আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিম ব্যক্তিকে নির্দেশ দিয়েছেন সে যদি তার মুসলিম ভাইদের কোন কিছু দেখে বিমুগ্ধ হয় সে যেন তাদের জন্য বরকতের দোয়া করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“যদি তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের কিছু দেখে বিমুগ্ধ হয় সে যেন তার জন্য বরকতের দোয়া করে”।[মুয়াত্তা মালেক (২/৯৩৯), মুসনাদে আহমাদ (২৫/৩৫৫) ও সুনানে ইবনে মাজাহ (৩৫০৯)]
নির্দেশসূচক ক্রিয়া পৌনঃপুনিকতার অর্থ নির্দেশ করে কিনা— এ ব্যাপারে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। উসুলুল ফিকহ শাস্ত্রে স্থিরীকৃত সূত্র হলো: যদি নির্দেশসূচক ক্রিয়া পৌনঃপুনিকতার লক্ষণগুলো থেকে মুক্ত হয় তাহলে তা পৌনঃপুনিকতা দাবী করে না।
শাইখ মুহাম্মদ আল-আমীন আস-শানক্বিতী বলেন:
“ইমাম মুসলিম তাঁর সহিহ গ্রন্থে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “একবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে খোতবা দেন। তিনি বলেন: হে লোকসকল! আল্লাহ্ তোমাদের উপর হজ্জ ফরয করেছেন। অতএব তোমরা হজ্জ কর। তখন এক লোক বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! প্রতি বছর? তিনি চুপ করে থাকলেন। লোকটি কথাটি তিনবার বলল। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: যদি আমি হ্যাঁ বলি তাহলে ফরয হয়ে যাবে; কিন্তু তোমরা পালন করতে পারবে না। এরপর বললেন: আমি যে বিষয়টি এড়িয়ে যাই তোমরাও সেটাকে এড়িয়ে যাবে। তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতেরা অধিক প্রশ্ন করে ও তাদের নবীদের সাথে মতভেদ করে ধ্বংস হয়েছে। যখন আমি তোমাদেরকে কোন নির্দেশ দেই তখন তোমরা যতটুকু পার সেটা পালন কর। আর যখন আমি তোমাদেরকে কোন কিছু থেকে নিষেধ করি তখন সেটা বর্জন কর।[সমাপ্ত]
এই হাদিসের প্রমাণবহ কথাটুকু হল: “হে লোকসকল! আল্লাহ্ তোমাদের উপর হজ্জ ফরয করেছেন। অতএব তোমরা হজ্জ কর।” অনুরূপ হাদিস ইমাম আহমাদ ও ইমাম মুসলিমও সংকলন করেছেন। এই হাদিস দিয়ে দলিল দেয়া হয় যে, পৌনঃপুনিকতার লক্ষণমুক্ত নির্দেশ পৌনঃপুনিকতা দাবী করে না; যেমনটি উসুলুল ফিকহ শাস্ত্রে স্থিরীকৃত।”[আযওয়াউল বায়ান (৫/৭৪) থেকে সমাপ্ত]
তবে যদি পৌনঃপুনিকতার লক্ষণগুলো পাওয়া যায় তাহলে এই লক্ষণগুলোর আলোকে পৌনঃপুনিকতা অনিবার্য হয়। এর উদাহরণ হচ্ছে যদি নির্দেশকে কোন শর্ত এবং নির্দেশটিকে অনিবার্যকারী কোন হেতুর সাথে সম্পৃক্ত করা হয় সেক্ষেত্রে শরিয়তদাতার প্রজ্ঞার দাবী হচ্ছে শরয়ি হেতু পাওয়া গেলেই নির্দেশিত কর্মটির পুনরাবৃত্তি করা।
ইবনুল লাহ্হাম (রহঃ) বলেন:
“শরিয়তপ্রণেতা প্রজ্ঞাবান; তার ক্ষেত্রে স্ববিরোধিতা নাজায়েয। তাই তিনি যখন কোন বিধান দেন এবং সেই বিধানকে কোন হেতুর সাথে সম্পৃক্ত করেন তখন আমরা জানতে পারি যে, যখনই ঐ হেতুটি পাওয়া যাবে তখনই তিনি এই বিধানটি আরোপ করেন। আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।”[আল-কাওয়ায়েদ ওয়াল ফাওয়ায়েদ আল-উসুলিয়্যাহ (পৃষ্ঠা-২৪০) থেকে সমাপ্ত]
পূর্ববর্তী হাদিসে বরকতের দোয়া করার নির্দেশকে বিমুগ্ধতার অস্তিত্বের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এর দাবী হচ্ছে পুনঃপুন দেখার মাধ্যমে বিমুগ্ধতা অর্জিত হলে পুনঃপুন দোয়া করা।
দুই:
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি বরকতের দোয়া করেনি; বাহ্যতঃ যা প্রতীয়মান হয় সেটা হলো দৃষ্টিদানকারীর দুটো অবস্থা:
১। সে ব্যক্তি শক্তিশালী বিমুগ্ধতার গুণধারী হওয়া। যার ফলে সে তার ভাইকে বদনযরে আক্রান্ত করার ভয় করে। এমনটি হলে তার উপর বরকতের দোয়া করা ওয়াজিব। যেহেতু মুসলিম ভাইদের অনিষ্ট করা থেকে বিরত থাকা একজন মুসলিমের উপর আবশ্যক।
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন:
“যদি কোন নযরদানকারী তার দৃষ্টির দ্বারা ক্ষতি করা ও দৃষ্টি প্রদত্ত ব্যক্তিকে আক্রান্ত করার আশংকা করে তাহলে সে যেন اللهم بارك عليه (হে আল্লাহ্ তাকে বরকতময় করুন) বলার মাধ্যমে তার ক্ষতিকে প্রতিহত করে। যেমনিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমের বিন রাবীআ’কে বলেছিলেন যখন তিনি সাহল বিন হানীফকে নযরগ্রস্ত করেছিলেন: তুমি যদি ‘আল্লাহুম্মা বারিক আলাইহি’ বলতে।”[যাদুল মাআ’দ (৪/১৫৬) থেকে সমাপ্ত]
ইবনে আব্দুল বার্র (রহঃ) এটি বলা ওয়াজিব বলেছেন; তিনি বলেন:
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: أَلَا بَرَّكْتَ (তুমি বরকতের দোয়া করতে) প্রমাণ করে যে, যদি নযরদানকারী ব্যক্তি বরকতের দোয়া করে তাহলে তার নযর ক্ষতি করে না ও সীমা অতিক্রম করে না। বরঞ্চ যখন ব্যক্তি বরকতের দোয়া করে না তখন নযর সীমা অতিক্রম করে। তাই প্রত্যেক যে ব্যক্তি কোন কিছু দেখে বিমুগ্ধ হয় তার উপর ওয়াজিব বরকতের দোয়া করা। কারণ সে যখন বরকতের দোয়া করে তখন সে অনিষ্টকে প্রতিহত করে; এর ব্যত্যয় ঘটে না। আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।[আত্-তামহীদ (৬/২৪০-২৪১) থেকে সমাপ্ত]
কুরতুবী (রহঃ) তাঁর তাফসিরগ্রন্থে (১১/৪০১) ইবনে আব্দুল বার্রকে অনুসরণ করেছেন, অনুরূপভাবে ইবনুল মুলাক্কিনও ‘আত্-তাওযিহ’ গ্রন্থে (২৭/৪০১) এই মত উল্লেখ করেছেন।
২। যদি ব্যক্তি নযর লাগানোর জন্য প্রসিদ্ধ না হয়, নিজের থেকে ক্ষতির কোন ভয় না করে, নযরের মাধ্যমে তার ভাইকে ক্ষতিগ্রস্ত করার আশংকা না করে তদুপরি বরকতের দোয়া করা শরয়ি বিধান। যেহেতু এটি তার ভাইদের প্রতি ইহসান। তবে এই অবস্থায় বরকতের দোয়া করাকে কেউ ওয়াজিব বলেছেন মর্মে আমরা পাইনি।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।