মঙ্গলবার 9 রমজান 1445 - 19 মার্চ 2024
বাংলা

যিনি পরদিন সফর করবেন বিধায় রোযা না-রাখার নিয়ত করেছেন; কিন্তু পরে সফরে যাওয়া হয়নি

প্রশ্ন

প্রশ্ন :
এক ব্যক্তি সফরে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প করে রোযা না-রাখার নিয়ত করেছেন। ফজর হওয়ার পর তিনি তার সফর বাতিল করেছেন; কিন্তু রোযা ভঙ্গকারী কোন বিষয়ে লিপ্ত হননি। এক্ষেত্রে তার হুকুম কি?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

ক্বুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা এর দলীল দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, একজন মুসাফির রমজানে রোযা ভঙ্গ করতে পারে। তবে তাকে সম সংখ্যক রোযার কাযা করতে হবে।আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

( وَمَنْ كَانَ مَرِيضاً أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ) [2 البقرة : 185]

“আর কেউ অসুস্থ থাকলেকিংবা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করবে।”[সূরা বাক্বারা, ২ : ১৮৫]

যে ব্যক্তি তার নিজ শহরে অবস্থান করছেন এবং সফর করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প করেছেন তিনি নিজ শহরের বাড়িঘরের সীমানা অতিক্রম করার আগ পর্যন্ত ‘মুসাফির’ হিসেবে গণ্য হবেন না। তাই শুধু সফরের নিয়্যত করলেই মুসাফিরের অবকাশসমূহ (রোখসত) যেমন- রোযা ভঙ্গ করা,সালাত সংক্ষিপ্ত করা ইত্যাদি গ্রহণ করা হালাল নয়। কারণ আল্লাহ তা‘আলা মুসাফিরের জন্য রোযা ভঙ্গ করা বৈধ করেছেন। নিজ শহর অতিক্রম না করা পর্যন্ত কেউ ‘মুসাফির’ বলে গণ্য হবে না।

ইবনে ক্বুদামাহ‘আল-মুগনী’ (৪/৩৪৭) গ্রন্থে ‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায় সফর করেন তিনি রোযা ভঙ্গ করতে পারবেন’ উল্লেখ করার পর বলেছেন: “যখন এটি সাব্যস্ত হল তখন তার জন্য রোযা ভঙ্গ করা ততক্ষণ পর্যন্ত জায়েয হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি তার শহরের ঘরবাড়ি পিছনে ফেলে আসেন। অর্থাৎ আবাসিক এলাকা অতিক্রম করে এর ভবনসমূহ থেকে দূরে চলে আসেন।” তবে হাসান (রহঃ) বলেছেন: “যেদিন তিনি সফর করতে চান সেদিন তিনি চাইলে তার নিজ বাড়িতেই রোযা ভঙ্গ করতে পারেন।”একই রকম অভিমত আত্বা (রহঃ) হতেও বর্ণিত আছে। এ ব্যাপারে ইবনে ইবনে আব্দুল বার্‌র (রহঃ)বলেছেন: হাসান (রহঃ) এর বক্তব্যটি বিরল। নিজ শহরে থাকা অবস্থায় রোযা ভঙ্গ করা কারো জন্য জায়েয নয়। কিয়াস দ্বারা অথবা কুরআন-হাদিসের দলীল দ্বারা এটাকে জায়েয করা যায় না। হাসান (রহঃ) হতে বিপরীতধর্মী বক্তব্যও বর্ণিত আছে।”

এরপর ইবনে ক্বুদামা বলেন:“আল্লাহ তা’আলা বলেছেন :

( فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ )[2 البقرة : 185]

“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এই মাসে উপস্থিত আছে, সে যেন এতে রোযা পালন করে।”[সূরা বাক্বারা, ২:১৮৫] অর্থাৎ যে ব্যক্তি شَاهِد।এখানেشَاهِد মানে- (حاضر لم يسافر) যিনি উপস্থিত আছেন, সফর করেননি। নিজ শহর থেকে বের না-হওয়া পর্যন্ত তিনি মুসাফির হিসেবে গণ্য হবেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি নিজ শহরে অবস্থান করছেন ততক্ষণ পর্যন্ত মুকিমের(স্বগৃহেঅবস্থানকারীর)হুকুমসমূহ তার উপর বর্তাবে। তাই তিনি সালাত সংক্ষিপ্ত করবেন না”। সমাপ্ত

শাইখ ইবনে ‘উছাইমীনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল:

এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে, যিনি সফরের নিয়্যত করেছেন এবং অজ্ঞতাবশতঃ নিজ গৃহে থাকতেই তিনি রোযা ভেঙ্গে ফেলেছেন, তারপর সফরে বের হয়েছেন - তার উপর কাফফারা দেয়া কি ওয়াজিব?

তিনি উত্তরে বলেন : “তার জন্য নিজ বাড়িতে রোযা ভঙ্গ করা হারাম। কিন্তু তিনি যদি সফরে বের হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে রোযা ভেঙ্গে থাকেন তাহলে তাকে শুধু রোযা কাযা করতে হবে।”সমাপ্ত [ফাতাওয়াআস-সিয়াম (পৃঃ১৩৩)]

আশ-শারহুল-মুমত্বি (৬/২১৮) গ্রন্থে তিনি বলেছেন :

“রাসূলের সুন্নাহ ও সাহাবীগণ হতে বর্ণিত বাণীসমূহে রয়েছে যে,কেউ দিনের বেলা সফর করলে রোযা ভঙ্গ করতে পারে। এক্ষেত্রে তার নিজ গ্রাম ছেড়ে যাওয়া শর্ত কিনা? নাকিসফরের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে বের হলেই রোযা ভঙ্গ করতে পারবে?

উত্তর: সলফে সালেহীন (সাহাবী, তাবি‘ঈ ও তাবে-তাবি‘ঈ) হতে এ ব্যাপারে দুইটি মত বর্ণিত হয়েছে।আলেমগণের মধ্যে অনেকে এ মত পোষণ করেন যে, কেউ যদি সফরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয় শুধু বাহনে আরোহণ করা বাকি থাকে, তাহলে তার জন্য রোযা ভঙ্গ করা জায়েয। এ ব্যাপারে তাঁরা আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে উল্লেখ করেন যে, তিনি এমনটি করতেন।আপনি যদি আয়াতে কারীমাটি পর্যালোচনা করেন তাহলে দেখবেন যে, এ মতটি শুদ্ধ নয়। কারণ সে ব্যক্তি এখন পর্যন্ত মুসাফির হয়নি, তিনি এখন পর্যন্ত মুক্বীম (স্বদেশে অবস্থানকারী ব্যক্তি) রয়েছেন। এর উপর ভিত্তি করে বলা যায়, তার জন্য নিজ গ্রামের বাড়িঘর অতিক্রম না করা পর্যন্ত রোযা ভঙ্গ করা জায়েয নয়।

অতএব সঠিক মত হল, সে নিজ এলাকা ত্যাগ না করা পর্যন্ত রোযা ভঙ্গ করবে না। এ কারণে নিজ শহর থেকে বের না হওয়া পর্যন্তসালাত সংক্ষিপ্ত করা বৈধ নয়। একই ভাবে নিজ এলাকা থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত রোযা ভঙ্গ করা জায়েয নয়।”সমাপ্ত[সংক্ষিপ্ত ও কিছুটা পরিমার্জিত]

এর উপর ভিত্তি করে বলা যায়, যে ব্যক্তি রাত থাকতেই সফর করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প করেছেন তার জন্য রোযা ভঙ্গকারী হিসেবে দিন শুরু করা জায়েয নয়। বরং তাকে রোযার নিয়্যত করতে হবে। এরপর দিন শুরু হলে তিনি যদি সফর করেন এবং তার নিজ গ্রামের বাড়িঘর অতিক্রম করেন তখন রোযা ভঙ্গ করা তার জন্য জায়েয হবে।

মোদ্দা কথা,যে ব্যক্তি পরদিন সফর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিধায় রাতে রোযার নিয়ত করেননি তিনি ভুল করেছেন। এক্ষেত্রে তাকে সেই দিনের পরিবর্তে কাযা রোযা আদায় করতে হবে। যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, পরদিন তিনি সফর করেনি। কারণ তিনি রাত থাকতে রোযার নিয়ত করেননি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

( مَنْ لَمْ يُجْمِعْ الصِّيَامَ قَبْلَ الْفَجْرِ فَلَا صِيَامَ لَهُ ) رواه أبو داود (2454) والترمذي (730) وصححه الألباني في صحيح أبي داود

“যে ব্যক্তি ফজর হওয়ার পূর্বে রোযার নিয়্যত করেনি তার রোযা হবে না।”[হাদিসটি আবু দাউদ (২৪৫৪) ও তিরমিযী (৭৩০) বর্ণনা করেছেন এবং আলবানীসহীহ আবু দাউদ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহীহ বলে চিহ্নিত করেছেন।]এই ব্যক্তিযদি সফর করতে না পারেন তারউচিত হবে এই মাসের সম্মানার্থে দিনের অবশিষ্টাংশ রোযা ভঙ্গকারী সকল বিষয় (মুফাত্তিরাত) থেকে বিরত থাকা। কারণ তিনি শরিয়ত অনুমোদিত ওজর (অজুহাত) ছাড়াই রোযা ভঙ্গ করেছেন।[আশ্‌-শারহ আল-মুমত্বি(৬/২০৯)]

তাই প্রশ্নকারীর উচিত আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে মাফ চাওয়া এবং তিনি যা করেছেন তা থেকে তওবা করা এবং সেই দিনের রোযা কাযা করা।

আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব