রবিবার 21 জুমাদাল ছানী 1446 - 22 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

দু’জনের মাঝে চ্যালেঞ্জমূলক প্রতিযোগিতার হুকুম, যদি পুরস্কার দর্শকদের পক্ষ থেকে দেয়া হয়

প্রশ্ন

নিম্নোক্ত লেনদেনের বিধান কী? এটা কি হারাম জুয়া বা বাজি ধরার মাঝে পড়বে? মোবাইলে সরাসরি সম্প্রচার হয় এমন একটা প্রোগ্রামে দুজনের মাঝে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া হবে। চ্যালেঞ্জের ধরন নিম্নরূপ: ১. চ্যালেঞ্জের নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকবে, যেটা চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী উভয় ব্যক্তি এবং চ্যালেঞ্জে উপস্থিত সবার জানা থাকবে। ২. চ্যালেঞ্জ শুরু করার আগে দুজনেরই ব্যালেন্স হবে শূন্য। ৩. চ্যালেঞ্জের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উভয়ের ব্যালেন্স উপস্থিত সবার কাছে দৃশ্যমান থাকবে। ৪. চ্যালেঞ্জ শুরু হলে উপস্থিত যে কেউ চাইলে চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী দুজনের একজনকে হীরা দিতে পারবে যেটা চ্যালেঞ্জকারীর ব্যালেন্সে যুক্ত হবে; যাতে তাকে জিতিয়ে দিতে পারে। ৫. চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী দুই ব্যক্তির মাঝে বিজয়ী হবে ঐ ব্যক্তি যার ব্যালেন্স প্রোগ্রাম শেষে অন্য জনের চাইতে বেশি হবে। ৬. চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী দুজনের মাঝে কেউ হীরা দিতে পারবে না, শুধু উপস্থিত অন্যান্য ব্যক্তিরা হীরা দিতে পারবে। হীরা এখানে কিছু ভার্চুয়াল জিনিস যেগুলো আসল অর্থ দিয়ে কেনা যায়, অথবা প্রোগ্রামের ভেতরে অন্যান্য পন্থায় অর্জন করা যায়।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

অধিকাংশ ফকীহের মতে উট, ঘোড়া বা তীরন্দাজির প্রতিযোগিতা ছাড়া অন্য কিছুর ক্ষেত্রে পুরস্কার, অর্থ বা অন্য কিছু বিনিময় হিসেবে দেওয়া জায়েয নেই। কেউ কেউ এই বৈধতার মাঝে অন্তর্ভুক্ত করেছেন কুরআন, হাদীস, ফিকহসহ দ্বীন প্রচারে সহায়ক সব ধরনের প্রতিযোগিতা।

উক্ত বিষয়ে মূল দলীল হল একটি হাদীস যা আবু দাউদ (২৫৭৪), তিরমিযী (১৭০০) ও ইবনে মাজাহ (২৮৭৮) বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তীর, ঘোড়া এবং উট ছাড়া অন্য কিছুর প্রতিযোগিতায় পুরস্কার নেই।” শাইখ আলবানী তার ‘সহীহ আবু দাউদ’ ও অন্যান্য বইয়ে এটাকে সহীহ বলেছেন।

হাদীসে سبق (সাবাক) বলতে বোঝানো হয়েছে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ব্যক্তির জন্য যে পুরস্কার বা প্রাপ্য নির্ধারণ করা হয়।

সিন্দী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “খাত্তাবী বলেন: প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অর্থ নেওয়া শুধুমাত্র এই দুই ক্ষেত্রে হালাল হবে। ক্ষেত্র দুটি হলো: উট ও ঘোড়া। এই দুটির সাথে যুক্ত করা হয়েছে এই দুটিরই কাছাকাছি বস্তু তথা যুদ্ধাস্ত্র। কারণ এগুলোতে পুরস্কার দেওয়ার মাধ্যমে জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহী করে তোলা হয়।”[হাশিয়াতুস সিন্দী আলা সুনান ইবনে মাজাহ: (২/২০৬) থেকে সমাপ্ত]

পুরস্কারটা প্রতিযোগীদের অর্থ থেকে হোক কিংবা তৃতীয় পক্ষ থেকে হোক, এতে কোনো পার্থক্য নেই। এগুলো সবই নিষিদ্ধ; কেবল তিনটি ক্ষেত্র ছাড়া যেগুলোর কথা সরাসরি দলিলে উদ্ধৃত হয়েছে এবং যা কিছুকে ইসলামের সাহায্য হিসেবে এ তিনটির অধিভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিযোগিতাটা যদি হয় প্রতিযোগীদের অর্থ থেকে, তাহলে সেটা জুয়া। আর যদি হয় অন্যদের অর্থ দিয়ে তাহলে সেটা জুয়া নয়; তবে হারাম। কারণ সেটা নিষিদ্ধ কাজের বিনিময়।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই প্রতিযোগিতাগুলো অনুপকারী বিষয়ে হয়ে থাকে। এমনকি হারাম বিষয়েও হয়ে থাকে। যেমন: গান বা অন্যান্য। হারাম বিষয়ে অর্থ ব্যয় করা জায়েয নেই। বুদ্ধিমান ব্যক্তি নিজের সম্পদ শুধু এমন কাজেই ব্যয় করে যাতে উপকার আছে। সুতরাং এমন প্রতিযোগিতা হারাম হওয়ার এটা আরেকটি কারণ।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা বলেন: “যদি দুই প্রতিযোগীর একজন অথবা তৃতীয় কেউ বিনিয়মটা দেয় তাহলে সেটা পুরস্কার প্রদানের আরেকটা রূপ। তদুপরি এটা করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেবল বৈধতা দেওয়া হয়েছে এমন ক্ষেত্রে যাতে উপকার রয়েছে। যথা: উট বা ঘোড়দৌড় কিংবা তীরন্দাজি। হাদীসে এসেছে: “ঘোড়া, উট এবং তীর ছাড়া অন্য কিছুর প্রতিযোগিতায় পুরস্কার নেই।” কারণ দ্বীন ও দুনিয়ার যে কাজে কোনো উপকার নেই তাতে অর্থ ব্যয় করা নিষিদ্ধ; যদিও সেটা জুয়া না হয়।”[মাজমুউল ফাতাওয়া (৩২/২২৩) থেকে সমাপ্ত]

সুতরাং এমন চ্যালেঞ্জমূলক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার দেওয়া হারাম, যদিও সেটা দর্শকদের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে।

আল্লাহ সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব