আলহামদু লিল্লাহ।.
ভুলে যাওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। তাই তো কবি বলেন:ইনসানকে ইনসান (ভুলকারী) নাম দেয়া হয়েছে যেহেতু সে ভুলে যায়।
আর কলব (অন্তর) কে কলব (পরিবর্তনশীল) নাম দেয়া হয়েছে যেহেতু সে পরিবর্তিত হয়।
আগেকার লোকেরা বলত: প্রথম ভুলকারী ব্যক্তি হচ্ছেন- প্রথম মানব। উদ্দেশ্য হচ্ছে- আদম (আঃ)। তবে ভুলে যাওয়ার সমস্যা প্রবৃত্তি অনুযায়ী এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির ক্ষেত্রে তারতম্য হয়ে থাকে। কিছু লোকের মাঝে ভুলে যাওয়ার সমস্যা প্রবল; আর কারো মধ্যে কম। ভুলে যাওয়ার সমস্যাকে মোকাবিলা করার উপায়সমূহ নিম্নরূপ:
এক: গুনাহ থেকে দূরে থাকা। কারণ গুনাহর কারণে মুখস্তশক্তিতে দুর্বলতা আসে; ইলম অর্জনে ঘাটতি আসে। ইলমের আলোর সাথে অজ্ঞতার অন্ধকার একত্রিত হয় না। ইমাম শাফেয়ীর একটি পংক্তি উল্লেখ করা হয়-
আমি ওকীর নিকট অভিযোগ করলাম আমার মুখস্তশক্তির দুর্বলতার
তিনি আমাকে গুনাহ পরিহার করার পরামর্শ দিলেন এবং বললেন:
আল্লাহর ইলম হচ্ছে- নূর; আল্লাহর নূর গুনাহগারকে দেয়া হয় না।
খতীব আল-জামে নামক গ্রন্থে (২/৩৮৭) ইয়াইয়া বিন ইয়াহইয়া থেকে বর্ণনা করেন যে, এক লোক মালেক বিন আনাসকে বললেন: হে আবু আব্দুল্লাহ! মুখস্তশক্তি বাড়ানোর কোন কিছু আছে কি? তিনি বলেন: যদি কোন কিছু থাকে তাহলে সেটা হল: গুনাহ পরিত্যাগ করা। যখন কোন মানুষ গুনাহ করে তখন এ গুনাহটি তাকে ঘিরে রাখে এবং গুনাহর ফলে তাকে দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা পেয়ে বসে। সে গুনাহর কারণে তার চিন্তাধারা মশগুল হয়ে থাকে। এভাবে এ দুশ্চিন্তা তার অনুভূতির উপর আধিপত্য বিস্তার করে থাকে এবং তাকে অনেক কল্যাণকর কাজ থেকে দূরে রাখে। এর মধ্যে মুখস্তশক্তি অন্যতম।
দুই: অধিক হারে আল্লাহর যিকির করা। যেমন- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি পড়া। আল্লাহ তাআলা বলেন: “যখন ভুলে যান তখন আল্লাহর যিকির করুন”[সূরা কাহাফ, আয়াত: ২৪]
তিন: বেশি না খাওয়া। যেহেতু বেশি খাওয়া বেশি ঘুম, নির্বুদ্ধিতা, স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নির্জীবতা ও অলসতার কারণ। এগুলো ছাড়া বেশি খাওয়া অনেক শারীরিক রোগের কারণ। যেমনটি বলা হয়:
অধিকাংশ রোগের কারণ হচ্ছে- পানাহার।
চার: কোন কোন আলেম এমন কিছু খাবারের কথা উল্লেখ করেছেন যেগুলো মুখস্তশক্তি বৃদ্ধি করে। যেমন- মধু ও কিসমিস খাওয়া এবং বিশেষ কিছু সুইংগাম চিবানো।
ইমাম যুহরী বলেন: তুমি মধু খাবে; কারণ এটি স্মৃতিশক্তির জন্য ভাল।
তিনি আরও বলেন: যে হাদিস মুখস্ত করতে চায় সে যেন কিসমিস খায়।[খতীব আল-বাগদাদীর ‘আল-জামে’ (২/৩৯৪)]
ইব্রাহিম বলেন: তোমরা সুইংগাম খাবে। এটি অন্তরকে উদ্বুদ্ধ করে, ভুলে যাওয়াকে বিদূরিত করে।[খতীব এর আল-জামে (২/৩৯৭)]
আলেমগণ আরও বলেন: অম্লজাতীয় খাবার স্মৃতিশক্তির জড়তা ও মুখস্তশক্তির দুর্বলতা বাড়ায়।
পাঁচ: মুখস্তশক্তি বৃদ্ধি ও ভুলে যাওয়ার সমস্যা প্রতিরোধে আরও যে জিনিসটি সাহায্য করে সেটি হচ্ছে- মাথায় শিংগা লাগানো। এটি পরীক্ষিত। (আরও বিস্তারিত জানতে ইবনুল কাইয়্যেম এর ‘আততিব্ব আন-নাবাবি’ পড়ুন।
আল্লাহই ভাল জানেন।