বৃহস্পতিবার 25 জুমাদাল ছানী 1446 - 26 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

শূকরের গোশতের মানোন্নয়ন প্রকল্পে চাকুরী করার আকর্ষণীয় প্রস্তাব

7489

প্রকাশকাল : 22-06-2020

পঠিত : 3833

প্রশ্ন

প্রশ্ন: আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধাসহ আমি এক কোম্পানির পক্ষ থেকে চাকুরীর প্রস্তাব পেয়েছি। আমার কাজের ধরনটা হবে কোম্পানির গবেষণাগারে শূকরের জিন নিয়ে গবেষণা করা। এ গবেষণার চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে- শূকরের উৎপাদন ও জেনিটিক মানোন্নয়ন করা। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে গোশতের মান উন্নত রেখে শূকরের প্রজনন বাড়ানো এবং গ্রাহকের ভোগের জন্য তা বাজারজাত করা। অর্থাৎ ইসলামে নিষিদ্ধ শূকরের গোশত গ্রাহক কর্তৃক ক্রয় ও ভোগ করার উৎস থেকে আমার বেতনটা আসবে। প্রশ্ন হল- এ ধরনের উৎস থেকে অর্জিত সম্পদ কি বৈধ হবে? আমি কি এ চাকরিতে যোগদান করব? নাকি প্রত্যাখ্যান করব? দ্রুত উত্তর দিলে কৃতজ্ঞ থাকব; যাতে আমি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পরি। আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

আলহামদুলিল্লাহ।

মুসলমানের জন্য শূকরের গোশত খাওয়া হারাম। দলিল হচ্ছে- আল্লাহ তাআলার বাণী (ভাবানুবাদ):“বলুন, যা কিছু আমার কাছে ওহী করা হয়েছে, তাতে আহারকারীর আহার হিসেবে কোন কিছুই নিষিদ্ধ পাই না — মরা প্রাণী, প্রবহমান রক্ত ও শূকরের গোশত ছাড়া; কারণ তা (শূকরের গোশত) অপবিত্র এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পাপের জবাই ছাড়া। তবে যে ব্যক্তি অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী হয়ে নয়; নিরুপায় হয়ে এগুলো গ্রহণ করে, নিশ্চয় আপনার রব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[সূরা আল আনআম:১৪৫]

অনুরূপভাবে শূকরের গোশত ক্রয়বিক্রয় করাও হারাম। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মক্কা বিজয়ের বছর বলতে শুনেছেন-তখন তিনি মক্কায় ছিলেন-“নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মদ, মরা প্রাণী, শূকর ও মূর্তি বিক্রয় হারাম করেছেন। জিজ্ঞেস করা হল- ইয়া রাসূলাল্লাহ!মরা প্রাণীর চর্বির ব্যাপারে আপনার কি অভিমত? তা দিয়ে তো জাহাজে প্রলেপ দেয়া হয়, চর্ম তৈল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, বাতি জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। উত্তরে তিনি বললেন:না; ওটা হারাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আল্লাহ ইহুদিদেরকে নিপাত করুন। আল্লাহ যখন মরা প্রাণীর চর্বি হারাম করলেন তখন তারা চর্বি গলিয়ে বিক্রয় করল এবং এর মূল্য ভক্ষণ করল।” [সহিহ বুখারী (১২১২), সহিহ মুসলিম (১৫৮১)]

অতএব, আল্লাহ যখন কোনো জিনিসকে হারাম করেন তখন তিনি এর মূল্যকেও হারাম করেন। অনুরূপভাবে হারাম কিছু বাস্তবায়নের মাধ্যমও হারাম। মূল কাজের যে হুকুম মাধ্যমেরও সেই হুকুম। হুকুমের দিক থেকে এতদুভয়ের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। উপরন্তু মুসলমানের জন্য ফাসেক বা পাপাচারী গোষ্ঠীকে শরিয়তবিরোধী কাজকর্মে সহায়তা করা জায়েয নয়। মুসলমানের বরং উচিত হল- যতদূর সম্ভব তাদের শরিয়তবিরোধী কাজকর্মে বাধা হয়ে দাঁড়ানো। তাদেরকে এসব কর্ম থেকে বারণ করা। তাদের জন্য হারাম বস্তুর উন্নয়নে কাজ করে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। আপনি কি পছন্দ করবেন- আপনি হারাম বস্তুর উন্নয়ন, সৌন্দর্য বর্ধন ও উৎসাহ প্রদানের মাধ্যম হবেন এবং এসব হারাম প্রচার, প্রসার ও ব্যবহারে সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন?

আমার তো মনে হয় আপনি বলবেন: ‘নাউযুবিল্লাহ’ (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই),আমি নিজের জন্য এমন জিনিস কখনো পছন্দ করব না; যা আমার সৃষ্টিকর্তা পছন্দ করেন না। যত বেশি বেতনই দেওয়া হোক না কেন আমি এ হারাম কাজ কখনো করব না। রিযিকের মালিক আল্লাহ।আপনি অন্য কোনো হালাল রুজির তালাশ করুন।

আমরা আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করছি তিনি যেন, হালাল রুজি দিয়ে আমাদেরকে হারাম থেকে বাঁচিয়ে রাখেন এবং তাঁর নিজ অনুগ্রহে অন্যের মুখাপেক্ষিতা থেকে আমাদেরকে দূরে রাখেন।

সূত্র: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ