মঙ্গলবার 22 যুলক্বদ 1446 - 20 মে 2025
বাংলা

যে পোশাকগুলো হালালভাবে ব্যবহৃত হবে; নাকি হারামভাবে সেটা জানা যায় না সেগুলো বিক্রি করার হুকুম

প্রশ্ন

আমার বেশ কয়েকটা শপিং সেন্টারে নারী-পুরুষের জামা-কাপড় বিক্রির কিছু দোকান আছে। যে অবস্থাগুলোতে নারীদের পোশাক বিক্রি করা হালাল সেগুলো আমি পড়েছি। নারীদের কাপড় বিক্রি করা জায়েয হবে না যদি ব্যবসায়ী জানতে পারে যে ক্রেতা আল্লাহর হারামকৃত ক্ষেত্রে এগুলোকে ব্যবহার করবে। কিন্তু ব্যবসায়ী অথবা কর্মচারী কীভাবে জানবে যে এটি আল্লাহর হারাম করা ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হবে? কেননা বিক্রেতা এমন অবস্থায় থাকে যে তার জন্য জানা সম্ভব নয় এই কাপড় কী কাজে ব্যবহৃত হবে।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

ব্যবসায়ীরা মহিলাদের যে সমস্ত জামা-কাপড় বিক্রি করে, সেগুলোর তিন অবস্থা:

এক:

বিক্রেতা জানে কিংবা তার প্রবল ধারণা থাকে যে এই জামা-কাপড় বৈধভাবে ব্যবহৃত হবে; হারামভাবে ব্যবহৃত হবে না। এমন পোশাক বিক্রিতে কোনো সমস্যা নেই।

দুই:

বিক্রেতা জানে অথবা তার প্রবল ধারণা থাকে যে এই জামা-কাপড় হারামভাবে ব্যবহৃত হবে। অর্থাৎ নারী এটি পরে বেগানা পুরুষের সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ করবে। এমন পোশাক বিক্রি করা হারাম। কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: “তোমরা পাপকাজ ও সীমালঙ্ঘনে একে অপরকে সহযোগিতা করো না।”[সূরা মায়েদা: ২]

পোশাকের ধরন ও ক্রেতা নারীর অবস্থা থেকে বিক্রেতার জন্য এটি বোঝা সম্ভব।

কিছু পোশাক আছে যেগুলোর ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায় যে এগুলো একজন মহিলা যতই বেপর্দা হোক না কেন সে এটা কেবল তার স্বামীর জন্যই পরবে। এই জামা পরে সে কখনো বেগানা পুরুষের সামনে বের হবে না। আর কিছু জামা-কাপড় আছে যেগুলোর ব্যাপারে প্রবল ধারণা হয় কখনও নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এটির ক্রেতা এটাকে হারাম কাজে ব্যবহার করবে।

সুতরাং বিক্রেতার জন্য আবশ্যক হলো ক্রেতার অবস্থা সম্পর্কে সে যা জানে বা যা তার প্রবল ধারণা হয় সে অনুযায়ী কাজ করা।

আবার কিছু জামা-কাপড় বৈধ ও হারাম উভয়ভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। কিন্তু সকল নারী যদি হিজাব পরে চলে অথবা রাষ্ট্র যদি তাদের জন্য হিজাব আবশ্যক করে দেয়, তাহলে তারা আর হারামভাবে এটি ব্যবহার করতে পারে না। তখন এগুলো বিক্রিতে কোনো বাধা থাকে না।

তিন:

বিক্রেতা সংশয়ে থাকে যে এই জামা-কাপড় কি বৈধভাবে ব্যবহৃত হবে; নাকি হারামভাবে। কারণ এই জামা দুইভাবেই ব্যবহৃত হতে পারে। আর কোনো একটি সম্ভাবনাকে শক্তিশালী করে এমন কোনো আলামত নেই। এমন জামা-কাপড় বিক্রিতে কোনো নিষেধ নেই। কারণ মৌলিকভাবে বিক্রি বৈধ; হারাম নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ

“আর আল্লাহ বিক্রয়কে হালাল করেছেন।”[সূরা বাকারা: ২৭৫]

যিনি এই জামা ক্রয় করবেন তার জন্য আবশ্যক হলো আল্লাহ যা হালাল করেছেন সেক্ষেত্রে এই জামা ব্যবহার করা। আল্লাহ যা হারাম করেছেন তাতে ব্যবহার করা জায়েয নয়।

 উপর্যুক্ত বক্তব্যের সমর্থনে কিছু আলেমের ফতোয়া নিম্নরূপ:

ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:

নারীদের সাজগোজের সামগ্রী দিয়ে ব্যবসা করার হুকুম কী? এগুলো এমন কারো কাছে বিক্রির বিধান কী যাদের ব্যাপারে বিক্রেতা জানে যে তারা এগুলো পরে বেপর্দা হয়ে রাস্তাঘাটে বেগানা পুরুষদের সামনে নিজেকে প্রদর্শন করবে; যেমনটা তাকে সামনে থেকে দেখা ব্যক্তি বুঝতে পারে, আর যেমনটা বহু শহরে আমভাবে বিদ্যমান?

তারা উত্তর দেয়:

‘যদি ব্যবসায়ী বুঝতে পারে যে, এটি যে কিনবে সে আল্লাহর হারামকৃত কাজে ব্যবহার করবে তাহলে এটি বিক্রি করা জায়েয নেই। কেননা এটি পাপ ও সীমালঙ্ঘনে পারস্পরিক সহযোগিতার অন্তর্ভুক্ত। আর যদি ব্যবসায়ী জানতে পারে যে, এটি দিয়ে সে স্বামীর সামনে সাজসজ্জা করবে অথবা কিছু না জানে তাহলে এটির ব্যবসা করা তার জন্য জায়েয হবে।’[সমাপ্ত][ফাতাওয়াল-লাজনাহ আদ-দাইমাহ লিল-বুহূসিল ইলমিয়্যা ওয়াল-ইফতা (১৩/৬৭)]

ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে আরো জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:

মহিলাদের রূপ চর্চার উপকরণ বিক্রি করার হুকুম কী? উল্লেখ্য, অধিকাংশ যারা এগুলোর ব্যবহার করে তারা হলো বেপর্দা, পাপী এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্য নারীরা। তারা এই সামগ্রীগুলো ব্যবহার করে স্বামী ছাড়া অন্যকে সৌন্দর্য প্রদর্শন করার ক্ষেত্রে। আল্লাহর কাছে পানাহ নাই।

তারা উত্তর দেয়:

আপনি যেমনটি উল্লেখ করেছেন যদি তেমনই হয়ে থাকে, তাহলে তাদের কাছে বিক্রি করা জায়েয নেই; যদি তাদের অবস্থা জানা থাকে। কারণ এটি পাপ ও সীমালঙ্ঘনে সাহায্য করার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তায়ালা এটি নিষেধ করে বলেন: “তোমরা পাপ ও সীমালঙ্ঘনে একে অপরকে সহযোগিতা করো না।”[সূরা মায়েদা: ২][সমাপ্ত][ফাতাওয়াল-লাজনাহ আদ-দাইমাহ লিল-বুহূসিল ইলমিয়্যা ওয়াল-ইফতা (১৩/১০৫)]

তাদেরকে আরো জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:

মেয়েদের নানারকম টাইট প্যান্ট বিক্রি করার হুকুম কী? যেগুলোকে বলা হয়: জিন্সের প্যান্ট, স্ট্রেচ ফেব্রিকের প্যান্ট? এছাড়াও এমন সুট যেটা প্যান্ট ও ব্লাউজের সমন্বয়ে তৈরি? এছাড়া নারীদের হাই হিলের জুতা বিক্রি? তাছাড়া নানা রঙ ও প্রকারের চুলের কালার বিক্রি? বিশেষ করে নারীদের চুলের কালার? অনুরূপভাবে নারীদের স্বচ্ছ পোশাক (যেটাকে জর্জেট বলা হয়) বিক্রির বিধান কী? এছাড়া নারীদের হাফ-হাতা জামা অথবা ছোট জামা বিক্রি? অনুরূপভাবে নারীদের শর্ট স্কার্ট বিক্রির বিধান কী?

তারা উত্তর দেয়:

‘যা কিছু হারামভাবে ব্যবহৃত হয় কিংবা প্রবল ধারণা রয়েছে যে, এগুলো হারামভাবে ব্যবহৃত হবে, সেগুলো তৈরি করা, আমদানি করা, বিক্রি করা ও বিপণন করা হারাম। তন্মধ্যে রয়েছে বর্তমানে বহু নারী যে স্বচ্ছ, টাইট ও শর্ট পোশাক পরে (আল্লাহ তাদেরকে সঠিক পথ দেখান)। এগুলো নারীর আকর্ষণীয় অঙ্গ, সাজগোজ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আকৃতি বেগানা পুরুষের সামনে ফুটিয়ে তোলে। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা বলেন: ‘যে জামা পরার মাধ্যমে ব্যক্তি পাপ কাজে লিপ্ত হবে এমন প্রবল ধারণা পাওয়া যায়, সেটি এমন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা ও সেলাই করা জায়েয হবে না যে এর সাহায্যে পাপ ও যুলুমে লিপ্ত হবে। সে কারণে এমন ব্যক্তির কাছে রুটি ও গোশত বিক্রি করা মাকরূহ যে এটি মদ খাওয়ায় ব্যবহার করবে বলে জানা যায়। এমন ব্যক্তির কাছে সুগন্ধি বিক্রি করা মাকরূহ যে এর সাহায্যে মদ খাবে এবং কুকর্মে জড়াবে। অনুরূপভাবে মৌলিকভাবে বৈধ প্রত্যেক যে জিনিসের মাধ্যমে ব্যক্তি পাপ কাজে জড়াবে বলে জানা যায় সেগুলোরও একই বিধান।’

সুতরাং প্রত্যেক মুসলিম ব্যবসায়ীর উচিত আল্লাহকে ভয় করা এবং মুসলিম ভাইদের জন্য কল্যাণ কামনা করা। সে কেবল এমন কিছু তৈরি এবং বিক্রি করবে যাতে তাদের কল্যাণ ও উপকার রয়েছে। যে সমস্ত বস্তু বিক্রি করলে অনিষ্ট ও ক্ষতি রয়েছে সেগুলো করবে না। হালালই যথেষ্ট, হারামে ধাবিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য (সংকট থেকে) বের হওয়ার পথ করে দিবেন এবং তাকে এমন জায়গা থেকে রিযিকের ব্যবস্থা করবেন যা সে ধারণাও করে না।”[সূরা ত্বালাক: ২, ৩] এই কল্যাণকামিতাই ঈমানের দাবি। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “ঈমানদার পুরুষ-নারীরা একে অন্যের মিত্র। তারা সৎকাজের আদেশ দেয় এবং মন্দকাজ থেকে বারণ করে।”[সূরা তাওবা: ৭১] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: দ্বীন হচ্ছে কল্যাণকামিতা। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো: হে আল্লাহর রাসূল! কার জন্য? তিনি বললেন: “আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূলের জন্য, মুসলিম নেতৃবর্গের জন্য এবং সাধারণ মুসলিমদের জন্য।”[হাদীসটি মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন] জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ আল-বাজালী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে নামায কায়েম করা, যাকাত প্রদান ও প্রত্যেক মুসলিমের জন্য কল্যাণকামিতার মর্মে বাইয়াত গ্রহণ করেছি।[হাদীসটির বিশুদ্ধতার ব্যাপারে সবাই একমত] শাই্খুল ইসলাম রাহিমাহুল্লাহর যে বক্তব্য ইতঃপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে ‘এমন ব্যক্তির কাছে রুটি ও গোশত বিক্রি করা মাকরূহ যে এটি মদ খাওয়ায় ব্যবহার করবে বলে জানা যায়’ সেটি দ্বারা উদ্দেশ্য মাকরূহে তাহরীমী যেমনটি অন্যান্য স্থানে তার ফতোয়া থেকে জানা যায়।[সমাপ্ত][ফাতাওয়াল-লাজনাহ আদ-দাইমাহ লিল-বুহূসিল ইলমিয়্যা ওয়াল-ইফতা (১৩/১০৯)]

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব