রবিবার 28 শাওয়াল 1446 - 27 এপ্রিল 2025
বাংলা

বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করার মাধ্যমে অর্থ ইনকাম করার হুকুম

প্রশ্ন

ওয়েবসাইটটির নাম sovrntur.com। এর কাজের পদ্ধতি নিম্নরূপ: ওয়েবসাইটে

সাবস্ক্রাইব করলে আপনাকে দশটি এড দেখতে দেওয়া হবে। প্রত্যেক এড থেকে সামান্য পরিমাণ অর্থ আপনি উপার্জন করবেন। এডগুলোর মূল্য দশ লিরা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। দ্বিতীয় দিনে আপনাকে আরো দশটি এড দেখতে দেয়া হবে। এর থেকে আরো দশ লিরার মতো লাভ করবেন। মোট উপার্জন হবে বিশ লিরা। আমরা আমাদের ব্যাংক একাউন্টের বিবরণ সংযুক্ত করব। মোট ব্যালেন্স থেকে আমরা ৯২% উত্তোলন করতে পারব। একই দিনে ঐ অর্থ অ্যাকাউন্টে চলে আসে। আর অন্যান্য দিনগুলোতে অ্যাকাউন্টে কিছু অর্থ জমা রাখা ছাড়া এড ওপেন করা যাবে না। যেমন: আমরা দুইশ লিরা জমা রাখলে প্রতিদিন আমরা দশটি করে এড খুলতে পারব, দশ লিরার বিনিময়ে হবে। এডের প্রদত্ত মূল্য অনুসারে এর থেকে কিছু কম-বেশি হতে পারে। আমরা ছয়শ লিরা জমা রাখলে আমাদের জন্য ত্রিশ লিরার বিনিময়ে দশটি এড খোলা সম্ভব। এর থেকে একটু কম-বেশি হতে পারে। এভাবে চলতে থাকবে। এডগুলো আমাদের প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ অনুসারে বিভিন্ন রকম হবে। অবশ্য একাউন্টে অর্থ জমা রাখার দুই মাস পরে সেটা উত্তোলন করা যাবে। আর যেদিন আমরা এডগুলোতে ক্লিক করব সেদিন লাভ করা যাবে। যেদিন এড ওপেন করব না সেদিন আমাদের কোনো লাভ নেই। সুতরাং লাভ হবে ওয়েবসাই্টে কাজ করার উপর ভিত্তি করে। নতুবা হবে না। ওয়েবসাইটের ভেতর কাজের ধরন এটি। এর হুকুম কী? উল্লেখ্য, আমি অর্থ জমা রেখেছি। আমি প্রতিদিন কিছু অর্থ পাই; যা আমার দৈনন্দিন খরচের চেয়ে যৎসামান্য পরিমাণ অর্থ । আশা করি আপনি এই ওয়েবসাইটের হুকুম এবং এতে টাকা জমা করার হুকুম বর্ণনা করবেন। আর যদি হারাম হয়ে থাকে তাহলে করণীয় কী?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

বিজ্ঞাপনে ক্লিক করার মাধ্যমে লাভ করা জায়েয। তবে দুই শর্তে:

প্রথম শর্ত: বিজ্ঞাপনগুলো বৈধ হওয়া। কারণ বিজ্ঞাপনে ক্লিক করা, এর দর্শক বেশি হওয়া বিজ্ঞাপনটির প্রচার ও সমর্থন হিসেবে গণ্য করা হয়। খারাপ জিনিসের প্রচারণা করা ও বিজ্ঞাপন প্রদান করা জায়েয নেই। কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেন:

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

“তোমরা সৎকাজ ও আল্লাহভীতিতে পরস্পর সহযোগিতা করো, পাপ ও সীমালঙ্ঘনে একে অপরকে সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।”[সূরা মায়েদা: ২]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি বিভ্রান্তির দিকে আহ্বান করবে, সে তার অনুসরণ কারীদের সমপরিমাণ পাপের অধিকারী হবে, অথচ তাদের (অনুসরণ কারীদের) পাপের অংশ থেকে কোন কিছু কম করা হবে না।”[হাদীসটি মুসলিম (৪৮৩১) বর্ণনা করেন]

সুতরাং পর্ণগ্রাফির ওয়েবসাইট, মদ বিক্রির ওয়েবসাইট, সুদী ব্যাংকের ওয়েবসাইট, জুয়ার ওয়েবসাইট, খ্রিষ্টধর্মে ধর্মান্তর করাসহ অন্যান্য যে সকল ওয়েবসাইট হারামের প্রচার-প্রসার করে সেগুলোর এডগুলোতে ক্লিক করা জায়েয নেই। 

দ্বিতীয় শর্ত: মজুরি বা প্রাপ্য জানা থাকতে হবে। যেমন: একটি এড দেখা বা তাতে ক্লিক করার বিনিময় এই পরিমাণ অর্থ। যদি পারিশ্রমিকের পরিমাণ অজানা হয় তাহলে চুক্তি সঠিক হবে না।

দুই:

ওয়েবসাইটে অর্থ জমা রাখা জায়েয নেই। কারণ শরয়ি দৃষ্টিতে জমাকৃত এ অর্থ আপনি ওয়েবসাইটকে ঋণ দিচ্ছেন। ঋণ হলো কারো থেকে অর্থ নিয়ে উপকৃত হওয়া এবং তাকে ফেরত দেওয়ার দায় বহন করা। আর ক্রয়বিক্রয়, ভাড়া অথবা মজুরির মতো বিনিময় চুক্তিতে ঋণের শর্ত করা জায়েয নেই।

তিরমিযী (১২৩৪), আবু দাউদ (৩৫০৪) ও নাসাঈ (৪৬১১) বর্ণনা করেছেন: আমর ইবন শুয়াইব থেকে তিনি তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, তিনি বলেন: “ঋণ ও ক্রয়বিক্রয় একত্রে হালাল নয়।”[হাদীসটি তিরমিযী ও আলবানী বিশুদ্ধ বলে গণ্য করেন]

এ ক্ষেত্রে অন্য সকল বিনিময় চুক্তি বিক্রয় চুক্তির অধিভুক্ত হবে।

মার্জিনের ব্যাপারে ইসলামী ফিকহ একাডেমির সিদ্ধান্তে এসেছে: “দুই: কাস্টমারকে যদি শর্ত দেওয়া হয় যে ব্যবসা একজন দালালের মাধ্যমেই হতে হবে তাহলে এতে ঋণ ও দালালি চুক্তি উভয়টি একত্রিত হয়ে পড়ে। আর এটি ঋণ ও ক্রয়বিক্রয় চুক্তি উভয়টি একত্রিত হওয়ার অর্থবোধক, যা শরীয়তে নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “ঋণ ও ক্রয়বিক্রয় একত্রে হালাল নয়।”[হাদীসটি আবু দাউদ (৩/৩৮৪) ও তিরমিযী (৩/৫২৬) বর্ণনা করেন। তিরমিযী বলেন: হাদীসটি হাসান সহীহ] এতে করে সে ঋণ থেকে উপকৃত হলো। আর ফকীহরা সবাই একমত যে, কোনো ঋণ যদি লাভ নিয়ে আসে তাহলে সেটি হারাম সুদ।”[সমাপ্ত]

সারকথা হলো, অর্থের পরিমাণ যাই হোক না কেন তা এ ওয়েবসাইটে রাখা জায়েয নেই।

আপনার উচিত তাওবা করে আপনার অর্থ উত্তোলন করে ফেলা।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব