বৃহস্পতিবার 20 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 21 নভেম্বর 2024
বাংলা

সিলওয়ানা ডায়মন্ড কোম্পানিতে বিনিয়োগ ও মার্কেটিং এর বিধান কী?

প্রশ্ন

সিলওয়ানা ডায়মন্ড নামে বিনিয়োগের একটা কোম্পানি আছে। এটা কৃষি পণ্য, পশু, স্বর্ণ অনুসন্ধান ও ইসলামী পণ্যে বিনিয়োগ করে। এই কোম্পানি GogolCoin নামক নতুন এক ডিজিটাল কোম্পানির শেয়ারগুলো ও ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের দ্বার উন্মুক্ত করেছে। বিনিয়োগের পদ্ধতি হল: আপনি কোম্পানির কোন একটা শেয়ার কেনার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করবেন। কমপক্ষে পাঁচশ ইউরো হতে হবে। আপনাকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন। এটা কোম্পানির সাথে আপনার চুক্তির সময়সীমা। বাজার অনুযায়ী আপনি মূলধনের কয়েক গুণ বেশি বা কম বা সমান লাভ পেতে পারেন। সেখানে এমন এক মার্কেটিং সিস্টেম আছে যে, আপনি যদি নব্বই দিন পূর্ণ হওয়ার আগে তিনজন মানুষ এনে দিতে পারেন, তাহলে তারা আপনাকে সাত বছরব্যাপী মাসিক ভাতা প্রদান করবে। ভাতাটা হবে আপনার বিনিয়োগকৃত অর্থের ৭-১০%। এর সাথে পাবেন যে মানুষগুলোকে আপনি নিয়ে আসবেন, তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থের ৫%। এর সাথে তারা আবার যাদেরকে নিয়ে আসবে সে সব মানুষের থেকে ২.৫% পাবেন। আর যদি নব্বই দিন পূর্ণ হয়ে যায় কিন্তু আমি তিনজন মানুষকে নিয়ে আসতে না পারি, তাহলে আমার একাউন্টটা ২০২৭ সাল পর্যন্ত শুধু বিনিয়োগকারী হিসেবে থাকবে; আমি মার্কেটিং-এর কোনো ভাতা পাব না। এমন বিনিয়োগ ও মার্কেটিং-এর হুকুম কী? মার্কেটিং-এর ভাতা ও বিনিয়োগের অর্থের মাঝে কোনো সম্পর্ক আছে কী? এটা কি সুদ হিসেবে গণ্য হবে?

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ বৈধ হওয়ার শর্তাবলি

যে কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগ বৈধ হওয়ার জন্য নিম্নোক্ত শর্তাবলী পূর্ণ হওয়া শর্ত:

১- বিনিয়োগের ক্ষেত্র বৈধ হওয়া। তাই কোম্পানিটা যেভাবে ঘোষণা দিয়েছে যে কৃষি ও পশু সম্পদে বিনিয়োগ করছে সেটা নিশ্চিত হতে হবে। প্রমাণিত হতে হবে যে কোম্পানির স্বর্ণের ব্যবসা বৈধ। কারণ স্বর্ণ বিক্রির শর্ত হল এক মজলিসে দুই পক্ষের লেনদেন সম্পন্ন হওয়া। তাই ইন্টারনেটে স্বর্ণ বিক্রি করা জায়েয নেই; এটা সুদ।

২- মূলধনের গ্যারান্টি প্রদান না করা। আমরা এই কোম্পানির বিজ্ঞাপনে দেখেছি যে কোম্পানিটি মূলধনের গ্যারান্টি দিচ্ছে। এটা অংশীদারিত্বকে নষ্ট করে দেয় এবং এই কোম্পানীতে অংশ নেওয়াকে হারাম করে দেয়। কারণ মূলধনের গ্যারান্টি দেয়া হলে সেটা ঋণ। আর ঋণের সাথে যদি লাভের শর্ত করা হয় তাহলে সেটা সুদভিত্তিক হারাম ঋণ।

৩- লভ্যাংশের ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আবশ্যকতা; মূলধনের অংশের ব্যাপারে নয়। বিনিয়োগের চুক্তিতে দেখতে হবে এতে কোম্পানির লভ্যাংশ কতটুকু এবং বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ কতটুকু।

৪- কোম্পানিকে অবশ্যই সুদী ঋণ নেওয়া কিংবা সুদী একাউন্টে অর্থ রাখা থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি কোম্পানি এমনটি করে তাহলে কোম্পানির শেয়ারগুলো মিশ্র হয়ে যাবে। মিশ্র শেয়ার হারাম হওয়ার ব্যাপারে ইসলামী ফিকহ একাডেমি থেকে সিদ্ধান্ত ইস্যু হয়েছে। 

কোম্পানি সুদী ঋণ দেয় কিনা কিংবা সুদী একাউন্টে অর্থ রাখে কিনা সেটা জানার জন্য আপনি ঐ কোম্পানির বাৎসরিক রিপোর্ট দেখবেন।

পূর্বোক্ত তথ্যগুলো সেক্ষেত্রে পাওয়া যাবে যদি কোন কোম্পানি সিরিয়াস হয় এবং এর বাৎসরিক রিপোর্ট থাকে। কিন্তু এই কোম্পানি নিজেদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এর কিছুই রাখেনি?!

কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগে ইচ্ছুক প্রত্যেক ব্যক্তিকে আমরা উপদেশ দিব তিনি যেন কোম্পানির বিগত বছরগুলোর অর্থনৈতিক রিপোর্ট চান। রাষ্ট্রগুলো সকল কোম্পানিকে অর্থনৈতিক রিপোর্ট দিতে ও রিপোর্টটি প্রকাশ্য রাখতে বাধ্য করে। এর থেকে পরিস্কার হয়ে যায় যে, কোম্পানি অমুক অমুক খাতে বিনিয়োগ করার দাবীর সত্যতা কতটুকু এবং আসলে কি কোম্পানি সুদী বন্ডে অর্থ রাখে কিংবা হারাম খাতে বিনিয়োগ করে; নাকি করে না।

উক্ত শর্তাবলি পূর্ণ হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত না হলে এই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা আপনার জন্য বৈধ হবে না।

দুই:

মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (MLM)-এর বিধান

উল্লেখিত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (MLM)-এ অংশগ্রহণ করা হারাম। কারণ এটা জুয়ার উপর নির্ভরশীল। এভাবে প্রত্যেক যে মার্কেটিং-এ মার্কেটিংকারীকে একটা ফি দিতে হয় কিংবা উৎপাদিত পণ্য, শেয়ার বা অন্য কিছু কেনার শর্ত দেওয়া হয় সে মার্কেটিং হারাম। জুয়া হলো: এমন প্রতিটি লেনদেন যার ক্ষতি সুনিশ্চিত; আর লাভ সম্ভাব্য।

ক্রিপ্টো কারেন্সি অথবা খনন (Mining)-এর সাথে যুক্ত মার্কেটিং: হারাম মার্কেটিং। কারণ এখানে মানুষ অর্থ প্রদান করা ছাড়া মার্কেটিং করতে পারে না; হয় সদস্যপদের জন্য নতুবা পণ্যের মূল্য হিসেবে কিংবা শেয়ারের মূল্য হিসেবে কিংবা অন্য কোন নামে। তাকে কিছু দিতেই হয়। মানুষ অর্থ দেয় এই আশায় যে সে অন্যদেরকে আহ্বান করার মাধ্যমে এখান থেকে বেশি উপার্জন করতে পারবে। এটা হতেও পারে, না হতেও পারে। এটাই জুয়ার স্বরূপ। পণ্য এখানে একটা ধোঁকা মাত্র কিংবা পণ্যটা বর্ধিত দামে বিক্রি করা হয়। যিনি অতিরিক্ত দাম দেন তিনি মার্কেটিং-এর মাধ্যমে যে কমিশনপ্রাপ্তির আশা করেন সেটার বিপরীতে সন্তুষ্ট থাকেন। এই কমিশনটাই উদ্দিষ্ট। হতে পারে কোন বিনিয়োগকারীর মূল উদ্দেশ্যই এই কমিশন।

আল্লাহ সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব