সোমবার 24 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 25 নভেম্বর 2024
বাংলা

মুখস্তশক্তি মজবুত করা ও ভুলে যাওয়ার সমস্যা কাটিয়ে উঠার উপায়সমূহ

প্রকাশকাল : 12-11-2015

পঠিত : 20550

প্রশ্ন

প্রশ্ন: আমি আমার প্রাত্যহিক জীবনের অনেক কাজ ও তৎপরতার কথা ভুলে যাই। আপনি কি আমাকে কুরআন-সুন্নাহ থেকে এমন কোন আমলের দিক-নির্দেশনা দিতে পারেন যাতে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠা আমার জন্য সহায়ক হয়।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

ভুলে যাওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। তাই তো কবি বলেন:

ইনসানকে ইনসান (ভুলকারী) নাম দেয়া হয়েছে যেহেতু সে ভুলে যায়।

আর কলব (অন্তর) কে কলব (পরিবর্তনশীল) নাম দেয়া হয়েছে যেহেতু সে পরিবর্তিত হয়।

আগেকার লোকেরা বলত: প্রথম ভুলকারী ব্যক্তি হচ্ছেন- প্রথম মানব। উদ্দেশ্য হচ্ছে- আদম (আঃ)। তবে ভুলে যাওয়ার সমস্যা প্রবৃত্তি অনুযায়ী এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির ক্ষেত্রে তারতম্য হয়ে থাকে। কিছু লোকের মাঝে ভুলে যাওয়ার সমস্যা প্রবল; আর কারো মধ্যে কম। ভুলে যাওয়ার সমস্যাকে মোকাবিলা করার উপায়সমূহ নিম্নরূপ:

এক: গুনাহ থেকে দূরে থাকা। কারণ গুনাহর কারণে মুখস্তশক্তিতে দুর্বলতা আসে; ইলম অর্জনে ঘাটতি আসে। ইলমের আলোর সাথে অজ্ঞতার অন্ধকার একত্রিত হয় না। ইমাম শাফেয়ীর একটি পংক্তি উল্লেখ করা হয়-

আমি ওকীর নিকট অভিযোগ করলাম আমার মুখস্তশক্তির দুর্বলতার

তিনি আমাকে গুনাহ পরিহার করার পরামর্শ দিলেন এবং বললেন:

আল্লাহর ইলম হচ্ছে- নূর; আল্লাহর নূর গুনাহগারকে দেয়া হয় না।

খতীব আল-জামে নামক গ্রন্থে (২/৩৮৭) ইয়াইয়া বিন ইয়াহইয়া থেকে বর্ণনা করেন যে, এক লোক মালেক বিন আনাসকে বললেন: হে আবু আব্দুল্লাহ! মুখস্তশক্তি বাড়ানোর কোন কিছু আছে কি? তিনি বলেন: যদি কোন কিছু থাকে তাহলে সেটা হল: গুনাহ পরিত্যাগ করা। যখন কোন মানুষ গুনাহ করে তখন এ গুনাহটি তাকে ঘিরে রাখে এবং গুনাহর ফলে তাকে দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা পেয়ে বসে। সে গুনাহর কারণে তার চিন্তাধারা মশগুল হয়ে থাকে। এভাবে এ দুশ্চিন্তা তার অনুভূতির উপর আধিপত্য বিস্তার করে থাকে এবং তাকে অনেক কল্যাণকর কাজ থেকে দূরে রাখে। এর মধ্যে মুখস্তশক্তি অন্যতম।

দুই: অধিক হারে আল্লাহর যিকির করা। যেমন- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি পড়া। আল্লাহ তাআলা বলেন: “যখন ভুলে যান তখন আল্লাহর যিকির করুন”[সূরা কাহাফ, আয়াত: ২৪]

তিন: বেশি না খাওয়া। যেহেতু বেশি খাওয়া বেশি ঘুম, নির্বুদ্ধিতা, স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নির্জীবতা ও অলসতার কারণ। এগুলো ছাড়া বেশি খাওয়া অনেক শারীরিক রোগের কারণ। যেমনটি বলা হয়:

অধিকাংশ রোগের কারণ হচ্ছে- পানাহার।

চার: কোন কোন আলেম এমন কিছু খাবারের কথা উল্লেখ করেছেন যেগুলো মুখস্তশক্তি বৃদ্ধি করে। যেমন- মধু ও কিসমিস খাওয়া এবং বিশেষ কিছু সুইংগাম চিবানো।

ইমাম যুহরী বলেন: তুমি মধু খাবে; কারণ এটি স্মৃতিশক্তির জন্য ভাল।

তিনি আরও বলেন: যে হাদিস মুখস্ত করতে চায় সে যেন কিসমিস খায়।[খতীব আল-বাগদাদীর ‘আল-জামে’ (২/৩৯৪)]

ইব্রাহিম বলেন: তোমরা সুইংগাম খাবে। এটি অন্তরকে উদ্বুদ্ধ করে, ভুলে যাওয়াকে বিদূরিত করে।[খতীব এর আল-জামে (২/৩৯৭)]

আলেমগণ আরও বলেন: অম্লজাতীয় খাবার স্মৃতিশক্তির জড়তা ও মুখস্তশক্তির দুর্বলতা বাড়ায়।

পাঁচ: মুখস্তশক্তি বৃদ্ধি ও ভুলে যাওয়ার সমস্যা প্রতিরোধে আরও যে জিনিসটি সাহায্য করে সেটি হচ্ছে- মাথায় শিংগা লাগানো। এটি পরীক্ষিত। (আরও বিস্তারিত জানতে ইবনুল কাইয়্যেম এর ‘আততিব্ব আন-নাবাবি’ পড়ুন।

আল্লাহই ভাল জানেন।

সূত্র: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ