আলহামদু লিল্লাহ।.
নামাযের সুন্নতগুলো কি কি
নামাযের সুন্নত অনেক। এর মধ্যে কোন কোন সুন্নত বাচনিক এবং কোন কোন সুন্নত কর্মকেন্দ্রিক। সুন্নত দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- নামাযের আরকান ও ওয়াজিব ছাড়া অন্য যা আছে সেসব।
কোন কোন ফিকাহবিদ নামাযের ১৭ টি বাচনিক সুন্নত ও ৫৫ টি কর্মকেন্দ্রিক সুন্নত উল্লেখ করেছেন। কোন সুন্নত ছুটে যাওয়ার কারণে নামায বাতিল হয় না; এমনকি ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিলেও নামায বাতিল হয় না। তবে, আরকান ও ওয়াজিবগুলোর বিধান এমন নয়।
রুকন ও ওয়াজিব এর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে- নামাযের কোন রুকন ইচ্ছাকৃতভাবে কিংবা ভুলক্রমে বাদ পড়তে পারবে না। বরং রুকনটি অবশ্যই পালন করতে হবে।
আর ওয়াজিব ভুলক্রমে ছুটে গেলে সহু সেজদার মাধ্যমে সেটা শোধরে নেয়া যায়।
এখানে আমরা নামাযের আরকান ও ওয়াজিবগুলো উল্লেখ করাকে প্রাসঙ্গিক মনে করছি; এরপর আমরা ‘দলিলুত ত্বালেব’ গ্রন্থ থেকে বেশ কিছু সুন্নত উল্লেখ করব। এ বইটি হাম্বলি মাযহাবের প্রসিদ্ধ পুস্তিকা:
এক: নামাযের রুকন ১৪টি
নামাযের রুকন ১৪টি; সেগুলো হচ্ছে-
১। সক্ষম ব্যক্তির জন্য ফরয নামায দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা।
২। তাকবীরে তাহরীমা তথা ‘আল্লাহু আকবার’ বলা।
৩। সূরা ফাতিহা পড়া।
৪। রুকু করা। রুকুর ন্যূনতম রূপ হচ্ছে- এতটুকু ঝুঁকা যাতে করে দুই হাতের তালু দিয়ে হাঁটুদ্বয় স্পর্শ করা যায়। আর পরিপূর্ণ রূপ হচ্ছে- পিঠকে সমানভাবে প্রসারিত করে রাখা; যাতে করে মাথা ও পিঠ একই সমান্তরাল রেখায় থাকে।
৫। রুকু থেকে দাঁড়ানো।
৬। পরিপূর্ণভাবে সোজা হয়ে দাঁড়ানো।
৭। সেজদা করা। সেজদার পরিপূর্ণ রূপ হচ্ছে- কপাল, নাক, হাতের তালুদ্বয়, হাঁটুদ্বয় ও আঙ্গুলের ডগা সেজদার স্থানে ভালভাবে লাগিয়ে রাখা। আর ন্যূনতম রূপ হচ্ছে- প্রত্যেক অঙ্গের কিছু অংশ সেজদার স্থানে রাখা।
৮। সেজদা থেকে উঠা।
৯। দুই সেজদার মাঝখানে বসা। যে পদ্ধতিতে বসা হোক যথেষ্ট হবে। তবে সুন্নত পদ্ধতি হচ্ছে- বাম পায়ের ওপর বসে ডান পা খাড়া করে রাখা ও ডান পায়ের আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী করে রাখা।
১০। প্রত্যেকটি রুকন ধীরস্থিরভাবে আদায় করা।
১১। শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়া।
১২। তাশাহুদ ও দুই সালাম ফেরানোর জন্য বসা।
১৩। দুইদিকে সালাম ফেরানো। সালাম ফেরানোর পদ্ধতি হচ্ছে- ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলা। নফল নামাযের ক্ষেত্রে একদিকে সালাম ফেরানো যথেষ্ট; জানাযার নামাযের ক্ষেত্রেও।
১৪। উল্লেখিত ক্রমধারা রক্ষা করে রুকনগুলো আদায় করা। তাই কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে রুকুর আগে সেজদা করে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। আর ভুলক্রমে আগে সেজদা দিয়ে ফেললে ফিরে এসে রুকু করতে হবে; তারপর আবার সেজদা করবে।
দুই: নামাযের ওয়াজিব আটটি
নামাযের ওয়াজিব আটটি, সেগুলো হচ্ছে-
১। তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া অন্য তাকবীরগুলো বলা।
২। ইমাম ও একাকী নামায আদায়কারীর ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদা’ (যারা আল্লাহর প্রশংসা করেছেন আল্লাহ তাদের প্রশংসা শুনেছেন) বলা।
৩। ‘রাব্বা-না লাকাল হামদ’ (হে আমাদের রব্ব! প্রশংসা আপনারই জন্য) বলা।
৪। রুকুতে গিয়ে ‘সুবহানা রাব্বিআল আযিম’ (পবিত্রতা আমার সুমহান রব্বের জন্য) বলা।
৫। সেজদাতে গিয়ে ‘সুবহানা রাব্বিআল আ’লা’ (পবিত্রতা আমার সুউচ্চ রব্বের জন্য) বলা।
৬। দুই সেজদার মাঝখানে ‘রাব্বিগ ফির লি’ (হে আমার রব্ব! আমাকে ক্ষমা করুন) বলা।
৭। প্রথম বৈঠকে তাশাহুদ পড়া।
৮। প্রথম বৈঠক।
তিন: নামাযের বাচনিক সুন্নত ১১টি
নামাযের বাচনিক সুন্নত ১১টি; সেগুলো হচ্ছে-
১। তাকবীরে তাহরীমার পর ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বি হামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা, ওয়া লা ইলাহা গায়রুক’ (অর্থ- হে আল্লাহ! আপনি পাক-পবিত্র, সকল প্রশংসা আপনারই জন্য। আপনার নাম মহিমান্বিত। আপনার মর্যাদা সমুন্নত। আপনি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোন উপাস্য নেই।) এই দোয়া বলা।
২। আউযুবিল্লাহ পড়া।
৩। বিসমিল্লাহ পড়া।
৪। ‘আমীন’ বলা।
৫। সূরা ফাতিহার পর অন্য একটি সূরা পড়া।
৬। ইমামের জন্য উচ্চস্বরে ক্বিরাত পড়া।
৭। মোক্তাদি ছাড়া অন্যদের জন্য ‘সামি আল্লাহু লিমান হামিদা’ বলার পর এই দোয়াটি পড়া ‘মিলআল সামাওয়াতি, ওয়া মিলআল আরযি, ওয়া মিলআ মা শি’তি বাদ’ (অর্থ- হে আল্লাহ! আপনার জন্য ঐ পরিমাণ প্রশংসা যা আসমান ভর্তি করে দেয়, যা জমিন ভর্তি করে দেয় এবং এগুলো ছাড়া অন্য যা কিছু আপনি চান সেটাকে ভর্তি করে দেয়)। [তবে, সঠিক মতানুযায়ী এ দোয়াটি পড়া মোক্তাদির জন্যেও সুন্নত]।
৮। রুকুর তাসবীহ একবার পড়ার পর অতিরিক্ত যতবার পড়া হয়। অর্থাৎ দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার কিংবা আরও যত বেশি বার পড়া হোক না কেন?
৯। সেজদার তাসবীহ একবারের বেশি যতবার পড়া হোক।
১০। দুই সেজদার মাঝখানে একবারের বেশি যতবার ‘রাব্বিগ ফির লি’ পড়া যায়।
১১। শেষ বৈঠকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর দরুদ পড়া এবং এরপর দোয়া করা।
চার: কর্মকেন্দ্রিক সুন্নতসমূহ
১। তাকবীরে তাহরীমার সময় হাতদ্বয় উত্তোলন করা।
২। রুকুর সময় হাতদ্বয় উত্তোলন করা।
৩। রুকু থেকে উঠার সময় হাতদ্বয় উত্তোলন করা।
৪। হাত উঠিয়ে সাথে সাথে নামিয়ে ফেলা।
৫। বাম হাতের ওপর ডান হাত রাখা।
৬। সেজদার স্থানের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা।
৭। দাঁড়ানো অবস্থায় দুই পায়ের মাঝখানে খালি রাখা।
৮। রুকু অবস্থায় হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁকা রেখে দুই হাত দিয়ে হাঁটু আঁকড়ে ধরা, পিঠ প্রসারিত রাখা এবং পিঠ ও মাথা এক বরাবরে রাখা।
৯। সেজদা অবস্থায় হাঁটুদ্বয় ছাড়া সেজদার অন্য অঙ্গগুলোকে ভূমির সাথে সেঁটে রাখা।
১০। দুই পার্শ্ব থেকে হাতের বাহুদ্বয়, দুই উরু থেকে পেট, দুই উরু থেকে পায়ের গোছা ফাঁকা করে রাখা। দুই হাঁটুর একটি অপরটি থেকে দূরে রাখা। দুই পা খাড়া করে রাখা। পায়ের আঙ্গুলগুলো ফাঁকা করে ভূমির ওপর রাখা। দুই হাত কাঁধ বরাবর রেখে আঙ্গুলগুলো একটি অপরটির সাথে মিলিয়ে জমিনের ওপর বিছিয়ে রাখা।
১১। দুই সেজদার মাঝখানে ও প্রথম বৈঠকের সময় পায়ের পাতার ওপর বসা। আর দ্বিতীয় বৈঠকের সময় পাছার ওপর বসা।
১২। দুই সেজদার মাঝখানে বসার সময় উরুর ওপর হাতের তালু বিছিয়ে রাখা, হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে রাখা। তাশাহুদের বৈঠকের সময়েও একই পদ্ধতিতে রাখা। তবে, তাশাহুদের সময় কনিষ্ঠা ও অনামিকা আঙ্গুল গুটিয়ে রাখা, মধ্যমা ও বৃদ্ধা অঙ্গুলি দিয়ে বৃত্তাকার আকৃতি তৈরী করা এবং তর্জনী অঙ্গুলি দিয়ে ‘আল্লাহকে স্মরণ’ করার সময় ইশারা করা।
১৩। সালাম দেয়ার সময় ডান দিকে ও বাম দিকে ফিরে তাকানো।
উল্লেখিত এ সুন্নতগুলোর কোন কোনটির ব্যাপারে ফিকাহবিদগণের মতানৈক্য রয়েছে। উল্লেখিত কোন কোন ওয়াজিব কোন কোন ফিকাহবিদের কাছে সুন্নত। ফিকাহ’র গ্রন্থগুলোতে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।