেমনি প্রচলিত অভ্যাসের মাধ্যমেও হতে পারে এবং তখন তা মৌখিকের স্থলাভিষিক্ত হবে। কিন্তু জবাইকারী বা উট নহরকারী যদি কুরবানীকারীর নিকটাত্মীয় কেউ হন এবং তার নিকট আত্মীয়ের কাজগুলো যদি সে করার অভ্যাস থেকে থাকে এবং ঐ ব্যক্তি তার আত্মীয়ের পশুটি জবাই বা নহর করে থাকে তাহলে মশহুর মতানুযায়ী সেটি পশুর মালিকের পক্ষ থেকে কুরবানী হিসেবে যথেষ্ট হবে।”[শারহু মুখতাছারি খালিল (৩/৪৩)]

ইমাম নববী আশ্‌-শাফেয়ি (রহঃ) বলেন:

“যদি কোন অচেনা ব্যক্তি কুরবানী করার সময়ের মধ্যে কোন নির্দিষ্ট একটি কুরবানীর পশু জবাই করে ফেলে কিংবা হাদির পশু জবাই-এর স্থানে পৌঁছার পর জবাই করে ফেলে: তাহলে প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী সেটি আদায় হয়ে যাবে...।

কেননা সেটি জবাই করার জন্য নিয়তের প্রয়োজন নেই। তাই অপর কেউ যদি সেটি করে ফেলে তাহলে তা আদায় হয়ে যাবে; নাপাকি নিষ্কাশনের ন্যায়।”[রাওযাতুত ত্বালিবীন (৩/২১৪) থেকে সমাপ্ত]

আল-মিরদাওয়ি আল-হাম্বলি (রহঃ) বলেন:

“যদি কোন জবাইকারী অনুমতি ছাড়া সময়সীমার মধ্যে জবাই করে ফেলে তাহলে সেটা আদায় হয়ে যাবে। জবাইকারীর ওপর ক্ষতিপূরণ বর্তাবে না।

যদি মালিক ছাড়া অন্য কেউ জবাই করে তাহলে হয়তো জবাইকারী মালিকের পক্ষ থেকে জবাই করার নিয়ত করবে; নয়তো সাধারণ নিয়ত করবে, কিংবা নিজের পক্ষ থেকে জবাই করার নিয়ত করবে। যদি মালিকের পক্ষ থেকে নিয়ত করে তাহলে সেটা আদায় হয়ে যাবে এবং জবাইকারীর ওপর কোন ক্ষতিপূরণ বর্তাবে না। এটাই মাযহাবের অভিমত এবং মাযহাবের আলেমগণ এ অভিমতের উপর বলবৎ আছেন এবং ‘আল-ফুরু’ ও অন্যান্য কিতাবে এই মতটিকে নিশ্চিত করা হয়েছে।”[আল-ইনসাফ (৯/৩৮৯) থেকে সমাপ্ত]

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব