বৃহস্পতিবার 20 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 21 নভেম্বর 2024
বাংলা

আযাবের আয়াত পাঠকালে আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় চাওয়া শরিয়তসিদ্ধ

প্রশ্ন

যে ব্যক্তি নামাযে কুরআন তেলাওয়াতকালে আযাবের আয়াতগুলোতে থামেন তার হুকুম কি?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

জমহুর আলেম (অধিকাংশ আলেম) এর মতে, নামাযীর জন্য আযাবের আয়াত অতিক্রমকালে আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় চাওয়া এবং রহমতের আয়াত অতিক্রমকালে রহমত প্রার্থনা করা সুন্নত। যেহেতু সহিহ মুসলিমে (৭৭২) হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে এক রাতে নামায আদায় করেছি। তিনি সূরা বাক্বারা শুরু করলেন। আমি ভাবলাম: তিনি একশ আয়াত পড়ে রুকু করবেন। কিন্তু তিনি পড়তে থাকলেন। আমি ভাবলাম তিনি পূর্ণ সূরা দিয়ে এক রাকাত পড়বেন। কিন্তু তিনি পড়তে থাকলেন। আমি ভাবলাম তিনি এই সূরা পড়ে রুকুতে যাবেন। কিন্তু তিনি বাক্বারার পর নিসা পড়া শুরু করলেন। নিসা পড়া শেষ করে আলে ইমরান শুরু করলেন এবং আলে ইমরান শেষ করলেন। তিনি ধীরস্থিরভাবে পাঠ করে যাচ্ছিলেন। যখন কোন আয়াত অতিক্রম করতেন যাতে তাসবীহ এর কথা আছে তিনি তাসবীহ পাঠ করতেন। যখন কোন প্রার্থনার আয়াত অতিক্রম করতেন তখন প্রার্থনা করতেন। যখন কোন আশ্রয় চাওয়ার আয়াত অতিক্রম করতেন তখন আশ্রয় চাইতেন।

তিরমিযি ও নাসাঈ-র ভাষ্যে এসেছে: যখন কোন আযাবের আয়াত অতিক্রম করতেন তখন থামতেন এবং আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।

আবু দাউদ (৮৭৩) ও নাসাঈ () আওফ বিন মালিক আল-আশজাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে নামাযে দাড়াই। তিনি সূরা বাক্বারা পাঠ করেন। যখন রহমতের আয়াত অতিক্রম করতেন তখন তিনি থামতেন এবং রহমত কামনা করতেন। যখন কোন আযাবের আয়াত অতিক্রম করতেন তখন তিনি থামতেন এবং আযাব হতে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। এরপর তিনি কিয়ামের সমপরিমাণ সময় রুকুতে অতিবাহিত করেন। রুকুতে তিনি: سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرُوتِ وَالْمَلَكُوتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ  পাঠ করেন। অতঃপর তিনি কিয়ামের সমপরিমাণ সময় সিজদায় অতিবাহিত করেন। সিজদাতেও উপরোক্ত দোয়া পাঠ করেন। এরপর দাঁড়ান এবং সূরা আলে ইমরান পাঠ করেন। এরপর এক একটি সূরা পাঠ করেন।

এই হাদিস প্রমাণ করে যে, প্রত্যেক আযাবের আয়াত ও আশ্রয় প্রার্থনার আয়াতে থামা শরিয়তসিদ্ধ।

নববী (রহঃ) ‘আল-মাজুম’ গ্রন্থে (৩/৫৬২) বলেন: ইমাম শাফেয়ি ও আমাদের মাযহাবের আলেমগণ বলেন: নামাযে কিংবা নামাযের বাইরে তেলাওয়াতকারীর জন্য প্রত্যেক রহমতের আয়াত পাঠকালে আল্লাহ্‌র কাছে রহমত প্রার্থনা করা, আযাবের আয়াত পাঠকালে আল্লাহ্‌র কাছে আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা, তাসবীহের আয়াত পাঠকালে তাসবীহ পাঠ করা কিংবা উপমার আয়াত পাঠকালে অনুধাবন করা সুন্নত। আমাদের মাযহাবের আলেমগণ বলেন: এটি ইমাম, মুক্তাদি ও একাকী নামায আদায়কারী সকলের জন্য মুস্তাহাব। নামাযের মধ্যে কিংবা নামাযের বাইরে প্রত্যেক তেলাওয়াতকারীর জন্য মুস্তাহাব; ফরয নামায হোক কিংবা নফল নামায হোক। আমীন বলার ন্যায় এ ক্ষেত্রে ইমাম, মুক্তাদি ও একাকী নামায আদায়কারী সবাই সমান। এই মাসয়ালার পক্ষে দলিল হচ্ছে হুযাইফা (রাঃ) এর হাদিস...। এটি আমাদের মাযহাবের বিস্তারিত অভিমত। ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বলেন: নামাযের মধ্যে রহমতের আয়াত পাঠকালে রহমত প্রার্থনা করা কিংবা আশ্রয় প্রার্থনা করা মাকরূহ। আমাদের মাযহাবের অনুরূপ অভিমত ব্যক্ত করেছেন সলফে সালেহীন অধিকাংশ আলেম এবং তাদের পরবর্তী আলেমগণ।[সমাপ্ত]

কাশ্‌শাফুল ক্বিনা গ্রন্থে (১/৩৮৪) বলেছেন: “ফরয নামায ও নফল নামাযে রহমতের আয়াত কিংবা আযাবের আয়াত পাঠকালে তিনি দোয়া করতে পারেন ও আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারেন।”[সমাপ্ত]

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: জাহেরী নামাযে ইমাম তেলাওয়াতকালে মুক্তাদি যখন এমন কোন আয়াত শুনেন যে আয়াত আশ্রয় প্রার্থনাকে আবশ্যক করে কিংবা তাসবীহ পাঠকে আবশ্যক করে কিংবা আমীন বলাকে আবশ্যক করে তখন যে ব্যক্তি আমীন বলে, কিংবা জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চায় কিংবা সুবহানাল্লাহ্‌ বলে তার হুকুম কি?

জবাবে তিনি বলেন: যে আয়াতগুলো তাসবীহ পাঠকে আবশ্যক করে, কিংবা আশ্রয় প্রার্থনাকে আবশ্যক করে, কিংবা দোয়া করাকে আবশ্যক করে তেলাওয়াতকারী যদি কিয়ামুল লাইল (রাতের নফল নামায)-এ এমন আয়াতগুলো অতিক্রম করেন তখন তার জন্য আয়াতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আমলটি করা সুন্নত। যদি কোন শাস্তির আয়াত অতিক্রম করে তখন আশ্রয় চাইবে। যদি কোন রহমতের আয়াত অতিক্রম করে তখন রহমত চেয়ে দোয়া করবে। আর যদি ইমামের তেলাওয়াত শুনে তাহলে চুপ থাকা ও তেলাওয়াত শুনা ব্যতীত অন্য কিছুতে ব্যস্ত না হওয়াই উত্তম। হ্যাঁ; যদি ধরে নেয়া হয় যে, ইমাম আয়াতের শেষে থামবেন এবং সেটি যদি রহমতের আয়াত হয় আর মুক্তাদি দোয়া করেন কিংবা যদি শাস্তির আয়াত হয় আর মুক্তাদি আশ্রয় প্রার্থনা করেন কিংবা যদি আল্লাহ্‌র মর্যাদাজ্ঞাপক আয়াত হয় আর মুক্তাদি তাসবীহ পড়েন এতে কোন অসুবিধা নেই। পক্ষান্তরে ইমাম যদি তার পড়া অব্যাহত রাখেন আর মুক্তাদি এ আমলগুলো করেন তাহলে আমার আশংকা হয় যে, এটি মুক্তাদিকে ইমামের তেলাওয়াত শুনা থেকে বিরত রাখবে। অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাঁর সাহাবীদেরকে জাহেরী নামাযে তাঁর পেছনে পড়তে শুনেছেন তখন তিনি বলেছেন: “তোমরা উম্মুল কুরআন (সূরা ফাতিহা) ছাড়া অন্য কিছুর ক্ষেত্রে এটি করবে না। কারণ যে ব্যক্তি সেটি পড়বে না তার নামায নেই”।[ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব থেকে সমাপ্ত]

আলেমদের মধ্যে কেউ কেউ এ আমলকে নফল নামাযের সাথে খাস করেছেন। কেননা নফল নামাযে এই আমল করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। তবে কেউ যদি ফরয নামাযে করেন তাহলে সেটি জায়েয হবে; যদিও সুন্নত না হয়।

কেউ কেউ বলেছেন: ফরয নামায ও নফল নামায উভয়টিতে করবে।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব