আলহামদু লিল্লাহ।.
নামায আদায় করার জন্য নারীদের মসজিদে যাওয়া জায়েয আছে। তবে কিছু শর্ত আছে। এই শর্তসমূহের মধ্যে ‘মোহরেম সঙ্গে থাকতে হবে’ এমন কোন শর্তনেই। তাই সালাতের আদায়ের জন্য মোহরেম ছাড়া মসজিদে যেতে কোন বাধা নেই।
ফাতাওয়াল্ লাজনাহ আদ্দায়িমা (ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র) ৭/৩৩২) তে এসেছে: সালাত আদায় করার জন্য মুসলিম নারীর মসজিদে যাওয়া জায়েয। কোন নারী তার স্বামীর কাছে এ ব্যাপারে অনুমতি চাইলে স্বামী তাকে নিষেধ করতে পারবে না; যদি তিনি পর্দা করে বের হন এবং তার শরীরের এমন কিছু উন্মুক্ত না থাকে যা গায়রে-মোহরেম কেউ দেখা হারাম। এর দলীল হচ্ছে- ইবনে উমর (রাঃ) বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: “আপনাদের নারীরা যদি আপনাদের কাছে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চায়, তাহলে তাদেরকে অনুমতি দিন।”অন্য এক রেওয়ায়েতে এসেছে- “নারীদেরকে তাদের মসজিদে যাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন না, যদি তাঁরা আপানাদের কাছে অনুমতি চায়।”বিলাল বললেন (তিনি হলেন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর(রাঃ) এর পুত্র: আল্লাহর কসম আমি তাদেরকে (নারীদেরকে) অবশ্যই নিষেধ করব।তখন তাকে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ)বললেন: আমি বলছি, “রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেছেন” আর তুমি বলছ “অবশ্যই আমি তাদেরকে নিষেধ করব?”[সহীহ মুসলিম (৪৪২)।] তবে নারী যদি পর্দা না করে এবং তার শরীরের এমন কোন অংশ উন্মুক্ত থাকে যা গায়রে মোহরেম পুরুষের দেখা হারাম অথবা নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে তবে তার জন্য এ অবস্থায় ঘর থেকে বের হওয়াই জায়েয নয়। নামাযের জন্য মসজিদের উদ্দেশ্য বের হওয়া তো আরও দূরের বিষয়। কারণ এতে ফিতনা রয়েছে।আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:“আপনি মু’মিন নারীদেরকে বলে দিন যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে।আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না।তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে এবং নিজ স্বামী... ছাড়া অন্য কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।”[সূরা নূর২৪:৩১] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন :
“হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের ‘জিলবাব’(সর্বাঙ্গ আচ্ছাদনকারী চাদর)এর কিছু অংশ নিজেদের (মুখের) উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে (দাসী নয়, স্বাধীন হিসেবে) চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[সূরা আল-আহযাব৩৩:৫৯]
যয়নব আস-সাক্বাফিয়্যাহ হতে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন: “আপনাদের (নারীদের) কেউ এশার সালাতে উপস্থিত হতে চাইলে, তিনি যেন সেই রাতে সুগন্ধি ব্যবহার না করেন।”অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, “আপনাদের (নারীদের) কেউ মসজিদে উপস্থিত হতে চাইলে, তিনি যেন সুগন্ধি স্পর্শ না করেন।”[সহীহমুসলিম (৪৪৩)]। সহীহ হাদিসসমূহে প্রমাণিত হয়েছে যে, মহিলা সাহাবীগণ তাদের কাপড় দিয়ে মুখমণ্ডলসহ শরীর আবৃতকরে ফজরের জামাতে উপস্থিত হতেন। এতে কোন মানুষ তাদেরকে চিনতে পারত না।
‘আমরাহ বিনতে আব্দুর রহমান থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: “আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামএর স্ত্রী আয়েশারাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন:“বর্তমানে নারীরা যা শুরু করেছেতা যদি রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামদেখতেন তবে তিনি মহিলাদের জন্য মসজিদে যাওয়ানিষেধ করে দিতেন; যেভাবে বনী ইসরাঈলের নারীদের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।আমরাহকে জিজ্ঞেস করা হলো: বনী ইসরাঈলের নারীদের জন্য কি মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিল?তিনি বললেন: হ্যাঁ।[সহীহ মুসলিম (৪৪৫)]
এই দলীলগুলো থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যায় যে, মুসলিম নারী যদি তার পোশাকের ক্ষেত্রে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলে এবং ফিতনার উদ্রেককারী ও দুর্বল ঈমানদারের মনেআকর্ষণ সৃষ্টিকারী সৌন্দর্যপ্রদর্শন থেকে বিরত থাকে, তবে তাকে মসজিদে সালাত আদায় করা থেকে নিষেধ করা যাবেনা। আর যদি সে এমন অবস্থায় থাকে যা মন্দ লোকদের মাঝে আকর্ষণ তৈরী করে এবং যাদের ঈমান নড়বড়ে তাদেরকে ফিতনায় ফেলে দেয় তবে তাকে মসজিদে প্রবেশেবাধা দেয়া হবে। বরং তাকে নিজ বাড়ির বাইরে যাওয়া থেকে এবং নারী-পুরুষ সবার জন্য উন্মুক্ত স্থানগুলোতে প্রবেশ করা থেকে বাধা দেয়া হবে।”সমাপ্ত শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে উছাইমীনরাহিমাহুল্লাহ মাজমূ আল-ফাতাওয়া(১৪/২১১) এ বলেছেন: “যদি ফিতনার আশংকা না থাকে তবে তারাবীর সালাতে নারীদের উপস্থিত হওয়াতে কোন সমস্যা নেই।তবে শর্ত হলো- তারা শালীনভাবে সৌন্দর্য প্রকাশ না করে বের হবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করবে না।”সমাপ্ত শাইখ বকর আবু যাইদ তার ‘হিরাসাতুল ফাদ্বিলাহ’ (পৃ-৮৬) নামক গ্রন্থে নারীদের মসজিদে বের হওয়ার সকল শর্ত একত্রিত করেছেন। সেখানে তিনি বলেন:
“নিম্নোক্তবিধিবিধানের আলোকে মুসলিম নারীকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে:
(১) সে নিজে ফিতনায় পড়া অথবা তার দ্বারা অন্য কেউ ফিতনাগ্রস্ত হওয়া থেকে আশংকামুক্ত হওয়া।
(২) তার সেখানে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে শরিয়তকর্তৃক নিষিদ্ধ কোন বিষয় সংঘটিত না হওয়া।
(৩) রাস্তায় অথবা মসজিদে পুরুষদের সাথে ভিড় না করা।
(৪) সুগন্ধি ব্যবহার না করে বের হওয়া।
(৫) পরিপূর্ণ হিজাব পরিধান করাযাতে কোন প্রকার সৌন্দর্য প্রকাশ না হয়।
(৬) নারীদের জন্য মসজিদের আলাদা প্রবেশপথ থাকা। যাতে নারীরাসে পথ দিয়ে প্রবেশ করতে পারে ও বের হতে পারে।এই প্রসঙ্গে সুনানে আবু দাউদ ও অন্যান্য গ্রন্থে হাদিস সাব্যস্ত হয়েছে।
(৭) নারীদের কাতার পুরুষদের কাতারের পিছনে হওয়া।
(৮) নারীদের কাতারের মধ্যে উত্তম হলো সর্বশেষ কাতার। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে এর বিপরীত।
(৯) যদি ইমাম নামাযে কোন ব্যতিক্রম করে তবে পুরুষরা তাসবীহ পাঠ করবে এবং নারীরা ডান হাতের তালু দিয়ে বাম হাতের কব্জির উপর তালি দিয়ে শব্দ করবে।
(১০) নারীরা পুরুষদের আগে মসজিদ থেকে বের হবে। নারীরা ঘরে পৌঁছা পর্যন্তপুরুষরা অপেক্ষা করবে।এ প্রসঙ্গে উম্মে সালামাহরাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে সহীহ বুখারীতে ও অন্যান্য কিতাবে হাদিস প্রমাণিত হয়েছে।”সমাপ্ত