আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
প্রশ্নকারী যে হাদিসটির দিকে ইঙ্গিত করেছেন সে হাদিসটি ইমাম বায়হাকী (৪/৩১৫) হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণানা করেছেন যে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) কে বলেন: আমি আপনার ঘরে ও আবু মূসার ঘরে (অর্থাৎ মসজিদে) কিছু লোককে ইতিকাফরত পেয়েছি। অথচ আমি জেনেছি রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তিন মসজিদ ছাড়া কোন ইতিকাফ নেই: মসজিদে হারাম”। আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন: সম্ভবত: আপনি ভুলে গেছেন; তাদের মুখস্থ আছে। আপনি ভুল করছেন; তাদেরটা ঠিক।[আলবানী সিলসিলাতুল আহাদিস আস-সহিহা (২৮৭৮) গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]
দুই:
এ মাসয়ালার হুকুম হচ্ছে- জমহুর আলেমের মতে, ইতিকাফ এ তিনটি মসজিদের কোন একটিতে হওয়া শর্ত নয়। এ মতের পক্ষে তারা দলিল দেন এ আয়াতের ভিত্তিতে, “তোমরা মসজিদসমূহে ইতিকাফরত অবস্থায় তাদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করবে না।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭]
আয়াতে কারীমাতে “মসজিদসমূহ” শব্দটি আম বা সাধারণ। তাই এ শব্দটি সকল মসজিদকে অন্তর্ভুক্ত করবে। যদি অন্য কোন দলিল বিশেষ কোন মসজিদ বাদ দেয় সে মসজিদ ছাড়া; যেমন- যে মসজিদে জামাতে নামায আদায় করা হয় না; যদি ইতিকাফকারীর উপর জামাতের সাথে নামায আদায় করা ফরজ হয়। দেখুন 48985 নং প্রশ্নোত্তর।
ইমাম বুখারী আয়াতের এ ব্যাপকতার দলিলের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন:
“শেষ দশদিনে ও সকল মসজিদে ইতিকাফ করা শীর্ষক পরিচ্ছেদ”। দলিল হচ্ছে আল্লাহর বাণী: “তোমরা মসজিদসমূহে ইতিকাফরত অবস্থায় তাদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করবে না। এগুলো হচ্ছে- আল্লাহর সীমারেখা। অতএব, এগুলোর নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবে আল্লাহ মানবজাতির জন্য নিজের আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন; যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারে।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭] সমাপ্ত।
মুসলমানেরা তাদের স্থানীয় মসজিদে ইতিকাফ করে আসছেন যেমনটি উল্লেখ করেছেন ত্বাহাবী তাঁর রচিত ‘মুশকিলুল আসার’ গ্রন্থে (৪/২০৫)।
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) কে মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদে আকসায় ইতিকাফ করার হুকুম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল; আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন।
জবাবে তিনি বলেন:
“মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদে আকসা এ তিন মসজিদ ছাড়া অন্য মসজিদগুলোতে ইতিকাফের সময় ইতিকাফ করা শরিয়তসম্মত। ইতিকাফ শুধুমাত্র এ তিন মসজিদের সাথে খাস নয়; বরং এ তিন মসজিদেও ইতিকাফ করা যায়, অন্য মসজিদেও ইতিকাফ করা যায়। এটি অনুসরণযোগ্য মাযহাবগুলোর আলেমদের অভিমত, যেমন- ইমাম আহমাদ (রহঃ), ইমাম মালেক (রহঃ), ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) ও ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)। দলিল হচ্ছে আল্লাহর বাণী: “তোমরা মসজিদসমূহে ইতিকাফরত অবস্থায় তাদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করবে না। এগুলো হচ্ছে- আল্লাহর সীমারেখা। অতএব, এগুলোর নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবে আল্লাহ মানবজাতির জন্য নিজের আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন; যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারে।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭] এখানে ‘মসজিদসমূহ’ শব্দটি আমভাবে পৃথিবীর সকল মসজিদকে অন্তর্ভুক্ত করে। এ বাক্যটি রোযার বিধান সংক্রান্ত আয়াতের শেষাংশে উল্লেখ করা হয়েছে; আর রোযার বিধান পৃথিবীর সকল প্রান্তের মুসলিম উম্মাহকে শামিলকারী। সুতরাং যাদেরকে রোযার ক্ষেত্রে সম্বোধন করা হয়েছে তাদের সকলকে এ বাক্যের মাধ্যমেও সম্বোধন করা হয়েছে। তাইতো প্রাসঙ্গিকতা ও সম্বোধনের ক্ষেত্রে অভিন্ন বিধানগুলোর আলোচনা শেষ করা হয়েছে এ কথা দিয়ে “এগুলো হচ্ছে- আল্লাহর সীমারেখা। অতএব, এগুলোর নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবে আল্লাহ মানবজাতির জন্য নিজের আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন; যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারে।”। আল্লাহ তাআলা এমন কোন সম্বোধন করা খুবই দূরবর্তী যে সম্বোধনটি উম্মতের একেবারেই অল্প কিছু মানুষ ছাড়া আর কাউকে অন্তর্ভুক্ত করে না।
পক্ষান্তরে, হুযাইফা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত “তিন মসজিদ ছাড়া ইতিকাফ নেই” এ হাদিসটি যদি শুদ্ধতার বিচারে উত্তীর্ণ হয় সেক্ষেত্রে এটি ইতিকাফের পূর্ণতার গুণকে নাকচ করবে। অর্থাৎ পূর্ণতর ইতিকাফ হচ্ছে- এ তিন মসজিদে যে ইতিকাফ করা হয় সে ইতিকাফ। অন্য মসজিদের উপর এ তিন মসজিদের ফজিলত ও মর্যাদার কারণে। এ ধরণের বাক্যব্যঞ্জনা প্রচুর পাওয়া যায়। অর্থাৎ না-বোধক বাক্য দ্বারা পূর্ণতার গুণকে নাকচ করা; মূল বিষয়টি কিংবা বিষয়টির শুদ্ধতাকে নাকচ করা নয়। উদাহরণত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “খাবার হাজির হলে নামায নেই” ও এ ধরণের অন্যান্য হাদিস। তবে নিঃসন্দেহে নেতিবাচক বাক্য দ্বারা সাধারণত শরয়ি হাকীকত কিংবা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হাকীকতকে নাকচ করা হয়। কিন্তু, যদি এমন কোন দলিল পাওয়া যায় যে দলিল শরয়ি হাকীকত কিংবা ইন্দ্রিয়াগ্রাহ্য হাকীকতকে গ্রহণে বাধা দেয় তাহলে পূর্ণতার গুণকে নাকচ করাটা সুনির্দিষ্ট হয়ে যায়; যেমনটি আমরা হুযাইফা (রাঃ) বর্ণিত হাদিসে দেখতে পাই। হাদিসটি শুদ্ধতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ ধরে নিলে এ ব্যাখ্যা। আল্লাহই ভাল জানেন। সমাপ্ত
[ফাতাওয়াস সিয়াম, পৃষ্ঠা-৪৯৩]
বিন বায (রহঃ) কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: “তিন মসজিদ ছাড়া ইতিকাফ নেই” এ হাদিসটি কি সহিহ? যদি সহিহ হয়; তাহলে তিন মসজিদ ছাড়া অন্যান্য মসজিদে কি ইতিকাফ করা যাবে না?
জবাবে তিনি বলেন: তিন মসজিদ ছাড়াও অন্য যে কোন মসজিদে ইতিকাফ করা সহিহ। তবে; শর্ত হচ্ছে- সে মসজিদে জামায়াতের সাথে নামায অনুষ্ঠিত হতে হবে। যদি সে মসজিদে নামাযের জামাত না হয় তাহলে সেখানে ইতিকাফ করা সহিহ হবে না। তবে, কেউ যদি এ তিন মসজিদে ইতিকাফের মানত করে থাকে তাহলে তাকে সে মানত পূর্ণ করতে হবে।[সমাপ্ত]
[মাজমু ফাতাওয়া বিন বায (১৫/৪৪৪)]