আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
আল্লাহ্ যে আপনাকে তাওবা করার তাওফিক দিয়েছেন সেজন্য আমরা তাঁর প্রশংসা করছি এবং তাঁর কাছে দোয়া করছি তিনি যেন আপনাকে সত্যের উপর অটল ও অবিচল রাখেন।
দুই:
জ্যোতিষী ও গণকদের কাছে যাওয়া হারাম হওয়ার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অনেক হাদিস এসেছে। দেখুন: 8291 নং প্রশ্নোত্তর।
কিন্তু প্রত্যেক যে ব্যক্তি জ্যোতিষী বা গণকের কাছে গিয়েছে সেই-ই বড় শির্ককারী মুশরিক হয়ে যায়নি, ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়নি। বরং জ্যোতিষী ও গণকের কাছে যাওয়ার হুকুম বিশ্লেষণসাপেক্ষ। হতে পারে এটি বড় শির্ক। হতে পারে এটি গুনাহের কাজ। হতে পারে এটি জায়েয।
শাইখ উছাইমীন বলেন:
“জ্যোতিষীর কাছে গমনকারী মানুষ তিন ভাগে বিভক্ত:
প্রথম প্রকার: জ্যোতিষীর কাছে এসে তাকে জিজ্ঞেস করে; কিন্তু তাকে বিশ্বাস করে না। এটি হারাম। এর শাস্তি হচ্ছে চল্লিশ দিনের নামায কবুল না হওয়া। এ মর্মে সহিহ মুসলিমে (২২৩০) সাব্যস্ত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন গণকের কাছে এসে তাকে কোন কিছু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল হবে না”।
দ্বিতীয় প্রকার: কোন জ্যোতিষীর কাছে এসে তাকে জিজ্ঞেস করে এবং সে যা বলেছে তা বিশ্বাস করে। এটি আল্লাহ্র সাথে কুফরী। কেননা এ ব্যক্তি জ্যোতিষীকে তার গায়েবের জ্ঞানের দাবীতে বিশ্বাস করেছে। কোন মানুষকে তার গায়েবের জ্ঞান জানার দাবীতে বিশ্বাস করা মানে আল্লাহ্র এ বাণীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা:
قُلْ لَا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ
(বলুন, আসমান ও জমিনে যারা রয়েছে তাদের কেউ গায়েব জানে না; আল্লাহ্ ব্যতীত।)[সূরা নামল, আয়াত: ৬৫] এ কারণে সহিহ হাদিসে এসেছে: “যে ব্যক্তি কোন জ্যোতিষীর কাছে এসে তার কথায় বিশ্বাস করল সে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর যা নাযিল হয়েছে সেটাকে অস্বীকার করল”।
তৃতীয় প্রকার: কোন জ্যোতিষীর কাছে এসে তাকে জিজ্ঞেস করা; যাতে করে মানুষকে তার অবস্থা জানাতে পারে এবং জানাতে পারে যে, এটি জ্যোতিষীপনা, বিভ্রান্তি ও গোমরাহী। এতে কোন অসুবিধা নাই। এর দলিল হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে সায়্যাদের কাছে এসেছেন এবং তিনি নিজের মনে যা আছে সেটা তার কাছে গোপন রেখেছেন। এরপর তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তিনি কী গোপন রেখেছেন? তখন সে বলল: আদ্দুখ। সে বুঝাতে চেয়েছে: আদ্দুখান (ধোঁয়া)।”[সমাপ্ত]
[মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িলিস শাইখ ইবনে উছাইমীন (২/১৮৪)]
পূর্বোক্ত আলোচনার আলোকে যে ব্যক্তি কোন গণক বা জ্যোতিষীর কাছে আসবে, তার কথায় বিশ্বাস করবে এবং বিশ্বাস করবে যে, সে গায়েব জানে তাহলে সে বড় কুফরে লিপ্ত হল; যা তাকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দিবে। আর যদি তাকে বিশ্বাস না করে তাহলে কাফের হবে না।
যাই হোক; তাওবার দরজা উন্মুক্ত। যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্ বান্দার তাওবা কবুল করতে থাকেন; যতক্ষণ পর্যন্ত না গরগরা শুরু না হয়”।[সুনানে তিরমিযি (৩৫৩৭)]
অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষের রূহ কণ্ঠনালীতে চলে না আসে।
মানুষ যত গুনাহ থেকে তাওবা করুক না কেন আল্লাহ্ তার তাওবা কবুল করেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: "বলুন, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সকল গুনাহ মাফ করে দেন। নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু।”[সূরা আল-যুমার, আয়াত: ৫৩]
মানুষ যে কোন গুনাহতে লিপ্ত হোক না কেন; এরপর যদি তাওবা করে আল্লাহ্ তার তাওবা কবুল করেন; এমনকি সেটা যদি শির্ক হয় তবুও।
মূলবিধান হলো: কোন কাফের –এবং কাফেরের মত মুরতাদ (ইসলামত্যাগী)ও- কে দুই সাক্ষ্যবাণী উচ্চারণ করার নির্দেশ দেয়া হবে; যাতে করে সে ইসলামে প্রবেশ করতে পারে। তাই আপনার জ্যোতিষীর কাছে যাওয়াটা যদি পূর্বোল্লেখিত দ্বিতীয় প্রকারের হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই দুই সাক্ষ্যবাণী পড়তে হবে। যেহেতু আপনি তাওবা করেছেন, দ্বীনের উপর অটল আছেন তাই কোন সন্দেহ নেই যে, আপনি বহুবার এ সাক্ষ্যবাণীদ্বয় উচ্চারণ করেছেন। তাই এখন আপনার উপর আর কিছু আবশ্যক নয়। আপনার উপর আবশ্যক হলো: এমন কর্মে পুনরায় না ফেরার ব্যাপারে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয়া।
ইলমে দ্বীন হাছিলে সচেষ্ট হোন; যাতে করে জ্ঞানের ভিত্তিতে আল্লাহ্র ইবাদত করতে পারেন।
আমরা আল্লাহ্র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন আপনাকে তিনি যা ভালোবাসেন ও পছন্দ করেন তা করার তাওফিক দেন।